রেদোয়ান হোসেন জনি, মিরসরাই প্রতিনিধিঃ
বৌদ্ধদের অন্যতম জাতীয় ও ধর্মীয় উৎসব দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দানোৎসব মিরসরাইয়ে উদযাপিত হয়েছে। উপজেলার ১৪ নং হাইতকান্দি ইউনিয়নের দমদমা-নবাবপুর ধর্মকীর্তি বৌদ্ধ বিহার আয়োজিত দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয় এই উৎসবকে ঘিরে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সমবেত বন্দনা ও প্রদীপ পূজা, সান্ধ্যাকালীন ফেরী ও রাতে বুদ্ধা কীর্তনের আয়োজন করা হয়। পরদিন শুক্রবার প্রথম পর্বে ভোরে বিশ্বশান্তি কামনায় ত্রিপিটক থেকে সূত্রপাঠ, শান্তি শোভাযাত্রা, সকালে পূজনীয় ভিক্ষুসংঘের প্রাতরাশ, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, দমদমা-নবাবপুর এলাকার প্রয়াত ভিক্ষুসংঘ ও বিহারের পরলোকগত উপাসক-উপসিকাদের পারলৌকিক নির্বাণ শান্তি কামনায় অষ্টপরিষ্কারসহ সংঘদান করা হয়। এসময় পাথরঘাটা মহাবোধি বৌদ্ধ বিহার কমপ্লেক্স ও ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ লোকানন্দ মহাথেরোর সভাপতিত্বে উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম-মিরসরাই-সীতাকুন্ড বৌদ্ধ ভিক্ষু সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবকীর্তি ভিক্ষু। মঙ্গলাচরণ করেন দমদমা-নবাবপুর ধর্মকীর্তি বৌদ্ধ বিহারের আবাসিক শাক্যজ্যোতি ভিক্ষু। প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন হালিশহর নৈরঞ্জনা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ জ্ঞানরত্ন মহাথেরো। প্রধান জ্ঞাতি গহিরা কোতয়ালী ঘোনা জ্ঞানোদয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প্রিয়ানন্দ মহাথেরো। প্রধান ধর্মদেশক উখিয়া পাতাবাড়ি আনন্দ ভবন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাবোধি মহাথেরো। বিশেষ অতিথি গুইমারা দেওয়ানপাড়া বৌদ্ধ মিশন বিহার অধ্যক্ষ ও পরিচালক সংঘরত্ন মহাথেরো, সীতাকুন্ড পান্থশালা সার্বজনীন শ্মশান বিহারের অধ্যক্ষ সুভদ্রজ্যোতি থেরো। এছাড়া প্রথম পর্বের আয়োজনে ছিল পূজনীয় ভিক্ষুসংঘকে পিন্ডদান ও জিনকীর্তি শ্রামণের শুভ উপসম্পদা। দ্বিতীয় পর্বের আয়োজন ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ধর্মমিত্র মহাস্থবিরের সভাপতিত্বে উদ্বোধন করেন দমদমা-নবাবপুর ধর্মকীর্তি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ বিশ্বনাগরিক ড. ধর্মকীর্তি মহাথেরো। মঙ্গলাচরণ করেন দমদমা-নবাবপুর ধর্মকীর্তি বৌদ্ধ বিহারের আবাসিক সংঘকীর্তি থেরো। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন দমদমা-নবাবপুর ধর্মকীর্তি বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি ও হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক পুষ্পেন্দু বড়ুয়া। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহবুব রহমান রুহেল। বিশেষ অতিথি ছিলেন মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ১৪ নং হাইতকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন। বিশেষ সদ্ধর্মদেশক ছিলেন অক্সিজেন ত্রিরত্ন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শান্তবোধি মহাথেরো, বৌদ্ধ মিশন টিভির পরিচালক বিজয়ানন্দ থেরো, বাড়বকুন্ড বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সত্যজিৎ থেরো, বায়েজিদ শান্তিকুঞ্জ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ইন্দ্রবংশ থেরো, মায়ানী দক্ষিণ পাড়া মহাশ্মশান ভাবনা কেন্দ্রের পরিচালক আসীন বুদ্ধ রক্ষিত থেরো। তৃতীয় পর্বে ফানুস উত্তোলন, আতশবাজী উৎসব ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি ঘটে। দুইদিনব্যাপী আয়োজনের সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন দমদমা-নবাবপুর বৌদ্ধ বিহার সেবা কমিটির সভাপতি এডভোকেট শান্তি বিকাশ বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক বাবলু বড়ুয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহবুব রহমান রুহেল বলেন, বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুদের মাঝে কঠিন চীবর দান করা হয়। বুদ্ধ এর মতে কঠিন চীবর দানের সাথে অন্যকোন দানের তুলনা হয় না। কঠিন চীবর দান সমাজে ত্যাগের শিক্ষা দেয়। এই উৎসবকে ঘিরে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ আনন্দ ভাগাভাগি করে। শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে সকল ধর্মের মানুষ যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে নির্বিঘ্নে ধর্মাচার পালন করতে পারে।