সেই শিক্ষক দম্পতির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় মামলা

0
146

খবর ৭১: গাজীপুরে প্রাইভেট কার থেকে শিক্ষক দম্পত্তির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) রাতে নিহত এ কে এম জিয়াউর রহমানের মেজ ভাই আতিকুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

নিহতরা হলেন- গাজীপুরের টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম জিয়াউর রহমান (৫০) ও তার স্ত্রী মোসা. মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫)। তিনি টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন। জিয়াউর রহমান ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার দড়িকাঁঠাল এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ভোররাতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক এলাকায় প্রাইভেট কার থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে স্বজনরা। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটনের গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নন্দলাল চৌধুরী জানান, এ ঘটনায় নিহত জিয়াউর রহমানের মেজ ভাই বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শাফি মোহাইমেন জানান, নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দুজনের ফুসফুস ও কিডনিতে জমাট রক্ত পাওয়া গেছে। এটা খাবারে বিষক্রিয়া বা অন্য কারণেও হতে পারে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। তাদের শরীরের বিভিন্ন নমুনা ঢাকায় সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও নিহতদের স্বজনরা জানায়, ইতোপূর্বে গাজীপুরের কালীগঞ্জের পুনসই হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন জিয়াউর রহমান। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। তার স্ত্রী মোসাম্মৎ মাহমুদা আক্তার জলি টঙ্গী আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সপরিবারে গাছা থানার কামারজুরি এলাকার নিজ বাড়িতে থাকতেন। ব্যক্তিগত গাড়িতে করে দুজনেই স্কুলে যাওয়া-আসা করতেন। বুধবার স্কুল শেষে সহকর্মী ও সম্পর্কিত মামাতো ভাই মো. কামরুজ্জামানকে গাড়িতে তুলে নিয়ে জিয়াউর রহমান তার স্ত্রী জলির স্কুলে যান। সেখান থেকে স্ত্রী জলিকে গাড়িতে তুলে বাসার উদ্দেশে রওনা হন। পথে কামরুজ্জামানকে নামিয়ে দেন। জিয়াউর রহমানের ছেলে মিরাজ বুধবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাবার মোবাইলে কল দেন। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তার মায়ের মোবাইলে ফোন দিলে বাসায় আসছেন বলে জানান। এরপর থেকে ফোনে তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। পরে তারা গাছা থানা, টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করেন। রাতভর তারা বিভিন্ন জায়গায় তাদের খোঁজ করেন। এক পর্যায়ে ভোররাতে দক্ষিণ খাইলকৈর বগারটেক এলাকা থেকে ওই গাড়ির ভেতর চালকের আসনে জিয়াউর রহমান ও পাশেই তার স্ত্রীর মাহমুদা আক্তার জলির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রথমে তাদের তায়রুন্নেছা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে উত্তরার একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত জিয়াউর রহমানের বড় ভাই মো. রিপন বলেন, হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত। তাদের সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন কিছুই খোয়া যায়নি। ঘটনাটি যদি পরিকল্পিত নাই হতো তাহলে টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল ও গাড়ি নিয়ে যেত। তার কিছুই হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here