কলাপাড়ার লালুয়ায় প্রতিবছরের ন্যায় হাজারো পরিবার পানিবন্দি, নেই কোন সরকারী উদ্যোগ

0
416

রাকিব হাসান, পটুয়াখালী প্রতিনিধিও: জোয়ারের পানিতে ভাসছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের রাবনাবাদ পাড়ের প্রায় আড়াই হাজার কৃষক-জেলে পরিবারের ঈদ উৎসব। এসব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এ দু:খ দীর্ঘ থেকে ক্রমশ দীর্ঘতর হচ্ছে। প্রায় এক যুগের এই দু:খ-কষ্ট এখন পরিণত হয়েছে দূর্যোগে। দীর্ঘ সাত কিলোমিটার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধের কারনে আট গ্রাম অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ভাসছে।

উপজেলার লালুয়ার চারিপাড়া, চৌধুরীপাড়া, মুন্সীপাড়া, নয়াকাটা, পশুরবুনিয়া, নাওয়াপাড়া, ছোট পাঁচ নং, বড় পাঁচ নং গ্রামের এসব মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এসব মানুষ পনেরদিন থেকে ফের জোয়ার-ভাটার পানিতে ভাসছে। গ্রামের মানুষ ও তাদের সম্পদসহ আবাদি জমি জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে রক্ষার বেড়িবাঁধটি সিডরের তান্ডবে প্রথম লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এরপর কয়েক দফা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে কখনও বিকল্প বাঁধ, কখনও রিং বেড়িবাঁধ কিংবা জরুরি মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু গত দুই বছর আর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

এই বেড়িবাঁধের রক্ষণাবেক্ষণসহ মেরামতে অনেকের ভাগ্যের চাকা খুলে গেছে, কিন্তু ভোগান্তি যায়নি নদীপাড়ের মানুষের। এখন বেড়িবাঁধটি রাবনাবাদ নদীর পাড়ের ফসলী জমির সঙ্গে মিশে গেছে। প্রায় আড়াই কি.মি. অংশের এমন দশা। এছাড়া পশুরবুনিয়া থেকে চান্দুপাড়া পর্যন্ত অসংখ্য স্পটে বাঁধটি রয়েছে ছিন্ন-ভিন্ন। অমাবস্যার প্রভাবের সঙ্গে তিনদিনের টানা প্রবল বৃষ্টির কারণে এখন গ্রামগুলোর সকল পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব পরিবারে কিছু চাল-ডালসহ অন্যান্য সামগ্রী রয়েছে কিন্তু পানিবন্দীদশায় তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। শত শত পরিবার রান্না পর্যন্ত করতে পারছেন না।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও শের-ই বাংলা নৌঘাঁটির জন্য ওই এলাকার অধিকাংশ জমি অধিগ্রহণের আওতায় পড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড রাবনাবাদ পাড়ের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধটি মেরামতের কাজও করছে না। ফলে এসব মানুষের এখন হয়েছে অন্তহীন ভোগান্তি। তাদের জীবন-যাপন হয়ে গেছে দুর্বিষহ। ঈদ উৎসব এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

চারিপাড়া গ্রামের নান্নু হাওলাদার, নাশির হাওলাদার, হেলাল হাওলাদার, কাঞ্চন হাওলাদার, জানান জমিজমা আবাদ করে লাভ নেই। যখন ধানের শীষ বের হবে তখন লোনা পানিতে সব নষ্ট হয়ে যাবে। আর এখন জোয়ারের পানিতে সব থৈ থৈ করছে। বাড়িঘরে থাকা তো দুরের কথা। চলাচলের রাস্তা পর্যন্ত ডুবে যায়। মসজিদে নামাজ পর্যন্ত পড়া যায় না। এদের ঈদের উৎসব এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।

নাওয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়ার শতাধিক পরিবার প্রতিদিনকার জোয়ারের ঝাপটা থেকে রক্ষায় বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছেন। যাদের সঙ্গতি নেই তারা এখন প্রতিদিন জোয়ারের দুই দফা প্লাবনে ভাসছেন। চৌধুরীপাড়ার মাহমুদা ও বাবুল শিকদার দম্পতি জানান, বাড়িঘরসহ রান্নার চুলা পর্যন্ত ডুবে গেছে জোয়ারের পানিতে। জোয়ারের সময় ঘরে বন্দী থাকেন। আর ভাটায় কাদাপানি পেরিয়ে চলাচল করেন। তাও অনেক দূর্ভোগের মধ্য দিয়ে। এভাবে লালুয়ার রাবনাবাদ পাড়ের মানুষের দূর্ভোগ কবে নাগাদ শেষ হবে তা তারাও বলতে পারছেন না। চারিপাড়ার মানুষ জানান, সরকার যদি তাদের ঘরবাড়ি জমিজমার টাকা দিয়ে দিত তাইলে অন্য কোথায় গিয়ে বাড়িঘর করে থাকতে পারতেন। তাও সহজে পাচ্ছেন না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, রাবনাবাদ পাড়ের অধিকাংশ জমি পায়রা পোর্টসহ নৌঘাটির জন্য অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। তাই ওই বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের তাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশনা নেই।

তবে এ এলাকার বানভাসি মানুষ মনে করেন, এসব জটিলতায় শতকরা ৯০ ভাগ আওয়ামী লীগের ভোটার এসব মানুষ এখন সরকারের প্রতি বিরুপ মনোভাব প্রকাশ করতে শুরু করেছে। তারা দ্রুত তাদের জীবন-জীবিকার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here