হাসপাতালের ওটি থেকে জমজ বাচ্চা গায়েব!

0
76

খবর৭১ঃ
রাজশাহীর বেসরকারি রয়্যাল হাসপাতাল থেকে এক প্রসূতির জমজ বাচ্চা (নবজাতক) গায়েবের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারী প্রসূতির নাম সৈয়দা তামান্না আখতার। স্বামী পিয়াস সুইডেন প্রবাসী। রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারীতে বাড়ি।

প্রসূতির অভিযোগ, প্রসব বেদনা নিয়ে তিনি ১৮ মে বৃহস্পতিবার বিকালে নগরীর লক্ষীপুরের ডাক্তার পট্টির রয়্যাল হাসপাতালে যান। চিকিৎসকের পরামর্শে সেখানে ভর্তি হন। বিকালে সাড়ে ৩টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয় তাকে। এক ঘণ্টা ওটিতে রেখে প্রসূতিকে বের করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা স্বজনদের জানান, প্রসূতির পেটে কোনো বাচ্চা ছিল না।

প্রসূতি তামান্না আখতারের স্বজনরা বলেন, তামান্নার পেটে জমজ বাচ্চা ছিল। আগে দুবার করা আল্ট্রাসনোগ্রামে তা শনাক্ত হয়। তাদের বাচ্চা চুরি করা হয়েছে। শুক্রবার স্বজনরা মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন আরএমপির রাজপাড়া থানায়।

অভিযোগ পেয়ে পুলিশ শুক্রবার রাতে রয়্যাল হাসপাতালসহ অপারেশন থিয়েটারে অভিযান চালিয়েছেন। তবে কোনো বাচ্চা উদ্ধার হয়নি। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার তল্লাশি করে পুলিশ সেখান থেকে বিদেশি মদের কয়েকটি বোতল উদ্ধার করেছেন বলে জানা গেছে।

রাজপাড়া থানা পুলিশ আরও জানায়, তারা রোগীর ফাইলটা এখন খুঁজছেন। কিন্তু সেটি হাসপাতালে তল্লাশি করে পাননি। ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের পরিচালক, মালিক ও ম্যানেজার কাউকে তারা পাচ্ছেন না। তারা গা ঢাকা দিয়েছেন।

রাজশাহীর বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মিলে গত কয়েক বছর আগে লক্ষীপুর মোড়ে রয়্যাল হাসপাতালটি চালু করেন।

প্রসূতি সৈয়দা তামান্না আখতার পুলিশের কাছে দেওয়া মৌখিক অভিযোগে বলেছেন, আমি ৯ মাস ১২ দিনের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। এটি আমার প্রথম প্রেগনেন্সি ছিল। স্বামী সুইডেনে থাকেন। গত ১৮ মে দুপুরের পর প্রসব বেদনা উঠে। স্বজনরা তাকে রয়্যাল হাসপাতালে নিয়ে যান।

এর আগেও আমি কয়েকবার চেকআপ করেছি। তখন আল্ট্রাসনোগ্রামে আমার পেটে দুটি বাচ্চা থাকার বিষয়টি শনাক্ত হয়। গত ১৮ মে বিকালে ভর্তির পর রয়্যাল হাসপাতালে আমার আগের পেসেন্ট ফাইলসহ টাকা জমা করি। আমার ব্যথা তীব্র ছিল। কিছুক্ষণ পর আমাকে ওটিতে নিয়ে ইনজেকশন দেওয়া হয়।

প্রসূতির আরও অভিযোগ, ওটিতে নেওয়ার পর ডাক্তার-নার্সরা আমার সঙ্গে রহস্যজনক আচরণ করতে থাকেন। ওটিতে থাকা একজন ডাক্তার আমাকে বারবার বলছিলেন, এদিকে তাকান ওদিকে তাকান। এরপর আমার পুরো শরীরে বড় ঝাঁকুনি ও ব্যথা আসে। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি একটি বিশেষ কক্ষে। আমার বাচ্চা কোথায় জানতে চাইলে স্বজনরা বলেন, আমার পেটে নাকি কোনা বাচ্চাই ছিল না। ডাক্তাররা তাদেরকে এটা বলেছেন।

এই প্রসূতি আরও বলেন, আমার যদি মৃত বাচ্চা হয়ে থাকে সেটাও আমাদের দেওয়া হোক। তার আরও অভিযোগ, নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে তার বাচ্চা বের করে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।

