খবর৭১:কলাম্বিয়ার বন্দরনগরী তমাকো খুব ব্যস্ত একটি শহর। দেশটির দীর্ঘ সহিংস সংঘাতের কেন্দ্রে ছিল এই শহরটি।
দেশটির অপরাধী চক্রগুলোর মূল ঘাটি গড়ে উঠেছে এই শহরকে কেন্দ্র করে। বিশ্বের কোকেইন ব্যবসার জন্য শহরটি ভয়াবহ কুখ্যাত। অনেকেই তমাকো শহরটিকে খুব বিশৃঙ্খল এক ময়লার ভাগাড়ও বলে থাকেন।
শহরটির রাস্তার ধার দিয়ে চলে গেছে ময়লা পানির খাল। তার ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বহু কাঠের ঘর। এখানে নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করে না রাস্তার যানবাহন।
কার্লোস এই শহরে ট্যাক্সি চালক হিসেবে কাজ করেন। তাকে প্রতিবেদক জিজ্ঞেস করেছিলেন সাবেক বিদ্রোহী বাহিনী ফার্কের সঙ্গে সরকারের শান্তি চুক্তির পর কি তাদের জীবনে আসলেই শান্তি ফিরে এসেছে?
কার্লোস বলেন, ‘এটা একটা হাস্যকর কথা। শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর থেকে আমাদের এখানে খুন খারাবি, মারামারির মতো সন্ত্রাস দুই শ গুণ বেড়ে গেছে।
তমাকো শহরে মরতে আমরা ভয় পাই না। বরং বেঁচে থাকা নিয়েই আমাদের যত শঙ্কা। ‘
শহরটির অধিবাসীরা মনে করেন কলাম্বিয়ার সরকার তাদের ভুলে গেছে। এই শহরের চারপাশের ভূমিতে যে কোকেইন চাষ হয় সেটিই এখানকার কৃষকদের বাঁচিয়ে রেখেছে।
কোকেইনের কাঁচামাল কোকা চাষ কলাম্বিয়ায় অবৈধ হলেও এটি চাষ করেই তাদের পেট চলে বলে উল্লেখ করেন এলিসা। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে এটি চাষ করা অবৈধ। কর্তৃপক্ষ এর চাষের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে সেটাও আমরা জানি। ‘
এলিসার পরিবার গত ৫০ বছর ধরে কোকা চাষ করছেন। কোকা গাছ খুব বেশি লম্বা নয়। ঝোঁপের-ঝাঁড়ের মতোই উঁচু বলা চলে। এর পাতা থেকেই তৈরি হয় মাদকদ্রব্য কোকেইন। ১২ কিলোগ্রাম কোকা পাতা বিক্রি করে ৩০ হাজার পেসো আয় করেন কৃষকরা।
অর্থাৎ ১০ ডলারের মতো। কিন্তু কোকেইনের সবচাইতে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় একগ্রাম কোকেইনের দাম ৮০ ডলারের মতো। এর ব্যবসা ও চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণে কলাম্বিয়াতে প্রায়শই রক্তাক্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সরকার শান্তি আলোচনায় ব্যস্ত থাকায় কোকেইন উৎপাদন ও চোরাচালানের মতো সমস্যা মনোযোগ পায়নি বলে অভিযোগ করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। সেখানে দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে চলা সশস্ত্র সংঘাতের অবসানে সরকারের সঙ্গে শান্তি চুক্তির পর সাবেক বিদ্রোহী বাহিনী ফার্ক অস্ত্র সমর্পণ করার পর এক ধরনের শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে।
আগে তারাই কোকেইন ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করতো বলে অভিযোগ রয়ছে। তাদের অনুপস্থিতিতে কোকেইন ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু হয়েছে নতুন লড়াই। বিভিন্ন এলাকায় এর ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেই সংঘাত যেন আরো বেড়েছে, বলেন এলিসা।
তিনি বলেন, ‘কিছু লোক হয়তো একটা এলাকার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, আর অন্যরা অন্য কোনো এলাকার। যখন পাতা তোলার সময় হয় তখন এসব গ্যাং কৃষকদের ভয় দেখায়। আইনের শাসন এখানে এখন অনেক কমে গেছে। ‘
কলাম্বিয়ার সরকার দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে মাদক ব্যবসায়ী গ্যাং-এর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সম্মুখযুদ্ধ এমনটি মাইন পুঁতে রাখা জমিতেও কাজ করতে হয় বলছেন দেশটির মাদক বিরোধী বাহিনীর লে. কর্নেল এফরাইন গার্সিয়া হার্নান্দেজ।
তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং নানা গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের সার্বক্ষণিক সংঘর্ষে জড়াতে হচ্ছে। এরকম একটা বিষয় সামলাতে অবশ্যই সময় লাগবে। এখানে কোকার উৎপাদন বাড়ছে এবং যেসব যায়গায় যাতায়াত কঠিন সেসব যায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। ‘
কিন্তু কোকা গাছ জব্দ বা কোকেইন ধ্বংস করে পুলিশ চলে গেলেই কৃষকেরা আবার জমিতে কোকো চাষ করেন। তার কারণ কি। সেটি জিজ্ঞেস করলে এক কৃষক বলেন, ‘এর বাইরে আর কোনো কাজ তাদের জানা নেই। ‘
এখানে গড়ে ওঠা এই ব্যবসার ওপরই তারা নির্ভরশীল। চাইলেই তারা সরকারের কোকাবিরোধী অভিযানে সম্পৃক্ত হতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা এর সঙ্গে জড়িত হতে চাই। কোকা উৎপাদনের বিরুদ্ধে আমরাও কাজ করতে চাই। কিন্তু আমাদের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও অন্যান্য সহায়তার ব্যাপারে সরকার যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা তারা রক্ষা করেনি। ‘
পুলিশ চলে যাওয়ার পর এই কৃষক ও অন্যরা জমিতে ছড়িয়ে থাকা কোকা পাতা যতটুকু সম্ভব তুলে আনার চেষ্টা শুরু করেছিলেন। সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি না রাখলেও জীবন এখানে থেমে থাকে না।
খবর৭১/জি: