উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দেয়া শাস্তিমুলক বদলী আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে একের পর এ চমক সৃষ্টি

0
269

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ
স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থলোপাট, চাঁদাবাজি, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, স্ত্রীকে দুর্নীতিতে প্রলুব্ধকরন, অশিক্ষক সুলভ কর্মকান্ড, অফিসের গোপন তথ্য ফাঁস, স্বাক্ষর জালিয়াতি সহ তের দফা অভিযোগে অভিযুক্ত পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির আলোচিত প্রধান শিক্ষকের ক্ষমতার শেষ চমকের চিঠিটি পৌঁছেছে বিভাগীয় উপ-পরিচালক, খুলনা বিভাগ, খুলনা কার্যালয়ে। চলতি মাসে এ নিয়ে একজন শিক্ষকের বদলী তেলেসামতির এটি চতুর্থ আদেশ। যা এসেছে খোদ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের দপ্তর হতে। এ নিয়ে গত দু’দিন প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছতা নিয়ে? ভেঙ্গে পড়েছে চেইন অব-কমান্ড। সৃষ্টি হয়েছে হ-য-র-ল-ব অবস্থা। এদিকে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দেয়া শাস্তিমুলক বদলী আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে একের পর এ চমক সৃষ্টি করায় অফিস পাড়ায় কপিলমুনির প্রধান শিক্ষক নূরুজ্জামান মোষ্ট পাওয়ারফুল ম্যান হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। সূত্র মতে, কপিলমুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নূরুজ্জামানের বিরুদ্ধে শিক্ষক এবং এলাকাবাসীর লিখিত ১৩ দফা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর গত ২ জানুয়ারি খুলনা বিভাগের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোঃ ওয়ালিউর ইসলাম তাকে অন্যত্র শাস্তিমূলক বদলী করেন। এছাড়াও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সুপারিশ করেন কর্মকর্তা। যার স্মারক নং- বিপ্রশিক্ষা/খুবিখু/সাপ্রচঃ ২৬-৩২৫/(বদলী আন্তঃ খুলনা)/১৪/০২/৭)। এ আদেশের প্রেক্ষিতে স্মারক নং উশিঅ/পাইক/২০১৮/০৬ তারিখ ০৮/০১/২০১৮ মোঃ নূরুজ্জামানকে প্রশাসনিক কারণে বদলীর পর তিনি অবমুক্ত হন। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জি এম মিজানুর রহমানকে প্রধান শিক্ষক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। এদিকে দাম্ভিক প্রধান শিক্ষক নূরুজ্জামান উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে ৮ জানুয়ারি পর ৩ দিনের অতিরিক্ত ট্রানজিট সুবিধা সময়ের মধ্যেও যোগদান করেননি বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন দাকোপ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুম বিল্লাহ। বরং তিনি যাদুর কাঠির পরশে সেরে ফেলেন রাতের আঁধারে বদলী আদেশ রফাদফা। অবশেষে ১০ দিনের মাথায় নিজের স্বাক্ষর করা বদলী আদেশ নিজেই স্থগিত করলেন খুলনা বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোঃ ওয়ালিউল ইসলাম। সর্বশেষ গত ২১/০১/১৮ তারিখ যুগ্ম সচিব বিজয় ভূষণপাল (পরিচালক, পলিসি ও অপারেশন) স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে জানা যায়, বিভাগীয় উপ-পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা, খুলনা বিভাগ, কার্যালয়ের ০২/০১/২০১৮ তারিখের বিপ্রাশিকা/ খুবিখু/সাপ্র-চ:?২৬-৩২৫ (বদলী আন্তঃ খুলনা)/১৪/০২/৭ নং স্মারকে জারীকৃত কপিলমুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নূরুজ্জামাকে পূর্ব কলাবগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, দাকোপ,খুলনায় প্রশাসনিক বদলির আদেশটি বাতিল করা হয়েছে। এদিকে দাম্ভিক শিক্ষক নেতা নেতার বদলী আদেশ কিংবা বাতিল আদেমের কপি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কিংবা থানা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে পৌঁছানোর পূর্বে কোন রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই কর্মস্থলে অফিস করছেন প্রধান শিক্ষক মোঃ নূরুজ্জামান। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়গুলোর সত্যতা স্বীকার করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমেন্দ্র নাথ পোদ্দার বলেন, কপিলমুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নূরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত হয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে শাস্তিমুলক ভাবে দাকোপ উপজেলার একটি স্কুলে বদলি করেন বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোঃ ওয়ালিউল ইসলাম। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলারও সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু ওই শিক্ষক নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি। তিনি তার পূর্ববর্তী কর্মস্থলেই যোগদান করেছেন। তবে এ বিষয় কোনো দপ্তরিক চিঠি তিনি পাননি বলে জানান। সার্বিক বিষয়ে জানার জন্যে এ প্রতিবেদক প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোঃ ওয়ালিউল ইসলামের ব্যবহৃত মুঠোফোনে (০১৭১১-২৬৮৪৮৮) গতকাল একাধিক বার কল করলেও তিনি রিসিভ করনেনি। । উলে¬খ, সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খুলনা মোঃ তবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত স্মারক নং-২০৮৬ প্রাপ্ত তথ্য মতে মোঃ বাবুল আক্তার খান দিং এর আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ১২/১১/২০১৭ তারিখের ৮৭২ নং পত্রের নির্দেশনা মোতাবেক তদন্ত কার্য অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগকারী মোঃ বাবুল আক্তার দিং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, কপিলমুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বি বি শ্যামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকা কালীন গাছ বিক্রির ৩০,০০০/= (ত্রিশ হাজার) টাকা এবং বর্তমান কর্মস্থলে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বিতরণকৃত উপবৃত্তির ২৪,০০০/=(চব্বিশ হাজার) টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে জনৈক সহকারি শিক্ষক খুর্শিদা আকতার এর বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে মোঃ বাবুল আক্তার খান এর স্বাক্ষর জাল, কোম্পানীর গাইড বই বিক্রির নামে অবৈধ অর্থ আত্মসাৎ, নীতিমালা লঙ্ঘন করে উপজেলা ভিত্তিক সুযোগ সুবিধা একক ভাবে ভোগ করা, শিক্ষক সমিতি নেতা পরিচয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের স্ল¬ীপ এর মালামাল ক্রয়, শিক্ষকদের টাইমস্কেল, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা, ইবিক্রস কাজে অবৈধ ভাবে করে দেয়ার নামে টাকা লেনদেন করে অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, তার স্ত্রী মোছাঃ শামসুন্নাহার (৩৪) ২০০৭ সালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিক্ষা অফিসার থাকা কালিন ঘুষ গ্রহনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে যায়। বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্তরত রয়েছেন। এখানেও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠছে। উপজেলার ৩৬টি সরকারি বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম প্রহরী নিয়োগের বিরুদ্ধে এক রিট আবেদনে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুন্নাহারকে হাইকোর্টে তলব করে। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ৩৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম প্রহরী পদে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে তাতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে নিয়োগের বিপরীতে প্রার্থীদের কাছ থেকে মাথাপ্রতি ৬ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here