প্রসূতি সৈয়দ তামান্না আখতারের শাশুড়ি তাহেরা বিশ্বাস বলেন, বউমাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়ার পর তারা নবজাতকের জন্য নতুন কাপড়ও কিনে নিয়ে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরই নার্সরা সেগুলো ফিরিয়ে দিয়ে যায়। তারা আমাদের বলেন, রোগীর প্রেসার বেশি। ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। এখন ঘুমাচ্ছেন। প্রেসার কমলে অপারেশন করা হবে। তার কিছুক্ষণ পরই আমার মেয়ে ওটিতে গিয়ে দেখে বউমার পেট নেমে গেছে। আগের মতো উঁচু নেই।

তাহেরা বিশ্বাস আরও বলেন, হাসপাতালে আনার সময় বউমার রক্ত ভাঙছিল। বাচ্চা হওয়ার আগে প্রত্যেক নারীর যা হয়। বাচ্চা প্রসবের বেদনা ছিল। ওটি থেকে বের করার পর দেখি কোনো সিজার করা হয়নি। তিনি প্রশ্ন করেন, তাহলে বউমার উঁচু পেট নামল কীভাবে? বাচ্চা যদি নাই থাকে তাহলে তারা ওটিতে নিয়ে গেলেন কেন? আমাদের বাচ্চা গেল কোথায়? আমাদের বাচ্চা গায়েব করে দিয়ে এখন তারা বলছেন, পেটে নাকি বাচ্চাই ছিল না। এটা অবিশ্বাস্য ঘটনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রয়্যাল হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট ডা. আলী চৌধুরী রিমন শুক্রবার রাতে পুলিশ ও উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, হাসপাতালে আনার সময় রোগীর অবস্থা গুরুতর ছিল। তিনি রোগীর স্বজনদের কাছে শুনেছেন পেটে দুটি বাচ্চা আছে। প্রথমে তারও মনে হয়েছে পেটে বাচ্চা আছে। তাই তিনি অজ্ঞান করার নিয়মানুযায়ী রোগীকে অ্যানেস্থেসিয়া করেন। এরপর তিনি আর কিছু জানেন না। শনিবার দুপুরে খোঁজ করতে গেলে ডা. আলী চৌধুরী রিমনকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। তার ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে রয়্যাল হাসপাতালের গাইনোকোলজিস্ট ও অপারেশানাল ডা. নিশাত আনাম বর্ণা বলেন, একজন নারী প্রেগনেন্সির সব সিম্পটম নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। তাকে পরীক্ষা করার আগেই তার তীব্র বেদনা ওঠে। কিন্তু তিনি রোগীর হিষ্ট্রি ফাইল দেখতে পারেননি। রোগীর ফাইল স্বজনরা তাকে দেননি। এই রোগী আগে তার কাছে কোনো পরামর্শ নেননি। এর বেশি তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

তবে তামান্না আখতারের শাশুড়ি ডাক্তারের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ডা. নিশাত ওটিতে যাওয়ার আগে পেশেন্ট ফাইল হাতে নিয়েছিলেন। ওটির সব ডাক্তার ও নার্সরা পেশেন্ট ফাইল দেখেছেন। এখন তারা মিথ্যা বলছেন। রোগীর ফাইল না দেখে তারা কীভাবে প্রসূতিকে ওটিতে নিয়ে গেলেন। কেন অজ্ঞান করলেন?

আরএমপির রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজল নন্দী বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে একটি মৌখিক বক্তব্য পেয়েছেন পুলিশ। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেছি। এখন তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।

তবে ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের পরিচালক মালিক ও ম্যানেজার পলাতক আছেন। তবে রয়্যাল হাসপাতালের উদ্যোক্তাদের একজন ডা. আসগর হোসেন শনিবার দুপুরে যুগান্তরকে বলেন, আমি শুক্রবারে ওমরাহ করে দেশে ফিরেছি। আমি ঘটনার বিস্তারিত কিছু জানি না। উদ্যোক্তা পরিচালকরা মিলে মিটিং করে পুরো ঘটনাটি আমরা খতিয়ে দেখব। তারপর বিস্তারিত বলতে পারব কি ঘটনা ঘটেছে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রসূতি সৈয়দা তামান্না আখতার শনিবার বিকালে এ প্রতিবেদন লেখার সময় রয়্যাল হাসপাতালের একটি বিশেষ কেবিনে ভর্তি ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বলে দাবি করেছেন স্বজনরা। তামান্না আখতার শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here