আদালতকে খালেদা জিয়া ‘সময় না দিলে বলে দিন, আমরা নির্বাচন করতে পারবো না’

0
241

খবর৭১ঃনির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত নাইকো দুর্নীতি মামলায় আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করেছেন কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি আদালতকে বলেন, ‘মামলা দিয়ে কোর্টের মাধ্যমে আমাদের আটকে রাখা হচ্ছে। যদি আমাদের সময় না দেন তাহলে আদেশ দিয়ে বলে দিন, আমরা নির্বাচন করতে পারবো না।’

বুধবার এ মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে দুদক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজলের সময়ের আবেদনের বিরোধিতার পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করেন।
নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে বসানো অস্থায়ী এজলাসে এ মামলার কার্যক্রম চলছে। এই কারাগারেই আরেকটি ভবনে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাদের জেল ও আদালতে আটকে রেখে আরেক দলকে নির্বাচনের প্রচারণার সুযোগ দিয়ে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে পারে না। তাই নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করছি।’

বিচারকের উদ্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি আমাদের সময় না দেন তাহলে আদেশ দিয়ে বলে দিন, আমরা নির্বাচন করতে পারবো না। একদিকে মামলা চলবে, অন্যদিকে তারা (ক্ষমতাসীন দল) নির্বাচন করবে -এটা তো হতে পারে না।’

শুনানিতে অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন প্রশ্ন রাখেন, ‘আমার মামলাগুলো কেন এত দ্রুত বিচার করা হচ্ছে? কয়টা মামলা দ্রুত বিচারে নিষ্পত্তি করা হয়েছে? সেভেন মার্ডার (নারায়ণগঞ্জের সাত খুন) কি দ্রুত বিচার আইনে হয়েছে?’

‘বর্তমান রাজনীতির সঙ্গে সবকিছু চলছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

খালেদা জিয়া নির্বাচনের পর অভিযোগ গঠনের পরবর্তী শুনানির জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আমার নেতাকর্মীরা ব্যস্ত থাকবেন। কেউ আসতে পারবেন না। এ কারণে নির্বাচনের পর শুনানির দিন ধার্য করা হোক।’

খালেদা জিয়ার বক্তব্য শেষে আদালত ৩ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।

নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য বুধবার বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৯নং বিশেষ জজ মাহমুদুল কবিরের আদালতে খালেদা জিয়াকে হাজির করা হয়। হুইল চেয়ারে বসে তিনি আদালতে আসেন। শুরুতেই আদালতের পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে তুলে দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করার অভিযোগে ২০০৭ সালে ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক।

খালেদা জিয়া ছাড়া মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী মওদুদ আহমদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

গতবছর এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরুর পর খালেদা জিয়া ও মওদুদ আহমদ ছাড়া বাকি সবার অব্যাহতির আবেদনের শুনানি আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করতে না পারায় এবং মওদুদের সময়ের আবেদনে এ শুনানি আটকে ছিল গত প্রায় এক বছর ধরে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুদকের দায়ের করা দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে বন্দী রাখা হয়।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here