নাম ভাঙিয়ে গড়ে তুলছে নিত্যনতুন ভূঁইফোড় সংগঠন: দেখেও দেখছে না আ.লীগ

0
439

খবর৭১ঃ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে নিত্যনতুন ভূঁইফোড় সংগঠন গড়ে তুলছে সুবিধাভোগীরা। নিজেদের স্বার্থ হাসিল ও নেতৃত্বের জটের কারণেই এসব ভূঁইফোড় ‘লীগ’ জন্ম নিচ্ছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে সুবিধা নিতেই গড়ে তুলছে এসব সংগঠন। আবার দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেও মূল্যায়িত না হয়ে নিজেই ভূঁইফোড় সংগঠন খুলে বসছেন অনেকে।

এসব ভূঁইফোড় সংগঠনের বিরুদ্ধে একাধিকবার ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও এখনও দৃশ্যমান কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি ক্ষমতাসীন দলটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হলেও একই পদে একাধিকবার রয়েছেন কেউ কেউ। আবার আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোরও কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও ঠিকমতো হচ্ছে না সম্মেলন। সম্মেলন না হওয়ায় খুলছে না নেতৃত্ব জট। নেতৃত্বের জটে পদবঞ্চিতদের অনেকেই আবার আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে গড়ে তুলছেন এইসব ভূঁইফোড় ‘লীগ’ সংগঠন।

এদিকে অনেকেই আবার সাইনবোর্ড পাল্টে সংগঠনের নামও বদলে দিয়েছেন। এই যেমন মো: খুরশিদ আলমের সভাপতিত্বে নোয়াখালীর চৌমুহনী রেলগেটে এক সময়ে গড়ে তোলা ‘শহীদ জিয়া একতা ক্লাব’টি এখন নাম বদলে হয়ে গেছে ‘বঙ্গবন্ধু একতা ক্লাব’।

এর আগে আওয়ামী ওলামা লীগ নামে একটি সংগঠনকে নিজেদের সহযোগী সংগঠন নয় বলে গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছিল আওয়ামী লীগ। গত বছর এক কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সকল ভূঁইফোড় সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও কার্যত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি দলটি।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের বাইরে এরকম শতাধিক ভুঁইফোড় সংগঠনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে—বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ, বঙ্গবন্ধু ওলামা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু বাস্তুহারা লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী হকার্স ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা বাস্তবায়ন পরিষদ, বঙ্গবন্ধু গ্রাম ডাক্তার পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ, জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় লীগ, জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় সংসদ, আওয়ামী যুব স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী প্রচার লীগ, আওয়ামী সমবায় লীগ, আওয়ামী শিশু লীগ, আওয়ামী তৃণমূল লীগ, আওয়ামী ছিন্নমূল হকার্স লীগ, আওয়ামী তরুণ লীগ, আওয়ামী রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ, আওয়ামী যুব হকার্স লীগ, আওয়ামী পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, আওয়ামী ক্ষুদ্র মত্স্যজীবী লীগ, আওয়ামী যুব সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ আওয়ামী পর্যটন লীগ, জননেত্রী পরিষদ, দেশরত্ন পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ, আমরা নৌকার প্রজন্ম, আওয়ামী শিশু যুবক সাংস্কৃতিক জোট, তৃণমূল লীগ, একুশে আগস্ট ঘাতক নির্মূল কমিটি, আমরা মুজিব হব, চেতনায় মুজিব, মুক্তিযোদ্ধা তরুণ লীগ, নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী, দেশীয় চিকিৎসক লীগ, ছিন্নমূল মত্স্যজীবী লীগ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লীগ, নৌকার নতুন প্রজন্ম, ডিজিটাল ছাত্রলীগ, ডিজিটাল আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ ইত্যাদি।

এসব ভূঁইফোড় সংগঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ৬ সহযোগী এবং ২ ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাড়া আর কোনও সংগঠন নেই। আমরা এসব সংগঠনকে রিকগনাইজ করি না। এরা সব ভুয়া সংগঠন। এসব সংগঠনের বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এসব ভূয়া সংগঠনগুলোর বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে কথা বলেছি। আমরা তো আর এদের মারধর করতে পারি না। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে এসব সংগঠন কোনও ধরনের চাঁদাবাজি বা অপরাধ করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নেতৃত্বের জট খুলতে সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এ সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই যেসব সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন হয়নি সেসব সংগঠনের সম্মেলন হবে।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here