ঢাকার কেন্দ্রে অবস্থিত সচিবালয় এলাকা মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের পদত্যাগ, শিক্ষা সচিবকে অপসারণ, এবং এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতসহ একাধিক দাবিতে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করলে শুরু হয় উত্তপ্ত পরিস্থিতি।
বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে সচিবালয়ের এক নম্বর গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ রয়েছে, তারা ভেতরে রাখা অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। সংঘর্ষে আহত হয়ে অন্তত ৮৫ জন শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন।
পূর্বপ্রসঙ্গ হিসেবে উল্লেখযোগ্য যে, দিয়াবাড়িতে জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের দাবি ওঠে। অথচ সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয় গভীর রাতে—সে সময় অনেক পরীক্ষার্থী তা জানতে না পেরে সকালে কেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। শিক্ষার্থীরা বিষয়টিকে দায়িত্ব অবহেলা হিসেবে দেখছেন এবং এই ঘটনার দায় নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ দাবি করছেন।
সচিবালয়ের সামনের তিন নম্বর ফটকে প্রথমে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা একে একে সব ফটক বন্ধ করে ফেলে। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভে অংশ নেয়—এর মধ্যে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, সিটি কলেজ, আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ, কমার্স কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, নূর মোহাম্মদ কলেজ ইত্যাদি।
ছাত্রদের অভিযোগ, গত রাতে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা ফেসবুকে দেওয়া হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি, যা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ এবং অব্যবস্থাপনার প্রমাণ।
একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়ায় আশপাশের এলাকাও উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। গুলিস্তান ও জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে এই সংঘর্ষ। বিকেল পৌনে ৬টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ বজায় ছিল।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তত ৬৬ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের অনেকেই কাঁদুনে গ্যাসে অসুস্থ হয়েছেন কিংবা লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন—আশিক, রাকিবুল হাসান, আসাদ আহমেদ, আফসানা, মুগ্ধ, অন্তর, শাকিল, শাওন, তানসিন, সিয়াম, মাহিম, রেদোয়ান ইসলাম, হাসিব ও নেহাল প্রমুখ।
এদিকে শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা এলেও শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। শিক্ষার্থীরা জানান, তারা শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তারা চেষ্টা করছেন সবদিক নিরাপদ রাখতে।
এই আন্দোলন কেবল শিক্ষা প্রশাসনের উপর আস্থা সংকট নয়, বরং সাম্প্রতিক সময়ের বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন।