রাজিব আহমেদ, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)প্রতিনিধি:
ঈদ মানে খুশি,ঈদ মানে, আনন্দ আনন্দ আর খুশিতে হারিয়ে যাওয়া একটি দিনের নামই হচ্ছে ঈদ। কিন্তু ঈদের কোন আনন্দ ছিল না সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর সদরের ছয়আনিপাড়া গ্রামে বজ্রপাতে নিহত কলেজ ছাত্র কিশোর নাবিল খান (১৭)এর পরিবারে।
দেশব্যাপী আনন্দঘন পরিবেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হলেও ঈদের কোনো আমেজই ছিল না নিহত নাবিলের পরিবারে। সন্তান হারানোর কষ্টে, অশ্রুজল চোখে বেদনা ভারাক্রান্ত হ্নদয়ে উৎসবের দিনটি পার করেছে তারা। ঈদের আনন্দ নয় যেন, গত বছরের নাবিলের নানা স্মৃতি কাতর এ ভাবিয়ে তুলেছে পরিবারের সদস্যদেরকে।
প্রতিবেদক ঈদের দিন সরজমিনে গিয়ে দেখে পরিবারটিতে নেই কোনো ঈদের আমেজ,আনন্দ। আছে শুধুই হাহাকার, অশ্রুসিক্ত সরব-নিরব কান্না। নাবিলের মৃত্যুর প্রায় দুই মাস হতে চললেও পরিবারটিতে এখনো শোকের ছায়া বিরাজ করছে।পরিবারের সবার ছোট আদরের সেই নাবিলকে হারানোর ব্যাথা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি কেউ। হঠাৎ
বজ্রপাতের ঘটনায় এই পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া।
ছেলেকে হারিয়ে পরিবারের লোকেরা এখন পাগলপ্রায় ।নাবিল না থাকায় এবার ঈদের নতুন জামা- কাপড়ও কেনেনি তারা। বাবা-মা শুধুই নাবিলের স্মৃতিকেই খুজে বেড়াচ্ছেন সবখানে।
নাবিলকে বাড়ির পাশেই নিজ পারিবারিক কবরস্থানেই সমাহিত করা হয়েছে।প্রতিবেশীরা জানায় এখনো প্রতিদিন সন্তানের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অঝোর ধারায় কান্না করতে দেখা যায় নাবিলের মা-বাবাকে। ভাগ্যের এই লিলা খেলায় মা-বাবার আগেই অকালেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছে কোলের সন্তান নাবিল।
নাবিলের মা এই প্রতিবেদককে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ঈদ কিভাবে উদযাপন করবে, কি কি খাবে সব পরিকল্পনা আগে থেকেই করেছিল আমার বুকের ধন। প্রতি বছর যে নাবিল ঈদের নামাজ শেষে ঘরে ফিরে সালামির জন্য খুশিতে উদ্ব্যেলিত হয়ে পরত,সে ছেলে আজ অন্ধকার কবরের বাসিন্দা। তিনি আরো বলেন, উঠতে বসতে সবখানে শুধু নাবিলের কথাই মনে হয়। আর হবেই না কেন,নাবিলের স্মৃতি পুরো বাড়ি জুড়েই। এবার ঈদে নাবিল সুন্দর টুপি,সাদা পাঞ্জাবী পরে ঈদের নামাজ পড়তে চেয়েছিল। কিন্তু আমার কলিজার টুকরো সন্তান নাবিলের সে আশা আর পূরণ হলো না। মা হয়ে কেমনে ছেলেকে ছাড়া ঈদ করব বল বাবা ?এ বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন নাবিলের মা।
জানা যায়, সকাল থেকেই ছেলেহারা মা খাওয়া -দাওয়া করেনি। পুত্রহারা এই মায়ের ঈদের আনন্দ যেন বেদনাময় এক অধ্যায়। নাবিলের বাবা বলেন, নাবিলকে নিয়ে আমরা সবাই
একসাথে ঈদের নামাজ আদায় করতাম।কিন্তু আজ নাবিলকে ছাড়াই ঈদের নামাজ পড়তে হয়েছে। আমার আবার কিসের ঈদ? আমার সন্তান নাই, আমার ঈদও নাই। এ কথা বলতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। এ ব্যাপারে নাবিলের মেজো ভাই তরুণ সাংবাদিক নিহাল খান এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের পরিবারে ঈদ বলে কিছু নেই। এইরকম ঈদ যেন কোনো
পরিবারের না কাটে।
আমাদের তিন ভাই এর মধ্যে সবার আদরের ছিল নাবিল।প্রতি ঈদেই উচ্ছ্বাসে মেতে থাকতো নাবিল।প্রতি ঈদে যে ভাই এর সাথে আনন্দ করি, আজ সে নাই শুয়ে আছে অন্ধকার কবরে, তাই আমাদের বাড়িতে ঈদ নাই। নাবিলের বড় ভাই নাট্যকর্মী নাহিন বলেন, নাবিল আমার খুব আদরের ছিল।ঈদের দিন মায়ের হাতের রান্না খুব পছন্দ করত। নাবিল মারা যাওয়ার পর এখন পরিবারের কেও ঠিকমত খায় না। তিনি আরো বলেন, আর্জেন্টিনা ফুটবল দল ও মেসি ভক্ত ছিল নাবিল। বিশ্বকাপের প্রত্যেকটি খেলাই নাবিলের সাথে হৈ -হুল্লোড় করে দেখতাম। ইতিমধ্যে বিশ্বকাপ খেলা শুরু হয়েছে কিন্তু নাবিল নেই। প্রতি ঈদে যে নাবিল, হাসি আনন্দে মাতিয়ে রাখতো পরিবারের সবাইকে । অথচ,এই প্রথম নাবিলকে ছাড়াই নিরানন্দে ঈদ করতে হলো পরিবারকে ।এবার পরিবারের ঈদের দিন কাটলো শুধুই চোখের জ্বলে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ শে এপ্রিল মর্মান্তিক বজ্রপাতে অকালেই প্রাণ হারায় ফুটফুটে কিশোর ও ছাত্রলীগ এর একনিষ্ঠকর্মী ক্রিকেটার নাবিল (১৭)। তার এই অকাল মৃত্যুতে বিষাদপুর্ণ হয়ে গেছে পরিবারের সবার ঈদ আনন্দ। আর শুধু
পরিবারই নয়, বন্ধুবান্ধব প্রতিবেশীরাও তাদের প্রিয় নাবিলকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে,প্রতিবেশীরা ঈদের নামাজ শেষে নাবিলের বাড়ি গিয়ে সমবেদনা জানায়। এবার ঈদে ছয়আনিপাড়া গ্রামেও কোনো ঈদের আনন্দের ছাপ ছিল না। একরাশ কষ্ট বুকে চেপে কষ্টের ভাগিদার যেন পাড়া প্রতিবেশীরাও।
খবর৭১/এস: