খবর ৭১: ঢাকা: সেবা খাতে দুর্নীতির শিকার হচ্ছে প্রায় ৭১ শতাংশ খানা (পরিবার)। ২০২১ সালে সার্বিকভাবে খানা প্রতি গড়ে ৬ হাজার ৬৩৬ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা জরিপ করেছি তথ্যদাতাদের মতামতের ভিত্তিতে। তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জরিপ করা হয়েছে। তথ্যদাতাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আপনি অমুক খাতে থেকে সেবা নিয়েছেন কিনা? যদি উত্তর দিয়েছেন ‘না’, তখন আর তাদের কোনো প্রশ্ন করা হয়নি। উত্তর যারা ‘হ্যাঁ’ দিয়েছেন তাদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মোটা দাগে বলতে গেলে মিশ্র ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। কোনো কোনো খাতে দুর্নীতি বেড়েছে আবার কমেছে। সেবা খাতের দুর্নীতি উদ্বেগজনক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। সেবা গ্রহীতাদের প্রায় ৭১ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, সেবা গ্রহীতাদের দুর্নীতির শিকার হওয়ার মাত্রা বেড়েছে। দুর্নীতি বলতে বুঝায় ঘুষ, জোরপূর্বক অর্থ আদায়, প্রতারণা, স্বজনপ্রীতি ও দায়িত্বের অবহেলার বিষয়। এসব কিছু মিলিয়ে দুর্নীতি সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। দুর্নীতির হার বেড়ে এখন ৭০.৯ শতাংশ হয়েছে।
টিআইবির জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশের সেবা খাতে জাতীয় পর্যায়ে প্রাক্কলিত মোট ঘুষের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৮৩০ দশমিক ১ কোটি টাকা, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের (সংশোধিত) ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এই ঘুষের পরিমাণ বাংলাদেশে জিডিপির শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।
জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালে ১৭টি খাত বিবেচনায় সার্বিকভাবে ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ খানা দুর্নীতির শিকার হয়েছে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত সাতটি খাত হলো— আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা (৭৪.৪%), পাসপোর্ট অধিদপ্তর (৭০.৫%), বিআরটিএ (৬৮.৩%) বিচারিক সেবা (৫৬.৮%), স্বাস্থ্যসেবা (৪৮.৭%), স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান (৪৬.৬%) এবং ভূমি সেবা (৪৬.৩%)।
টিআইবির তথ্যমতে, ২০২১ সালে সার্বিকভাবে খানা প্রতি গড়ে ৬ হাজার ৬৩৬ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে মানুষ। সর্বোচ্চ ঘুষ আদায়ের তিনটি খাত হলো—বিমা, বিচারিক ও গ্যাস সেবা।
সংস্থাটি আরও জানায়, সার্বিকভাবে ২০১৭ সালের তুলনায় সেবা খাতে দুর্নীতির শিকার খানার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে যেখানে দুর্নীতির শিকার খানার হার একই খাত বিবেচনায় পাওয়া গিয়েছে ৭০.৮%, ২০১৭ সালে এই হার ছিল ৬৬.৫%। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থের হার কমেছে কিন্তু ঘুষ আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে। অপরদিকে অন্যান্য অনিয়ম-দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে সেবা খাতে দুর্নীতি বেড়েছে। বিভিন্ন খাতে ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও কোনো কোনো সেবা খাতে তা পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় দুর্নীতি একই অবস্থায় রয়েছে (আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, পাসপোর্ট, বিআরটিএ)। কিছু খাতে দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে (স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, এনজিও, বিমা)।
এছাড়া ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২১ সালে কোনো কোনো খাতে ঘুষের শিকার খানার হার বেড়েছে (স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান) এবং কোনো কোনো খাতে কমেছে (কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা)।