কচুয়ায় আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ঘরসহ জমি বিক্রি করে দিয়েছে এক হতদরিদ্র !

0
308

বাগেরহাট প্রতিনিধি
বাগেরহাটের কচুয়ায় সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত, জমি আছে ঘর নাই, নিজ জমিতে গৃহ নির্মান আশ্রয়ন-২, প্রকল্পের আওতায় হতদরিদ্রদের জন্য দেয়া আধাপাকা বসতঘর এখন জমিসহ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। দরিদ্রের ছদ্মবেশধারী সুবিধাভোগীরা এ কাজ করছেন। উপজেলার মসনী (রঘুদত্তকাঠী) এলাকায় সম্প্রতি ঘটেছে এমন ঘটনা। এছাড়া আশপাশের এলাকাগুলোর মত কচুয়াতেও ঘর নির্মানে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জানাগেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ১০১টি গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় থেকে প্রেরিত প্ল্যান ডিজাইন ও প্রাক্কলন অনুযায়ী গুনগতমান বজায় রেখে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের ৪ জুন ৪৪১৯ স্বারকে কচুয়া উপজেলায় হত দরিদ্রদের জন্য গৃহনির্মান আশ্রয়ন-২, প্রকল্পের আওতায় ২৫৪টি বসতঘর নির্মানের নির্দেশ দেয়া হয়। সে লক্ষ্যে আশ্রায়ন-২, প্রকল্পের আওতায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে প্রতিটি ঘর ও টয়লেট নির্মান বাবদ এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়াও হয়। কিন্তু নির্মান কাজে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা ইট, বালু, সিমেন্ট, খোয়া, ঢেউ টিনসহ অন্যান্য উপকরন বরাদ্দের চেয়ে কম দিচ্ছেন। আর যা সামান্য দিচ্ছেন, তাও নি¤œমানের। আবার এসব মালামালের পরিবহন খরচ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে ঘর পাওয়া হতদরিদ্রদের উপর। এছাড়া ঘরের বেড়া, জানালা ও দরজার জন্য ঢেউটিন বরাদ্দ থাকলেও তাতেও ফাঁকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।শংকর দাস সহ ওই এলাকার বেশ কয়েকজন টাকা ধার করে ঘরের মালামাল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিয়েছে। ভূক্তভোগীদের কয়েকজন বলেন, মালামাল পরিবহনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের থাকলেও তা আমাদের নিজ খরচে পরিবহন করতে হয়েছে। এছাড়া ঠিকাদাররা ইট, সিমেন্ট, খোয়া, বালু, কাঠ ইত্যাদি বরাদ্দের চেয়েও কম সরবরাহ করছেন। এ নিয়ে কোন প্রশ্ন করলে উল্টো বিপদে পড়তে হয়। জানা গেছে, ১ থেকে ১০ শতক জমি থাকলে তাকে ঘর দেয়ার নিয়ম থাকলেও এর চেয়ে বেশী জমি থাকা ব্যক্তিদেরও অনিয়মের মাধ্যমে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উপজেলার বাধাল ইউনিয়নের মসনী(রঘুদত্তকাঠী) পূজা মন্দিরের পাশে রনজিৎ বেহারা(দাস) একটি ঘর পেয়েছিলেন। তিনি যেখানে ঘরটি স্থাপন করিয়েছেন, সেখানেই তার রয়েছে ২৪শতক জমি।
ভারতে চলে যাওয়ার জন্য সম্প্রতি রনজিৎ বেহারা তার ভোগ দখলীয় সম্পত্তি গত ৮ অক্টোবর ১৭৬০ নং দলিলে বিক্রি করেন। মসনি গ্রামের মনিমোহন দাস (পুলিশ সদস্য) ওই সম্পত্তি ক্রয় করেন। অথচ বিক্রি করা ওই জমিতে রয়েছে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ঘর। অপর একটি পক্ষ বলছে, রনজিৎ বেহারা(দাস) এদেশ থেকে চলে যাওয়ার জন্য ওই ঘর পাওয়ার অনেক আগেই জমি বিক্রয় চুড়ান্ত করে ফেলেছিল। বাকি ছিল শুধু রেজিষ্ট্রির কাজ।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর নিয়ে উপজেলা জুড়ে এক প্রকার হরিলুট চলছে। যাচাই বাছাই ছাড়াই ঢালাও ভাবে ঘর বরাদ্দের তালিকা করায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকৃত হতদরিদ্ররা বাদ পড়েছেন। এতে প্রধানমন্ত্রীর মুল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। ঠিকাদার সংশ্লিষ্টরা ঘর প্রতি সর্ব সাকুল্যে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা খরচ করে নি¤œমানের উপকরণ দিয়ে ঘর তৈরী করে যাচ্ছেন। রনজিৎ বেহার(দাস) এর ছেলে উত্তম বেহারা জানান, আমার ভগ্নিপতি অসুস্থ। তাই টাকার প্রয়োজনে জায়গা জমি সব বিক্রয় করেছি। তবে আমরা এখনো ওই বাড়িতে আছি। তবে জমির ক্রেতা পুলিশে কর্মরত মনিমোহন দাস বলেন, ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ ওরা আমার কাছে জমি বিক্রি করবে বলে ৫৫ হাজার টাকা অগ্রিম নেয়। গত অক্টোবরে তিনি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকায় রনজিৎ বেহারার ওই ২৪ শতক জমি ক্রয় করেন বলেও জানান। বাধাল ইউপি চেয়ারম্যান নকীব ফয়সাল অহিদের সাথে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন, ওই লোক যেহেতু জমি বিক্রি করেছেন, তাই আমরা চেষ্টা করছি ওই ঘরটি অন্য কোন দরিদ্র ব্যক্তিকে দেয়ার জন্য। তবে অনেক বেশী জমির মালিক কিভাবে এই ঘর বরাদ্দ পেলো- এমন প্রশ্নের জবাব তিনি “মিটিংয়ে আছি” অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে যান। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা সরোয়ার বলেন, এ সর্ম্পকে আমি কিছুই বলতে পারবোনা। এবিষয়টি ইউএনও নিজের তত্ত্বাবধায়নে করেন। তবে আমি শুনেছি বিভিন্ন জায়গায় ঘর দেওয়ার ব্যাপারে অনিয়ম হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি তাসমিন ফারহানার জানান, আমার তত্ত্বাবধানে ঘর নির্মানের কাজ সঠিক ভাবে চলছে। উপজেলার সবকটি ঘরের নির্মান কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর খরচের হিসাব নিকাশ করে দেখে পরিবহন খরচের বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জমিসহ ঘর বিক্রয়ের ব্যাপারে কেউ আমাকে জানাইনি। তবে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here