একজন অকুতোভয় বীর সৈনিকের বীরত্বগাঁথা স্মৃতিকথা

0
562

মাগুরা থেকে ফিরে উজ্জ্বল রায়: বিগত বৃহত্তর যশোর জেলা বর্তমান মাগুরা, নড়াইল জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা নদী। এই নবগঙ্গা নদীর তীরে ছায়া সুবিনীড় সারি সারি নারিকেল সুপারী আরো হরেক রকম বৃক্ষরাজীর সমারোহের মধ্যে ছোট একটি গ্রাম বেরইল, পলিতা। যে গ্রামের আছে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে শিক্ষা সংস্কৃতির এক অনন্য ঐতিহ্য। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই গ্রামের কিছু দামাল ছেলেদের আছে বীরত্ব গাঁথা কাহিনী। এই ঐতিহ্যবাহী গ্রামেরই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী নাছির আহমেদ, বাবার নাম মৃত. মুন্সী আ. ওয়াজেদ এবং মাতা মৃত. আছিয়া বেগম। আজ আমরা সেই ১৯৭১ সালের অকুতোভয় বীর সেনা বাংলা মায়ের নির্ভীক সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী নাছির আহমেদের একটি বীরত্ব কাহিনী শুনে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার প্রয়াস চালাবো। মুন্সী নাছির আহমেদ ১৯৫৪ সালে বর্তমানে মাগুরা জেলার বেরইল পলিতা গ্রামের এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এলাকার সবাই জানে মুন্সী বাড়ি হিসাবে। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে মাগুরায় তিনি পাক বাহিনীর হাতে আটক হন এবং অকথ্য নির্যাতনের শিকার হন। সেই নির্যাতনের যন্ত্রণা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন। পরে তাঁর গ্রামের একজন মহৎ ব্যক্তির অনেক চেষ্টা তদবিরের ফলে পাক বাহিনীর হাত থেকে ছাড়া পান। পরবর্তীতে মুন্সী নাছির আহমেদ অনেকে তাঁকে রাশেদ নামেও জানে ভারতে গমন করেন এবং উচ্চতর ট্রেনিং প্রাপ্ত হয়ে দেশে এসে বিভিন্ন যুদ্ধ ক্ষেত্রে বীরত্বের সঙ্গে সম্মুখ সমরে অবতীর্ন হন। তবে একটি যুদ্ধ, একটি দিন, একটি মুহুর্ত না বললে হয়তো তাঁকে যথাযথ সম্মান জানানো যাবে না। ঘটনাটি যখন তিনি বর্ণনা করছিলেন তখন বারবার তাঁর হৃদয়, মন ও চোখ বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে যাচ্ছিল। ঘটনাটি ছিল সেপ্টম্বর ১৯৭১ সাল। তৎকালীন মহাম্মদপুর থানার নহাটা ইউনিয়ন ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তঘাটি, এ সংবাদ পাক সেনাদেরও অজানা ছিল না। তাই পাক সেনারা সুযোগ বুঝে সেপ্টেম্বরের এক সকালে নড়াইল থেকে নহাটায় মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাটি আক্রমণের জন্য গানবোটে ৪০০/৫০০ জন পাক সেনাসহ রওনা হয়। ঘটনাটি মুহুর্তের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধার বীর সেনা মরহুম বীর প্রতীক গোলাম ইয়াকুব মিয়ার গোছরে আসে। তখন বীর প্রতীক গোলাম ইয়াকুব সাহেব প্রায় ৩০০ জন মুক্তি সেনাকে পাক সেনাদের গতিরোধ করিবার নির্দেশ দেন। এদিকে পাক সেনা এবং অন্যদিকে বীর প্রতীক গোলাম ইয়াকুব, সহযোদ্ধা মুন্সী নাছির আহমেদ সহ প্রায় ৩০০ জন মুক্তিসেনা নবগঙ্গা নদীর পাড়ে জয়রামপুর-গঙ্গারামপুর গ্রামে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ন হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে পাক বাহিনী নহাটার দিকে আর অগ্রসর হতে পারেনি। উপরোক্ত তারা সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে কিছু গানবোট ও নৌকা যোগে পালায়ন করে। পালায়নের সময় তারা প্রচুর পরিমান অস্ত্রশস্ত্র রেখে যায়। এই যুদ্ধে অত্র এলাকার লোকজনের ভাষ্যমতে ৩৫-৪০ জন পাক সেনা নিহত হয় এবং অনেক আহত হয়। এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মুন্সী নাছির আহমেদের পার্শ্বে যুদ্ধক্ষেত্রে আবীর হোসেন নামের একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে কাতরাতে থাকে পরবর্তীতে অত্যাধিক রক্তক্ষরণে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবীর হোসেন শাহাদাৎ বরণ করেন। এই সহযোদ্ধা শহীদ আবীর হোসেনের অকাল শাহাদাৎ বরণে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী নাছির আহমেদকে আজও তাড়া দেয় এবং হৃদয়কে বেদনা ভারাক্রান্ত করে। অন্যদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী নাছির আহমেদ সমাজ সেবামূলক কাজে অনুপ্রেরণাও যোগায়। তাঁর সনদ নং-ম ১৭৬০২, গেজেট নং-১৮১। ব্যক্তি জীবনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী নাছির আহমেদের স্ত্রী রেখা বেগম, দুই পুত্রঃ ১। মুন্সী সুমন ২। মুন্সী সুজন ও একমাত্র কন্যা দিপা পারভীন এবং নাতী নাতনীদের নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। বর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী নাছির আহমেদ ঘাড় ও হাতের কিছু অসুখে ভুগছেন, আমরা তার আরোগ্য কামনা করি। তিনি দেশ বাসীর কাছে দোয়া প্রার্থী। আমরা আশাকরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী নাছির আহমেদের সন্তানরা সহ আপামর জনসাধারণ তাঁর মত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের দেশকে প্রকৃত সোনার বাংলা গড়ে তুলবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
খবর ৭১/ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here