আউশ ধানে আগ্রহ লালমনিরহাটের কৃষকদের

0
363

খবর৭১:আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট ॥ আউশ ধান চাষে আগ্রহ বেড়েই চলেছে লালমনিরহাটের কৃষকদের মাঝে। জমি ফেলে না রেখে তারা এখন আউশ ধান আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এই জেলায় ৬৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। আউশ ধানের একটি মৌসুমের নাম, যা বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। এছাড়াও এ ধান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও অসাম রাজ্যেও বেশ চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। এ ধান বেশ পরিবেশ বান্ধব ও কৃষক বান্ধবও বটে। এই ধান সাধারণত জন্মে বর্ষাকালের আষাঢ় মাসে। এ কারণে এই ধানকে অনেক সময় আষাঢ়ী ধানও বলা হয়ে থাকে। তবে এই ধান বৎসরের যে কোন সময়েই চাষ করা যায়। প্রাচীন কাল থেকে বাংলাদেশে তিনটি ধানের মৌসুম চলে আসছে আউশ, আমন এবং বোরো। বিংশ শতকের ষাটের দশকে সেচ নির্ভর ইরি-বোরো ধান প্রবর্তনের আগ পর্যন্ত আমন এবং আউশ ছিল ধানের প্রধান ফসল। এ ধান সমতল, জলাভুমি ছাড়াও পাহাড়ী অঞ্চলেও আবাদ হয় এই ধান। জুম চাষের এক অন্যতম ফসল হলো এই আউশ ধান।
আউশ বৃষ্টি নির্ভর ধান জাত। জাত ভেদে আউশ ধানের জীবনকালে খানিকটা ভিন্নতা থাকলেও বছরের নির্দিষ্ট সময়ে এর আবাদ করতে হয়। মে-জুনের বৃষ্টিকে অবলম্বন করে আউশের বীজ সরাসরি মাঠে বুনে দেওয়া হয় নয়তো রোপণ করতে হয় এদের চারা। আউশ ধান চৈত্র-বৈশাখে বুনে আষাঢ়-শ্রাবণে কাটা যায়। এ ধান সাধারণত শুকনো ঝুরঝুরে মাটিতে ধুইল্যা আবাদ করা হয়। মাটিতে জো থাকলে সুবিধা হয়। জো না থাকলে কালবৈশাখীতে জাওলা হয়। এরপর সুবিধা মত ভালো কুশির আশায় জমিতে মই দেয়া হয় গাছের গোড়া ছেঁটে বা পাতা ছিড়ে দেয়ার জন্য। যা অনেকটা ভরা খেতে মই দেয়ার মতো। এর ফলে গাছের ফাইটো-হরমোনে বৃদ্ধি ঘটে। ফলে সময়মতো প্রচুর কুশি হয়ে জমি ভরে যায়। আরেকভাবেও এটি হতে পারে। মাঝে মধ্যে জ্যৈষ্ঠ মাসের খরায় ধান মরে ছন হয়ে যায় কিন্তু গোড়া তাজা থাকে।
একটু বৃষ্টি পেলেই জমি আবার সবুজ ধানে ভরে যায়। আবাদে বৃষ্টি ছাড়া অতিরিক্ত পানির দরকার নেই। তাছাড়া সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। খরাসহিষ্ণু আউশের জাতগুলো এ কারণেই বিশেষভাবে পরিচিত। তবে আগাছার উপদ্রব থাকে বেশ। এ জন্য আঁচড়ার দরকার হয়। কোনো কোনো আউশ ধান নিজে থেকেই আগাছা দমন করার যোগ্যতা রাখে। এই হলো পকৃৃত আউশ ধান। একসময় সারা দেশে অনেক এলাকাজুড়ে এ ধানের আবাদ করা হতো।
পঁচাত্তর-আশি দিনের মধ্যে ধান পেকে যায়, তেমন জাতগুলো হলো-মুখী, পুসুর, দুলা, মরিচবটি, হাসিকলমী, হরিণমুদা, পটুয়াখালী এবং ধলা ষাইট্টা। পঁচাশি থেকে নব্বই দিনের মধ্যে পাকে, তেমন জাতগুলো হলো- ধারিয়াল, কুমারী এবং দুলার। নব্বই থেকে একশ দিনের মধ্যে ধান তোলা যায়, তেমন জাতগুলো হলো- কটকতারা, সূর্যমুখী, চালক, আটলাই, খাসিয়াপাঞ্জা। “পানবিরা” জাতটি একটু ব্যতিক্রম, যা পাকতে সময় লাগে প্রায় একশত পাঁচ দিন। গড়পড়তা এদের ফলন ছিল হেক্টর প্রতি ২.০০ টন থেকে ২.৩৫ টন পর্যন্ত। ব্যতিক্রম ছিল কেবল কটকতারা, যার এর হেক্টর প্রতি ফলন ছিল ৩.৩৫ টন।
ধানবিজ্ঞানী ড. জি.পি. হেক্টরের (১৯১১-এর কিছু পরে এ হিসাব করা হয়) মতে, এ দেশে একসময় ১৮ হাজার জাতের ধান আবাদ হতো। বাংলাদেশে নানা ধরনের আউশের জাত পাওয়া যেত। এদের নামও ছিলো বিচিত্র ধরনের। কিষাণীর মনকাড়া পকৃৃতি, গাছপালা, পাখি কিংবা মানুষের নাম জুড়ে দিয়েও রাখা হয়েছে কোন কোন আউশ ধানের জাতের নাম। বাংলাদেশ কৃষি বিভাগ বিগত কয়েক বছর যাবত আউশের বিভিন্ন জাত জনপ্রিয় করণের লক্ষ্যে প্রণোদনা দিচ্ছে। ২০১৫ সালে ৩০ কোটি ২১ লক্ষ টাকা এবং ২০১৬ সালে ৩৩ কোটি ৬২ হাজার টাকার প্রণোদনা সুবিধা প্রান্তিক চাষীদের দেয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) আউশ ধানের চাষাবাদ করা হচ্ছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কৃষক সহিদার রহমান বলেন, তার নিজের ৩৫ শতক জমিতে শীতকালে গম আবাদ হতো। এবার কৃষি বিভাগের উৎসাহে এবং জেলা কৃষি অফিসের দেয়া প্রশিক্ষন নিয়ে আউশ ধানের আবাদ করেছি।
লালমনিরহাট কৃষি অফিসার বিধু ভুষন রায় জানান, অল্প সময় এবং লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এই ধান চাষে আগহী হচ্ছে। এদিকে সরকার আউশ চাষে প্রণোদনা হিসেবে আগ্রহী একজন কৃষককে বিঘাপ্রতি ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি এমওপি, ১০ কেজি ডিএপি ও ২০ কেজি করে ইউরিয়া সার এবং ৫০০ টাকা দিয়েছে।/খবর৭১/জি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here