এমপিও ভুক্তি না হয়েও কলেজের পাঠদান ও বোর্ড পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানের অর্জন সকলের নজর কেড়েছে

0
394

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছার ঐতিহ্যবাহি বিদ্যাপিঠ তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজ মানসম্মত শিক্ষা দানে এক অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। প্রতিষ্ঠা লগ্ন হতে নানা প্রতিকুলতার মধ্যে সবার প্রিয় এই প্রতিষ্ঠান তার নামের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে চৌগাছাবাসির মুখ করেছেন উজ্জ্বল। যশোর শিক্ষা বোর্ডের সেরা টপটেনে স্থান দখলে নিতে প্রতিষ্ঠানটি সক্ষম হয়েছেন। প্রতি বছরই এই কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের নামকরা সব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে। অবকাঠামো দিক দিয়ে কিছুটা দূর্বল হলেও শিক্ষাদানে এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম সর্বত্রই। একঝাক তরুন উদিয়মান শিক্ষক তাদের অর্জিত জ্ঞান দিনে কলেজটিকে আলোকিত করে তুলেছেন। তাই ঐতিহ্যবাহি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তির জোর দাবি তুলেছেন এ জনপদের হাজারও মানুষ।
সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে চৌগাছার কতিপয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। চৌগাছা-কোঁটচাঁদপুর সড়কের সাথেই পৌর এলাকার মধ্যে অত্যান্ত মনোরম পরিবেশে সবুজে ঘেরা এলাকায় ২ একর ১৫ শতাংশ জমির উপর কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও নানা শ্রেনী পেশার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে সে সময়ে কলেজটির নামকরণ করা হয় দক্ষিন বঙ্গের গনমানুষের নেতা, যশোর উন্নয়নের রুপকার, সাবেক সফলমন্ত্রী বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য জননেতা তরিকুল ইসলামের নামনুসারে। মহান এই নেতার নামের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আলো ছড়াতে থাকে কলেজটি। উপজেলার নামকরা সব প্রতিষ্ঠানকে পিছনে ফেলে তার শিক্ষাকর্যক্রম এগিয়ে যেতে থাকে দূর্বর গতীতে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে চৌগাছা তো বটেই সারা যশোরে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর ২০০৮ সালে প্রথম বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ওই সালে ৫১ জন পরীক্ষা দিয়ে ৩৯ জন উত্তীর্ণ হয়, পাশের হার ছিল ৭৭ শতাংশ। ২০০৯ সালে ৭৫ জন পরীক্ষা দিয়ে ২ জন জিপিএ ৫ সহ ৭৩ জন উত্তীর্ণ হয়, পাশের হার ছিল ৯৭ শতাংশ। ওই সালে কলেজটি যশোর শিক্ষা বোর্ডে সেরা দশের মধ্যে ৪র্থ স্থান দখল করে নেয়। ২০১০ সালে ৭৫ জন পরীক্ষা দিয়ে ৩ জন জিপিএ ৫ সহ ৭১ জন উত্তীর্ণ হয়, পাশের হার ছিল ৯৫ শতাংশ। ২০১১ সালে ৭০ জন পরীক্ষা দিয়ে ৩ জন জিপিএ ৫ সহ উত্তীর্ণ হয় ৫৬ জন, পাশের হার ৮০ শতাংশ। ২০১২ সালে ৯৮ জন পরীক্ষা দিয়ে ৪ জন জিপিএ ৫ সহ পাশ করে ৮২ জন, পাশর হার ছিল ৮৪ শতাংশ। ২০১৩ সালে ১২০ জন পরীক্ষা দিয়ে ১৩ জন জিপিএ-৫ ও ৫ জন শিক্ষার্থী গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ার গৌরব অর্জন করে। ওই সালে পাশের হার ছিল ৭৭ শতাংশ। ২০১৪ সালে ১০৯ জন পরীক্ষা দিয়ে ৩ জন জিপিএ ৫ সহ পাশ করে ৯৬ জন, পাশের হার ৮৮ শতাংশ। ২০১৫ সালে ১৪২ জন পরীক্ষা দিয়ে ২ জন জিপিএ ৫ সহ পাশ করে ১৩৩ জন, পাশের হার ৯২ শতাংশ। ২০১৬ সালে ১৪৭ জন পরীক্ষা দিয়ে ১০ জন জিপিএ-৫ সহ পাশ করে ১৩৬ জন, পাশের হার ছিল ৯৩ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ১০৬ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২ জন জিপিএ ৫ সহ উত্তীর্ণ হয় ৭২ জন শিক্ষার্থী, পাশের হার ৬৮ শতাংশ। সূত্র জানায়, প্রতি বছর স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী, শেখ মুজিবুর রহমান, শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের নামকরা সব প্রতিষ্ঠানে উত্তীর্ণ হয়ে সেখানে লেখাপড়া করছে। সম্পূর্ণ রাজনৈতীক মুক্ত একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজ। কলেজ অধ্যক্ষের সঠিক দিক নির্দেশনা ও অভিভাবকদের সুচিন্তি মতামতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে চলেছে। এক ঝাক সুদক্ষ তরুন প্রভাষক মন্ডলীদ্বারা সার্বক্ষনিক শিক্ষার্থীদের তদারকি করা, মাসিক, সাপ্তাহিক পরীক্ষা গ্রহন করা ও সেই খাতা অভিভাবকের কাছে পৌছে দেয়াসহ নানা কর্মকান্ডে প্রতিষ্ঠান তার সুনাম অব্যহত রেখেছে। যে প্রতিষ্ঠান জন্মলগ্ন থেকে আলো ছড়াতে শুরু করেছেন সেই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ৩৫ জন শিক্ষক কর্মচারী চরম মানবেতর জীবনযাপন করে যাচ্ছে। বছরের পর বছর নেই বেতন ভাতা, তারপরও এখানে কর্মরত কারও মনে নেই ক্লান্তির ছাপ। যে উদ্যেশ্যে তারা এখানে এসেছেন তারা প্রত্যেকে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব অত্যান্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজের অধ্যক্ষ মনজুরুল আলম লিটু জানান, আমার প্রতিষ্ঠান অবকাঠামো দিক দিয়ে কিছুটা দূর্বল হলেও শিক্ষার মানে আমরা অনেক গুন এগিয়ে। বিজ্ঞান, বানিজ্যসহ প্রতিটি বিভাগে আমার রয়েছে অত্যান্ত দক্ষ প্রভাষক। তাদের অর্জিত সবটুকু জ্ঞান তারা শিক্ষার্থীদের মাঝে উজাড় করে দেন, তাই প্রতি বছরই আমরা ভাল ফলাফল করতে সক্ষম হচ্ছি। কলেজটির একটি একাডেমিক ভবন খুবই জরুরী, তাই একটি ভবন পাওয়াসহ প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ঠ সকলের সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here