গুমের ঘটনা নিয়ে হরর মিউজিয়াম গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

0
33

 

গুমের ভয়াবহতা তুলে ধরতে হবে, হরর মিউজিয়াম গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গুম ও বেআইনি নিরুদ্দেশ ঘটনার ভয়াবহতা তুলে ধরতে একটি ‘হরর মিউজিয়াম’ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এসব ঘটনা এতটাই মর্মান্তিক ও বীভৎস যে, তা মানুষের সামনে তুলে ধরা দরকার- যেন ইতিহাস জানে, সচেতনতা গড়ে ওঠে এবং ভবিষ্যতে যেন এমন না হয়।”

বুধবার (৪ জুন) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী রিপোর্ট গ্রহণ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “কি ভয়ংকর, গা শিউরে ওঠার মতো একেকটি কাহিনি! আমাদের পরিচিত, সমাজের ‘ভদ্রলোকেরা’ এসব করেছে- নিজেরাই আত্মীয়-পরিজন, প্রতিবেশী, সহকর্মীদের গুম করে ফেলেছে।”

তিনি বলেন, “তিন ফুট বাই তিন ফুট একটি খুপড়িতে মানুষ মাসের পর মাস আটকে ছিল – এ অভিজ্ঞতা মানুষের সামনে তুলে ধরা জরুরি। এসব ঘটনাকে আর্কাইভ করতে হলে একটা হরর মিউজিয়াম থাকা দরকার।”

প্রতিবেদনে উঠে আসা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

গুম কমিশনের কাছে এখন পর্যন্ত ১,৮৫০টি অভিযোগ জমা পড়েছে।
এর মধ্যে ১,৩৫০টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে।
তিন শতাধিক ব্যক্তি এখনও নিখোঁজ, যাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানা যায়নি।
বর্তমানে আইন অনুযায়ী ৭ বছর নিখোঁজ থাকলে মৃত ঘোষণা করা যায়। কমিশন এই সময়সীমা ৫ বছরে নামিয়ে আনার সুপারিশ করেছে।
নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার যেন ব্যাংকে লেনদেন, সম্পত্তি হস্তান্তর ও আইনি সুবিধা পায়- সে বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, “এই প্রতিবেদন শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। তাই একে ওয়েবসাইট ও বই আকারে প্রকাশ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “কোন সুপারিশ কোন মন্ত্রণালয়ের আওতায় পড়ে- তা চিহ্নিত করে দিন। যাতে সরকার দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন শুরু করতে পারে।”

কমিশনের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, “আপনারা ভয়-ভীতি, হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে কাজ করছেন- এটা এই দেশের মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা। ভবিষ্যতের মানবাধিকার কর্মীরা আপনাদের দেখেই শিখবে।”

কমিশনের সদস্যরা জানান, কিছু ঘটনার ভয়াবহতায় অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারাও অনুশোচনায় ভুগছেন। এমনকি কেউ কেউ নিজেদের দায় স্বীকার করে লিখিত চিঠিও দিয়েছেন। একজন সদস্য বলেন, “এই চিঠিগুলো গণভবনে জমা আছে। তৎকালীন সেনাপ্রধান নিজেও এ বিষয়ে জনসম্মুখে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।”
প্রতিবেদন জমা দেন গুম তদন্ত কমিশনের সভাপতি সাবেক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন কমিশনের সদস্য নূর খান*, সাজ্জাদ হোসেন, নাবিলা ইদ্রিস এবং উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, এবং প্রশাসনের আরও শীর্ষ কর্মকর্তারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here