কাল থেকে শুরু চৌগাছার ঐতিহ্যবাহী বলুহ মেলা

0
719

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু ,চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধিঃসোমবার থেকে শুরু হচ্ছে যশোরের চৌগাছার ঐতিহ্যবাহী পীর বলুহ মেলা। ১১ সেপ্টেম্বর মেলা শুরু হয়ে তা একটানা দশ দিন অর্থাৎ ২০ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। মেলাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে গোটা উপজেলা জুড়ে সাজসাজ রব পড়ে গেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাসহ দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ী, ফেরিওয়ালা মেলা চত্ত্বরে উপস্থিত হয়ে অস্থায়ী দোকান ঘর প্রস্তুতের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে আইন শৃংখলা বাহিনী সদা প্রস্তুত থাকবেন বলে জানিয়েছেন মেলা কর্তৃপক্ষ। এ বছরের মেলায় কোন ধরনের অশ্লিলতা চলবে না বলে জানান তারা। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে মেলা শেষ করতে সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন মেলা কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, প্রতি বাংলা সনের ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার এ   অঞ্চলের    প্রখ্যত পীর বলুহ মেলা শুরু হয়। মঙ্গলবারে শুরু হয়ে তা একাধারে তিন দিন চলে বৃহস্পতিবার শেষ হলেও এবার চলবে তা দশ দিন ধরে। যুগযুগ ধরে পীর বলুহ দেওয়ান (রঃ) এর মাজারকে ঘিরে এই মেলা বসে। মেলার প্রথম ও প্রধান আকর্ষন হচ্ছে কাঠের তৈরী রকমারী আসবাবপত্র। অতি সুলভ মূল্যে সব ধরনের আসবাসপত্র মেলে এই মেলাতে। এ ছাড়া হরেক রকমের বাহারি সব পন্যের বেচাকেনা চলে কাক ডাকা ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত। তাইতো মেলাকে কেন্দ্র করে হাজরাখান গ্রাম তো বটেই গোটা উপজেলাতে পড়ে যায় সাজসাজ রব। এবছরও তার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। বিশেষ করে মেলার উৎপত্তি স্থল সেই হাজারাখানা গ্রাম ও পাশ্ববর্তী টেংগুরপুর, পেটভরা, আন্দারকোটা, স্বরুপদাহ, নারায়নপুর, চানপাড়া, নারায়নপুর গ্রামাঞ্চলে  বয়ে চলে আনন্দ উৎসব। পীর বলুহ মেলা এই এলাকার মানুষের কাছে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, ঈদ কিংবা পুজার অনুষ্ঠানে তারা মেয়ে জামাইকে দাওয়াত না দিলেও মেলা উপলক্ষে মেয়ে জামাইকে দাওয়াত দিতে ভুল করেনা। সব ঘরে ঘরে চলে অন্য রকম এক আনন্দ উল্লাস।
যাকে ঘিরে এই মেলার সৃষ্টি তার সম্পর্কে হাজারও কিংবদন্তি বিদ্যমান। যা এখোনো লোক মুখে প্রকাশ পায়। জানা যায়, পীর বলুহ দেওয়ান অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। লোক মুখে শোনা যায়, তিনি যা বলতেন বাস্তবে তাই হতো। কিন্তু তার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত ছিল রহস্যের জালে আবৃত। শোনা যায় তিনি উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হলো ছুটি বিশ্বাস। তবে জন্মকাল সম্বন্ধে তেমন কোন তথ্য আজও পাওয়া যায়নি। এ অঞ্চলের বয়োবৃদ্ধদের অনুমান পীর বলুহ ৩ থেকে ৪’শ বছর পূর্বে জন্মগ্রহন করেন। তার কিংবদন্তি সম্পর্কে জানা যায়, বলুহর বয়স যখন ১০ থেকে ১২ বছর তখন একদিন তার পিতার কাছে বলেন সে মাঠে গরু চরাতে যাবে। পিতার অনুমতি পেয়ে বলুহ গরু চরাতে গেল স্থানীয় ব্যাদন বিলের মাঠে। গরু গুলি লোকের ফসলের ক্ষেতের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে মনের আনন্দে আরাম করতে থাকেন পীর বলুহ দেওয়ান (রঃ)। ক্ষেত মালিক বিষয়টি জানতে পেরে সমুদয় গরু খোয়াড়ে নেয়ার জন্য গরু একত্রিত করতে থাকে। এ সময় বলুহ ঘটনাটি দেখে সমস্ত গরু বক বানিয়ে পাশে একটি গাছে বসিয়ে রাখেন। এর কিছুদিন পর তিনি চলে আসেন হাজরাখানা গ্রামে তার মামা বাড়িতে। সে সময় তাঁর মামাদের  অবস্থা অস্বচ্ছল ছিল। তাই বলুহ অন্যের বাড়িতে নির্দিষ্ট মজুরিতে কাজ করতেন। একদিন গৃহস্থ তাকে মাঠে যেয়ে সরষে মাড়াই করতে বলে। কিন্তু তিনি সে কাজ না করে সরষের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেন। সংবাদটি গৃহস্থের কানে পৌছালে মাঠে গিয়ে দেখে সমুদয় সরিষা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তখন  রাগান্বিত হয়ে মারতে গেলে বলুহ হেসে উঠে বলেন সরিষা তো পোড়েনি। তারপর ছাই উড়িয়ে দেখেন একটি সরিষার দানাও নষ্ট হয়নি। সবাই অবাক হলো এবং ঘটনা চারিদিক ছড়িয়ে পড়লো। আরো কিংবদন্তি আছে- একদিন শীতের সকালে খেজুর রসের চুলোয় বলুহ পা দিলে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে এবং রসে জাল হতে থাকে। গ্রামের সকলে অবাক দৃষ্টিতে বলুর দিকে তাকিয়ে থাকেন। এরপর চুলা থেকে তার পা বের করে দেখে পায়ের একটি পশমেরও কোন ক্ষতি হয়নি। এমনিভাবে বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনার সূত্রপাত ঘটলে ধীরে ধীরে বলুহর কাছে মানুষজন জমায়েত হতে থাকে। অলৌকিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলুহ দেওয়ান পীর হিসাবে আখ্যা পান। লোকজন বিভিন্ন রোগের মানত করে এবং প্রতিবছর ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার তার মাজারে মানত অর্থাৎ গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, নারকেল প্রভৃতি জিনিস দিয়ে যায়। এভাবে বছরের পর বছর পাড়ি দেয় বলুহ মেলা। ঐতিহ্যবাহি এ মেলা আজ অবধি এ  এলাকা   বটেই সারা দেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। কোন মাইকিং নেই, নেই কোন ঢাক ঢোল বাজানো অথচ সবাই ভাদ্র মসের শেষ মঙ্গলবার বলুহ মেলায় জড় হন। জনপ্রিয় এই মেলা অত্যান্ত শান্তিপূর্ণ আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। এরজন্য তারা মেলা পরিচালনা কমিটি ও আইন শৃংখলা বাহিনীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে মেলা কমিটির সভাপতি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়রম্যান জয়নাল আবেদিন মুকুল বলেন, মেলা শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ করার লক্ষ্যে ২১ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এ বছর মেলা দশ দিন ধরে চলবে। মেলাতে কোন ধরনের অশ্লিলতা চলবেনা। সুষ্ঠু ভাবে মেলা সম্পন্নের জন্য তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।

খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here