হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

0
55

হজ ইসলামি শরিয়তের অন্যতম স্তম্ভ ও ফরজ ইবাদত। ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)

হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ৮ জিলহজ থেকে। তাঁবুর নগরী খ্যাত মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে। পরদিন ৯ জিলহজ অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র হজ। এ বছর সেই দিনটি হলো ১৫ জুন, শনিবার। আরাফায় অবস্থানই হলো হজের মূল রোকন। এজন্য হজের এই দিনকে আরাফার দিনও বলা হয়। ১২ জিলহজ পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন যথানিয়মে হজের কার্যক্রম চলবে। এই পাঁচদিন হাজিরা যা যা করবেন, তা পাঠকদের জ্ঞাতার্থে নিচে তুলে ধরা হলো।

৮ জিলহজের আগের কাজ
১. মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধবেন। (ইহরাম বাঁধার জন্য হাদিস দ্বারা নির্ধারিত কাবা শরিফের চারদিকের নির্দিষ্ট স্থানগুলোকে মিকাত বলা হয়)

২. কাবা ঘরে ওমরার তাওয়াফ করবেন।

৩. সাঈ করবেন।

৪. চুল কেটে হালাল হয়ে যাবেন।

৮ জিলহজের (তারউইয়্যার দিনের) কাজ
১. নিজ বাসস্থান থেকে ইহরাম বেঁধে হজের নিয়ত করে সূর্যোদয়ের পর মিনায় রওনা হবেন, যেন জোহরের আগে মিনায় পৌঁছতে পারেন। সেখানে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের সালাত আদায় করবেন। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এখানে আদায় করা মোস্তাহাব এবং ততক্ষণ এখানে অবস্থান করা সুন্নত।

৯ জিলহজের (আরাফার দিনের) কাজ
১. সূর্যোদয়ের পর আরাফাতের ময়দানে রওনা হবেন। (এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তথায় অবস্থান করা হজের অন্যতম রোকন। সকালে মিনা থেকে রওনার সময় তাকবির বলবেন-‘আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওআল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর, ওয়া লিল্লাহিল হামদ’)

২. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে হজের খুতবা শুনবেন এবং নিজ নিজ তাবুতে জোহরের প্রথম ওয়াক্তে জোহর ও আসর পড়বেন একত্রে পরপর দুই দুই রাকআত করে।

৩. সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ না পড়েই মুজদালিফায় রওনা করবেন। মাগরিব-এশা সেখানে গিয়ে (এক আজানে আলাদা আলাদা ইকামতে একসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে) পড়বেন।

৪. মুজদালিফায় রাত যাপন করে ফজর পড়বেন প্রথম ওয়াক্তে অন্ধকার থাকতেই।

৫. আকাশ ফরসা হওয়া পর্যন্ত কেবলামুখী হয়ে হাত তুলে দীর্ঘসময় দোয়া ও মোনাজাতে মশগুল থাকবেন।

৬. বড় জামরায় নিক্ষেপের জন্য ৭টি কঙ্কর এখান থেকে কুড়াতে পারেন।

১০ জিলহজের (ঈদের দিনের) কাজ
১. বড় জামরায় ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। (তা জোহরের আগেই সম্পন্ন করবেন)

২. কঙ্কর নিক্ষেপের পরে মিনায় কোরবানি করবেন।

৩. চুল কাটাবেন। অতঃপর ইহরামের কাপড় বদলিয়ে সাধারণ পোশাক পরে ফেলবেন। (মাথা ন্যাড়া করে হজের ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার মাধ্যমে সাধারণ কাজ করতে পারলেও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে)

৪. তাওয়াফে ইফাদা (তাওয়াফে জিয়ারত) করবেন। এদিন না পারলে এটি ১১ বা ১২ তারিখেও করতে পারবেন এবং এরসঙ্গে সাঈও করবেন। (তাওয়াফে জিয়ারত বা ইফাদা হলো হজের মুল তাওয়াফ, যা বাদ পড়লে হজ সম্পন্ন হবে না। আর ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে তাওয়াফে জিয়ারত না করতে পারলে দম বা কোরবানি কাফফারা আদায় করতে হবে।)

১১ জিলহজের (আইয়ামে তাশরিক ১ম দিন) কাজ
১. দুপুরের পর সিরিয়াল ঠিক রেখে প্রথমে ছোট, মধ্যম ও এরপরে বড় জামরায় প্রত্যেকটিতে ৭টি করে কংকর নিক্ষেপ করবেন।

২. মিনায় রাত্রি যাপন করবেন।

১২ জিলহজের (আইয়ামে তাশরিক ২য় দিন) কাজ
১. পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী ৩টি জামরায় ৭+৭+৭=২১টি কংকর নিক্ষেপ করবেন। দুপুরের আগে কংকর নিক্ষেপ করবেন না।

২. সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করবেন। তা না পারলে দিবাগত রাতও মিনায় কাটাবেন।

১২ জিলহজের (আইয়ামে তাশরিক ৩য় দিন) কাজ
১. যারা গত রাত মিনায় কাটিয়েছেন তারা আজ দুপুরের পর পূর্ব দিনের নিয়মেই ৭টি করে মোট ২১ টি কংকর মারবেন। অতঃপর মিনা ত্যাগ করবেন।

বিদায়ী তাওয়াফ
সর্বশেষ ফেরার আগে বিদায়ী তাওয়াফ করবেন।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর ৭ জিলহজ হাজিদের উদ্দেশ্যে মসজিদে হারামে হজের নিয়মাবলী ও করণীয় সম্পর্কে বয়ান পেশ করা হয়। তাই এই বয়ান শোনা হাজিদের জন্য উপকারী। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজের মূল পাঁচ দিন উল্লেখিত কাজগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। সকল হাজিকে হজে মাবরুর নসিব করুন। আমিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here