কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে অবৈধ্যভাবে প্রতিষ্ঠিত লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসার নামে প্রতারনার অভিযোগ

0
279

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে লায়ন্স কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতাল নামের ক্লিনিক খুলে ও ড্রাগ লাইসেন্স বিহীন ঔষধের ব্যবসা করে এলাকার মানুষের সাথে চক্ষু চিকিৎসার নামে প্রতারনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী রোগীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুরুঙ্গামারী উপজেলার ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়নের দেওয়ানের খামার গ্রামের জনৈক আবুল কালাম আজাদ ও প্রকৌশলী জহুরুল ইসলামের বাসা ভাড়া নিয়ে বৈধ্য কাগজপত্র ছাড়াই দিনাজপুর জেলার সদর থানার নিউ টাউন এলাকার মনিরুজ্জামানের পুত্র স্ব-ঘোষিত লায়ন টি হোসেন তুহিন নামের এক ব্যাক্তি লায়ন্স কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতাল খুলে বসেছেন। তিনি নিজেকে রাশিয়া থেকে এমবিবিএস, নিউ দিল্লী থেকে গ্লুকোমা ও ছানিরোগের উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে আসছেন।
গত ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধনের মাধ্যমে কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতাল চালু হলে সীমান্তবর্তী এ উপজেলার মানুষরা চোখের নানা সমস্যা নিয়ে আসতে থাকে। সেই সুবাদে চক্ষু হাসপাতালেই ড্রাগ লাইসেন্স বিহিন ঔষধের ব্যবসা করে এলাকার হত দরিদ্র মানুষের নিকট চক্ষু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ঔষধ বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী।
শুধু তাই নয় চক্ষু চিকিৎসার নামে ভুল চিকিৎসা দিয়ে মাসুদ রানা নামের এক কলেজ ছাত্রের চোখ নষ্ট করে দেয়ার ঘটনায় গত ২৩ জানুয়ারী উক্ত চক্ষু হাসপাতাল ঘেরাও করে উক্ত তুহিন কে রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী গনধোলাই দেওয়ার চেষ্টা চালায়। পরে ভুক্তভোগী রোগীর চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার বহনের আশ্বাস দিলে তাকে ছেড়ে দেয়। এদিকে উক্ত তুহিন তার চক্ষু হাসপাতালেই ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়াই রোগীদের নিকট ঔষধ বিক্রি করে সরকারকে লক্ষ লক্ষ রাজস্ব ফাকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে।
এলাকাবাসী জানায়, বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিক পরিচালনার কোন প্রকার অনুমতি না নিয়েই এলাকার ৫০/৬০ জন যুবক ও যুব মহিলাদের প্রত্যেকের নিকট থেকে ২৫ থেকে ৫০ হাজার করে টাকা নিয়ে চাকুরী দিয়ে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করে আসছেন লায়ন টি হোসেন তুহিন। এ অবস্থায় ২৩ জানুয়ারি রোগীর স্বজনরা উক্ত পরিচালককে ভুয়া চিকিৎসা দেয়ার জন্য গনধোলাই দেওয়ার চেষ্টার ঘটনায় হাসপাতালে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উক্ত চিকিৎসক তুহিন পঞ্চগড়ে এরকম ভুয়া চক্ষু হাসপাতাল খুলে প্রতারনা করে সেখান থেকে গা ঢাকা দিয়েছে। পরিচালক তুহিনকে হাসপাতাল ঘেরাও করে তাকে গণধোলাইয়ের চেষ্টার পর প্রতারনার নতুন ফাঁদ হিসাবে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাইকিং করে ফ্রি চক্ষু পরীক্ষার নাম করে ৩০ টাকা দিয়ে টিকেট বিক্রি এবং চক্ষু দেখে হাসপাতালে আরও পরীক্ষা করতে হবে অজুহাত দেখিয়ে চিকিৎসা দেয়ার নাম করেও লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার প্রতারিত রোগীদের অভিযোগ আসলে অনেকের টাকা পয়সা ফেরৎ দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ সুভাষ চন্দ্র জানান, উদ্বোধন করার সময় তারা কোন প্রকার বৈধ কাগজ পত্র দেখাতে না পারায় আমরা তাদের কার্যক্রম চালাতে নিষেধ করি। তারা নিষেধ অমান্য করে কার্যক্রম চালাচ্ছে জানতে পেরে কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
ভুরুঙ্গামারী ড্রাগ সমিতির নেতা মেডিসিন কর্নারের সত্বাধিকারী মুকুল জানান,ড্রাগ লাইসেন্স বিহিন কোন হাসপাতাল ক্লিনিক হতে রোগীদের নিকট ঔষধ বিক্রয় নিষিদ্ধ হলেও উক্ত লায়ন কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে ফার্মেসী দিয়ে রোগীদের নিকট ঔষধ বিক্রি করা হচ্ছে যা সরকারী আইনে নিষিদ্ধ। বিষয়টি ভুরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ও রংপুর বিভাগীয় ড্রাগ সুপারকে জানানো হয়েছে।
এব্যাপারে লায়ন টি হোসেন তুহিনের মোবাইলে ফোন দিলে মুক্তার হোসেন নামের এক ব্যাক্তি ফোন রিসিভ করে লায়ন টি হোসেন তুহিনের পারসোনাল সেক্রেটারী পরিচয় দেন। টি হোসেনের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি দুই মিনিট অপেক্ষা করতে বলে দুই মিনিটপর কল দিয়ে জানায় টি হোসেন তুহিন একটু অসুস্থ। তিনি এই মুহুর্তে কথা বলতে পারবেন না। যা বলার আমাকে বলেন। তখন পারসোনাল সেক্রেটারীর নিকট অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান দাড় করাতে গেলে অনেকেই অভিযোগ করতেই পারে তবে সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। নিয়ম মেনেই হাসপাতাল খোলা হয়েছে। রোগীর চোখ নষ্টের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমন দু-একটি ঘটনা ঘটতেই পারে।
এব্যাপারে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, ভুরুঙ্গামারীর লায়ন্স কমিউনিটি চক্ষু হাসাপাতালের কোন বৈধ্যতা না থাকায় তা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অনতি বিলম্বে উক্ত চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক পরিচয়দানকারী পরিচালক তুহিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে হাজার হাজার চক্ষু রোগী প্রতারনার শিকার সহ অকালে চক্ষু হারাবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here