করোনার সামান্য প্রভাব পড়বে পদ্মা রেল প্রকল্পে’

0
500
করোনার সামান্য প্রভাব পড়বে পদ্মা রেল প্রকল্পে’

খবর৭১ঃ নভেল করোনাভাইরাসের সামান্য প্রভাব পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে পড়বে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তবে এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে এ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (সিআরইসি) পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

পদ্মা সেতু প্রকল্প ও পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের স্বার্থে চীনা নাগরিকদের বাংলাদেশে আসার ও অবস্থানের বিষয়ে ভিসা সহজ করার দাবিও জানান তিনি। বুধবার কেরানীগঞ্জে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, করোনার প্রভাবে সেতুর কাজ কিছু শ্লথগতি হলেও চলতি মার্চের শেষের দিকে তা ঠিক হয়ে আসবে।

নির্ধারিত সময়ের এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা। পদ্মা সেতু প্রকল্প ও পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে পরিদর্শনে যান চীনা রাষ্ট্রদূত এবং দুই প্রকল্পের ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রকল্প দুটির বর্তমান অগ্রগতির কথা জানিয়ে তারা বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ৩৯টির কাজ শেষ হয়েছে।

মোট ৪১টির মধ্যে ২৫টি স্প্যান বসানো হয়েছে। সার্বিকভাবে এ প্রকল্পের ৮৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। ২০২১ সালের জুনে এটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। অপরদিকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ২৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা বড় প্রকল্পগুলোর কাজের ধারাবাহিকতায় করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব হ্রাসে কয়েকটি সুপারিশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে চীন। দেশটির ৭০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সচল হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে আসছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ১৪ থেকে ১৫ হাজার চীনা নাগরিক কাজ করছেন।

তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ এখন চীনে অবস্থান করছেন। সংখ্যার হিসাবে সাত থেকে আট হাজার চীনা নাগরিক চীনে রয়েছেন। রেল সংযোগ প্রকল্পে এক হাজার ৭০০ চীনা নাগরিক কাজ করতেন, যাদের ২৬০ জন চীনে রয়েছে। এছাড়া চীনের অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এসব কারণে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে মাইনর (সামান্য) প্রভাব পড়তে পারে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজে কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কিছু কর্মকর্তা হুবেই প্রদেশে আটকা পড়েছেন।

চীনা রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, তবে দুই দেশের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ প্রভাব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মেগা প্রকল্পগুলোতে কর্মরত চীনা নাগরিকদের ভিসা সহজ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পের অনেক কর্মীর ভিসার মেয়াদ শেষ হলে তাদের চীনে ফেরত যেতে হচ্ছে।

আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি, ভিসার মেয়াদ শেষ হলে যেন তাদের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়া এ প্রকল্পের কাজে গতি আনতে চীনের নাগরিকদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা পুনরায় চালু করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, রোগটি ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে অন অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধের সিদ্ধান্ত ছিল যৌক্তিক ও সুন্দর। অন অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধের সময় বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম। কারণ নিরাপত্তাই বাংলাদেশের প্রথম অগ্রাধিকার।

কিন্তু এখন পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। চীন সফলতার সঙ্গে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করছে। বাংলাদেশে চলমান প্রকল্পগুলোর গতিশীলতা ঠিক রাখতে চীনের নাগরিকদের আসা প্রয়োজন। এ কারণে বাংলাদেশ তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময়ে চীনের পাশে থাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি।

চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, চীনের নাগরিকদের বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে যেভাবে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে তা অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে করা হয়নি। এয়ারপোর্টে অন্য দেশের নাগরিক এমনকি বাংলাদেশের নাগরিকদের করোনা পরীক্ষা শিথিল রয়েছে। সেগুলোতেও কড়াকড়ি আরোপ করা দরকার। অনেক দেশে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া যাচ্ছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে কাজ কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। আস্তে আস্তে তা কাটিয়ে ওঠা হচ্ছে। মার্চের শেষদিকে পুরোদমে কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি। করোনার কারণে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হতে নির্দিষ্ট সময়ের এক থেকে দেড় মাস বেশি লাগতে পারে।

প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন এ চৌধুরী বলেন, ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। করোনার প্রভাবে কাজের গতিতে একটু বাধা এসেছে। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যাতে আসতে পারে সেজন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।

আশা করি এসব সমস্যা অতিক্রম করতে পারব। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কাউন্সিলর লিউ ঝেনহুয়া, সিআরইসির পিবিআরএলপির প্রকল্প পরিচালক ওয়াং কুন, সিআরইসির পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক লিউ জিয়ানহুয়া প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতে কর্মকর্তাদের শারীরিক অবস্থার প্রতিদিনের রিপোর্টিং সিস্টেম খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ থার্মোমিটার ও মেডিকেল মাস্ক কেনা হয়েছে। এগুলো এ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব চীনা ও স্থানীয় কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে।

ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে এ প্রকল্পের অফিসগুলো প্রতিদিন দু’বার পরিষ্কার করা হয়। পদক্ষেপগুলো নেয়ার ফলে এখন পর্যন্ত কেউই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বুড়িগঙ্গা নদীর কাছে একটি অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। তারা বড় প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত চীনা কর্মকর্তাদের ভিসার জন্য একটি গ্রিন চ্যানেল তৈরি এবং প্রকল্পের সরঞ্জামাদি আনার ক্ষেত্রে কাস্টম প্রক্রিয়া দ্রুত করার আহ্বান জানান।

এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালির মতো দেশেও করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে চীন ছাড়াও এসব দেশ থেকে মানুষ আসার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার প্রস্তাব দেন চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here