যুদ্ধ শুরুর আগে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন পুতিন

0
156

খবর৭১ঃ
যুদ্ধের শুরুতে ন্যাটোতে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে কিয়েভের সঙ্গে একটি অস্থায়ী চুক্তি করেছিলেন ইউক্রেনে থাকা ভ্লাদিমির পুতিনের প্রধান দূত। কিন্তু পুতিন সেই চুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তার সামরিক অভিযান চালিয়ে যেতে চাপ দিয়েছিলেন। পুতিনের ঘনিষ্ঠ তিন সূত্রের বরাত দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সূত্রগুলো জানায়, ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি কোজাক পুতিনকে বলেছিলেন, তার ধারণা তিনি যে চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তা ইউক্রেনের বৃহৎ আকারের দখলদারিত্বের জন্য রাশিয়ার যে প্রয়োজনীয়তা সেটি দূর করেছে।

যুদ্ধের আগে পুতিন বারবার জোর দিয়ে বলেছিলেন, ন্যাটো এবং এর সামরিক অবকাঠামো পূর্ব ইউরোপ থেকে নতুন সদস্যদের অন্তর্ভূক্ত করার মাধ্যমে রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি চলে আসছে। জোটটি এখন ইউক্রেনকেও তাদের জোটে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুতিন প্রকাশ্যে বলেছিলেন, প্রক্রিয়াটি রাশিয়ার অস্তিত্বের জন্য হুমকির। তাই তিনি প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হবেন।

সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানায়, যুদ্ধের আগে আলোচনাকে সমর্থন করা সত্ত্বেও পুতিন কোজাকের চুক্তি উপস্থাপন করার সময় স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলেন, তার সহযোগীর মাধ্যমে করা সমঝোতা বেশি দূর আগায়নি। তাই তিনি ইউক্রেনের ভূখণ্ডের অংশীদারিত্ব অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তার উদ্দেশ্যগুলিকে প্রসারিত করেছেন। যার কারণেই মূলত চুক্তিটি বাদ দেওয়া হয়েছিল।

রয়টার্সের অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই। এমন কোনো ঘটনা কখনো ঘটেনি। এটা একেবারেই ভুল তথ্য।’

ক্রেমলিন কোজাককে এ ব্যাপারে বলার অনুরোধ করলে তিনি তার জবাব দেননি।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক বলেছেন, রাশিয়া তার আক্রমণের প্রস্তুতির জন্য আলোচনাটিকে একটি স্মোকস্ক্রিন হিসাবে ব্যবহার করেছিল।

তবে প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছেন কিনা তিনি তা নিশ্চিত করেননি।

পোডোলিয়াক বলেন, ‘আজ, আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি রাশিয়ান পক্ষ কখনোই শান্তিপূর্ণ মীমাংসা করতে আগ্রহী ছিল না।’

তিনটি সূত্রের মধ্যে দুটি জানিয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণের পরপরই চুক্তিটি বাস্তবায়ন করতে চাপ দেওয়া হয়েছিল। কোজাকের ধারণা, রাশিয়া যে প্রধান শর্তগুলি ইউক্রেনকে দিয়েছেলি তিনি সেই অনুযায়ীই চুক্তিটি করেছিলেন এবং পুতিনকে চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য সুপারিশও করেছিলেন।

রুশ নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এমন একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ‘২৪ ফেব্রুয়ারির পর কোজাককে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। তাকে চুক্তির ব্যাপারে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। তাকে চুক্তির ব্যাপারে সব কিছু পরিষ্কার করে বুঝাতে বলা হয়েছিল। পরে সব কিছু বাতিল করা হয়। পুতিন কেবল তার পরিকল্পনা করেছেন এবং এগিয়েছেন।’

তৃতীয় সূত্র এই ঘটনা সম্পর্কে জানতেন এবং তাকে কোজাক-পুতিনের আলোচনা সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, পুতিনকে চুক্তির প্রস্তাব করেছিলেন কোজাক। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।

পুতিন কোজাকের পরিকল্পনায় রাজি হলেও, যুদ্ধ শেষ হবে কিনা তা অনিশ্চিত রয়ে গেছে। তবে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি বা তার সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই চুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন কিনা রয়টার্স তা যাচাই করতে পারেনি।

১৯৯০ এর দশকে সেন্ট পিটার্সবার্গের মেয়র অফিসে পুতিনের সঙ্গে কাজ করার পর থেকে তার অনুগত লেফটেন্যান্ট ছিলেন ৬৩ বছর বয়সী কোজাক। শান্তি চুক্তিটি নিয়ে আলোচনার যোগ্য ছিলেন কোজাক। কারণ ২০২০ সা্ল থেকে পুতিন তাকে পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল সম্পর্কে ইউক্রেনীয় সমকক্ষদের সঙ্গে আলোচনা পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

ফ্রান্স এবং জার্মানির মধ্যস্থতায় ১০ ফেব্রুয়ারি বার্লিনে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় রাশিয়ান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়ার পর গভীর রাতে একটি সংবাদ সম্মেলনে কোজাক বলেছিলেন, এই আলোচনার সর্বশেষ রাউন্ডটি কোনো অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে৷

আক্রমণের তিন দিন আগে, পুতিন রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের জন্য ক্রেমলিনের ইয়েকাটেরিনস্কি হলে তার সামরিক ও নিরাপত্তা প্রধান এবং মূল সহযোগীদের একত্রিত করার সময় কোজাকও উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বৈঠকের কিছু অংশ রেকর্ড করেছে, যেখানে পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী সত্তাকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন।

রাশিয়ান নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ তিনজনের মধ্যে দুজন বলেন, বৈঠকের মাঝখানে একবার টিভি ক্যামেরাগুলিকে পুতিনের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। তখন ইউক্রেন সঙ্গে পরিস্থিতি বাড়ানোর জন্য যে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন কোজাক।

আক্রমণ-পরবর্তী আলোচনায় সহায়তাকারী এক ব্যক্তির বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, মার্চের শুরুতে আলোচনা ভেঙ্গে পড়ে যখন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে পুতিন বড় আকারের আক্রমণের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর।

যুদ্ধ শুরুর ছয় মাস পর, কোজাক ক্রেমলিনের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে তার পদে বহাল রয়েছেন। তবে তিনি আর ইউক্রেন ডসিয়ার পরিচালনা করছেন না বলে ছয়টি সূত্র রয়টার্স কে জানিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here