প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রভাবশালীরা চালাচ্ছে অবৈধ করাত কল

0
335

স্টাফ রিপোটার,বাগেরহট

বাগেরহাটের চিতলমারীতে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রভাবশালীরা অবৈধ করাত কল (স্-মিল) চালাচ্ছেন। খোদ উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় এগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও তাঁরা তা কর্ণপাত করছেন না। সরকারি নিয়ম না মেনে স্থানীয় বিত্তবানরা এ উপজেলার যত্রতত্র প্রায় অর্ধশত করাত কল গড়ে তুলেছেন।

পরিবেশ ও বন বিভাগের ছাড়পত্র এবং লাইসেন্স ছাড়াই তাঁরা সরকারি স্কুল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সদর বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কের আশেপাশে এ মিল গুলো স্থাপন করেছেন। ফলে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। ঘটছে নানান দূর্ঘটনা। পাশাপাশি সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছেন।

গত ১৭ জানুয়ারী উপজেলা মাসিক আইন শৃংখলা কমিটির সভার রেজুলেশনে জানা গেছে, কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা নিজেই অবৈধ করাত কল বন্ধের বিষয়টি সভায় উত্থাপন করেন। প্রয়োজনে এদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালানার কথাও উল্লেখ করেন। কিন্তু তারপরও অবৈধ করাত কলের প্রভাবশালী মালিকরা তাঁদের মিল বন্ধ করেনি। বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের অবৈধ করাত কল।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় প্রায় অর্ধশত করাত কাল রয়েছে। যার মধ্যে হাতেগোনা দু/চারটি মিলের বৈধ কাগজপত্র বা লাইসেন্স রয়েছে। করাত-কল (লাইসেন্স) বিধিমালা-২০১২ আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, কোন ব্যক্তি লাইসেন্স ব্যতীত কোন করাত-কল স্থাপন বা পরিচালনা করতে পারবেন না।

স্কুল শিক্ষক মো. সাফায়েত হোসেন, খড়মখালী গ্রামের জাফর সরদার, ব্রহ্মগাতি গ্রামের পরিমল তরফদার, জিন্নাত আলী মীর, কুরমনির মিঠুন বিশ্বাস, সুরশাইলের মুন্না শেখ ও পাটরপাড়ার রুহুল আমিন বিশ্বাসসহ অনেকে জানান, উপজেলার ব্রহ্মগাতী, বাখরগঞ্জ বাজার, সদর বাজার, বাবুগঞ্জ বাজার, নালুয়া বাজার, শৈলদাহ বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ করাত কল। কোনটি ভাঙা টিনের ঘরে, কোনটির আবার নেই ছাউনি। নেই কোন দূর্ঘটনা প্রতিরোধের ব্যবস্থাও। অরক্ষিত পরিবেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠ শ্রমিকরা এসব মিলে কাজ করেন। এসব স’মিল মালিকদের নিকট থেকে গোপনে মাসোহারা নেওয়া হতে পারে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। যার কারণে অবৈধ জেনেও এদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়না।

এ ব্যাপারে ব্রহ্মগাতি গ্রামের একটি করাত কলের মালিক মো. ইসলাম শেখ বলেন, আমার করাত কলের কোন লাইসেন্স বা কাগজপত্র নেই। এ জন্য মাঝে মধ্যে লোকজন এসে টাকা নিয়ে যায়। কই কেউতো মিল বন্ধ করতে বলেনি।

চিতলমারী উপজেলা বন কর্মকর্তা অমল কৃষ্ণ বাইন বলেন, অবৈধ করাত কল থেকে বন বিভাগের লোকের টাকা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। এ উপজেলায় প্রায় অর্ধশত করাত কল রয়েছে। এরমধ্যে হাতেগোনা দু/চারটির বৈধ কাগজপত্র আছে।

বাগেরহাট জেলা সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম সজ্জাদ হোসেন বলেন, অবৈধভাবে মিল স্থাপন বা পরিচালনা করার কোন সুযোগ নেই। অবৈধ মিলের তালিকা প্রস্তুত করে বিদ্যুৎ বিভাগকে দিয়েছি এবং লাইন বিচ্ছিন্ন করার জন্য বলেছি। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়ে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কার্যক্ষেত্রে মামলা এবং জরিমান করা হচ্ছে। আমাদের এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তবে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা সাংবাদিকদের বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে আলোচনা করেছি। তাঁরা (অবৈধ ‘স’ মিল মালিক) যদি দ্রুত সময়ে মধ্যে লাইসেন্স গ্রহণ না করে তাহলে তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে মিল বন্ধ করে দেয়া হবে।

বাগেরহাটে খাল থেকে অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহ উদ্ধার

বাগেরহাটের রামপালে খাল থেকে (৫৭) বছর বয়সী অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্দার করেছে পুলিশ । শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় রামপাল উপজেলার দূর্গাপুর খাল থেকে মেরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহতের মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া মরদেহটির গায়ে লালশার্ট ছিল, কিন্তু পরনে কোনো কাপড় ছিল না। তার মুখে দাড়ি ছিল। মরদেহের শরীরে কোনো আঘাতে চিহ্ন ছিল না বলে জানিয়েছেন রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সামছুদ্দিন।
তিনি বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা নিহতের মরদেহ উদ্ধার করেছি। এ বিষয়ে রামপাল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, বাগেরহাটের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নিহতের পরিচয় শনাক্ত করতে পিবিআই কাজ শুরু করেছে। নিহতদের মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

বাগেরহাটে ইজিবাইকের ধাক্কায় বৃদ্ধা নিহত, আহত-১

বাগেরহাটের মোল্লাহাটে ইজিবাইকের ধাক্কায় পথচারী সুরতী বেগম (৭০) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের দেড়বোয়ালিয়া এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহত সুরতী বেগম উপজেলার গাংনী ইউনিয়নের মাতারচর গ্রামের মৃত পাচু শেখের স্ত্রী।এঘটনায় ইজিবাইকের যাত্রী মালেক মোল্লা (২০) আহত হয়েছেন। আহত মালেক মোল্লাকে স্থানীয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন । মালেক মোল্লা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের ফুলমিয়া মোল্লার ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, সুরতী বেগম সন্ধ্যা ৭ দিকে খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের দেড়বোয়ালিয়া এলাকায় রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এমন সময় মোল্লাহাট থেকে ছেড়ে আসা যাত্রী বোঝাই একটি ইজিবাইক তাকে পেছন দিক থেকে ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুত্বর আহত হয়। এসময় ইজিবাইকের যাত্রী মালেক মোল্লা ও রাস্তায় পড়ে আহত হন। স্থানীয়রা আহত দুজনকে উদ্বার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে ১৫ মিনিট পর সুরতী বেগম মারা যান।

মোল্লাহাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ আবুল হাসান জানান, আমরা নিহত বৃদ্ধার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। ঘাতক ইজিবাইকটিকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ছাত্রলীগ নেতার দাবী তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার

বাগেরহাটের চিতলমারীতে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর দেওয়ার কথা বলে অর্থ দাবীর অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২৫ ফেব্রয়ারী) দুপুরে বড়বাড়িয়া ইউনিয়নের ঘোলা গ্রামের মোতালেব শেখের স্ত্রী আম্বিয়া বেগম বাদী হয়ে ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছেন বলে জানিয়েছেন। তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রাজিব শিকদার ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবী করেছেন।

অভিযোগপত্রে জানা গেছে, উপজেলার বড়বাড়িয়া ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর হতদরিদ্র-ভূমিহীনদের দেওয়ার বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাইকে পুঁজি করে ঘোলা গ্রামের আব্দুর রউফ শিকদারের ছেলে ও বড়বাড়িয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাজীব শিকদার ঘর দেওয়ার কথা বলে একই গ্রামের আম্বিয়া বেগমের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবী করেন। আম্বিয়া বেগম টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে ঘর দেওয়া হবেনা বলে মোবাইল ফোনে জানানো হয়। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে রাজিব শিকদারের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে আম্বিয়া বেগম বলেন, রাজিবের টাকা চাওয়ার বিষয়টি আমি এক সাংবাদিককে জানাই। তিনিই আমাকে থানায় অভিযোগ করতে বলেছেন।

টাকা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে রাজিব শিকদার বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ও সাংবাদিক নেতার সাথে আমার বিরোধ রয়েছে। তাঁর লোক কমিটিতে আসতে পারেনি। তাই আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রবিন হীরা বলেন, অভিযুক্ত রাজিব শিকদার বড়বাড়িয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। অভিযোগ কারো নামে হতেই পারে। টাকা চাওয়ার বিষয়টি প্রমানিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বড়বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদ সরদার বলেন, বিষয়টি ইউএনও স্যার আমাকে জানিয়েছেন। আমরা খোঁজ-খবর নিয়েছি। ঘটনার রং লাগিয়ে তিলকে তাল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে চিতলমারী থানার পরিদর্শক (ওসি) এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে অর্থ চাওয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব।

তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইয়েদা ফয়জুন্নেচ্ছা সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে বড়বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদ সরদারকে বলেছি। আগামীকাল সরেজমিনে গিয়ে যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাগেরহাটে মাদকসেবীদের আগুনে পুড়ল কৃষকের বসতঘর !


বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে মাদকসেবীদের ছুড়ে ফেলা আগুনে এক কৃষকের বসতঘর পুড়ে ছাই হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে একশত মন ধানসহ প্রায় ৩ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন সানকিভাঙ্গা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত খলিল ফরাজী। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।

ক্ষতিগ্রস্থরা বলেন, ঘটনার সময় ৩-৪ জন যুবক ঘর সংলগ্ন খড়ের গাঁদার পাশে মাদক সেবনের আসর জমায়। কিছুক্ষণ পরে ওই খড়ের গাঁদায় আগুন লেগে যায়। সেখান থেকে মুহুর্তের মধ্যে আগুন পৌছে যায় খলিল ফরাজীর বসত ঘরে। এ সময় আগুন থেকে ছোট ভাই, বোন ও মাকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত হয়েছেন মিরাজ ফরাজী(২৫)। খবর পেয়ে মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়।

পর্যটক দেখলেই ছুটে আসে বানরের দল, বদলে যাচ্ছে খাদ্যাভ্যাস

সুন্দরবনে বাঘ ও হরিণের পরই সুন্দরবনের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বানরবাঘ ও হরিণের পরই সুন্দরবনের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বানর । ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। বাঘ ও হরিণের পরই এ বনের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বানর। সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্যকে আলিঙ্গন করে রেখেছে এই প্রাণী। চলতি শীত মৌসুমে ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রগুলো পর্যটকদের পদচারণায় মুখর। সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্র তার মধ্যে অন্যতম। পর্যটকদের দেখলেই এখানে খাদ্য খেতে দল বেঁধে ছুটে আসে বানর। এ সময় পর্যটকরা বানরদের চিপস, সফট ড্রিংকসসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার খাইয়ে থাকেন। শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এই পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেলো এমন চিত্র।

তবে এতে খাদ্যভ্যাস বদলে যাচ্ছে সুন্দরবনের বানরদের। ফলে সুন্দরবনের বানর আর আগের মতো গাছের ফল, কচিপাতা বা কাঁকড়া ধরে খাচ্ছে না। এই অভ্যাস বদলের ফলে বানরের উৎপাতে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হওয়া ছাড়াও বিপজ্জনক আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন সেভ দ্য সুন্দরবনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, মানুষের এত কাছাকাছি থাকায় বানরদের মধ্যে নানা ধরনের রোগ সংক্রমণ হওয়ার আশষ্কা থেকে যাচ্ছে। যা গভীর জঙ্গলে মহামারির মতোই ছড়িয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে গোটা সুন্দরবনেরই পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হবে, সেটা বলাই বাহুল্য। এছাড়া বানরের খাদ্যাভ্যাস বদলে যাওয়াতে প্রাকৃতিক স্থিতি কিছুটা নষ্ট হচ্ছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, সুন্দরবনে বানরের দল যেমন গাছ থেকে গাছে লাফিয়ে বেড়ায়, তেমনই জমিতে তাদের সঙ্গে সঙ্গে চলে হরিণের দল এবং অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীরা। কারণ বানর গাছে উঠে যত ফল বা পাতা খায়, তার চেয়ে বেশি ফল-পাতা নিচে ফেলে। গাছের তলায় হরিণেরা সেসব কুড়িয়ে খায়। কিন্তু বানরের সঙ্গে হরিণের ঘুরে বেড়ানোর আরও একটা কারণ আছে। বাঘ শিকার ধরতে এলে গাছের উঁচু ডালে বসা বানর সবার আগে দেখতে পায় এবং চিৎকার করে সবাইকে সতর্ক করে দেয়, তাতে সাবধান হয়ে যায় হরিণের দলও। ফাস্ট ফুডের লোভে বানরের দল জঙ্গল ছাড়া হওয়ায় এই চিরাচরিত নিয়ম ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ট্যুরিস্ট রিসোর্ট হয়তো বন্ধ করা যাবে না, কিন্তু তাদের উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলাকে নিয়মে বাঁধতে হবে। ঢাকা পাত্রে উচ্ছিষ্ট ফেলে প্রতিদিন নিয়ম করে সেটা পরিষ্কার করতে হবে। আর পর্যটকদের বানরকে খাবার দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আচরণবিধি না মানলে শাস্তি বা জরিমানা করতে হবে। এখনই সাবধান না হলে এক ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে সুন্দরবন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের হরিণ, বানর, শূকর, উদবিড়াল বা ভোঁদড়ের সবশেষে শুমারি হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। ওই শুমারির তথ্য অনুযায়ী, বনে বানর আছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার।

সুন্দরবনে আসা পর্যটক রবিউল ইসলাম ও হাফিজুর রহমান বলেন, করমজল পর্যটন কেন্দ্রে ঢোকার সময় আমাদের সঙ্গে রুটি ও চিপস ছিল। এ সময় কয়েকটি বানর দল বেঁধে এসে ছোঁ মেরে খাবার নিয়ে যায়।

তবে এই বানরের উৎপাতের কারণ তাদের খাদ্য সংকট এ কথা বলতে নারাজ পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির। তিনি বলেন, ‘বন্যপ্রাণী সবসময় লবন জাতীয় খাবার পছন্দ করে। এখানে যখন পর্যটকরা আসেন তারা ওই সব প্রাণীদের খাবার তুলে দেন। এ কারণে কোনও কোনও পর্যটককে আক্রমণ করে বসে এসব বানর।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here