মুখের লাইকেন প্ল্যানাস: কারণ ও চিকিৎসা

0
246

খবর৭১ঃ লাইকেন প্ল্যানাস ত্বক ও মিউকাস মেমব্রেনের একটি কমন ক্রনিক প্রদাহজণিত রোগ। ওরাল লাইকেন প্ল্যানাস সাধারণত গালের অভ্যন্তরে বাক্কাল মিউকোসাতে বেশি দেখা যায়। এছাড়া মাড়ি, জিহ্বা এবং মুখের অন্যান্য অংশেও হতে পারে। মাঝে মাঝে ওরাল লাইকেন প্ল্যানাস গলা পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে থাকে।

আর অন্য দিকে ত্বকে লাইকেন প্ল্যানাস সাধারণত দুই হাতের রিস্ট বা কব্জি এবং পায়ের হাঁটুর নিচের সম্মুখ ভাগের হাড় টিবিয়ার শিনের উপরিভাগের ত্বকে দেখা যায়।

আক্রান্ত স্থান : আক্রান্ত স্থান সাধারণত শরীরের উভয় দিকে হয়ে থাকে। আক্রান্ত স্থানে বেগুনি অথবা কালচে রঙের দাগ দেখা যায়। আর মুখের লাইকেন প্ল্যানাসের ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থান ক্রিস ক্রস ধরনের হয়ে থাকে। আবার বাক্কাল মিউকোসাতে সাদা সাদা দাগ দেখা যেতে পারে। বাক্কাল মিউকোসাতে লাইকেন প্ল্যানাস হলে সাধারণত গালের উভয় পাশেই দেখা যায়।

রোগের কারণ : লাইকেন প্ল্যানাস রোগে ইমমিউনো প্যাথোজেনেসিসের প্রমাণ রয়েছে যদিও দায়ী এন্টিজেন শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ইমমিউনো প্যাথোজেনেসিস বলতে শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ব্যবস্থা ব্যাহত হয় বোঝায়। কিছু ওষুধের কারণে লাইকেন প্ল্যানাসের মতো লিশন দেখা যায় যা লাইকেনয়েড রিঅ্যাকশন নামে পরিচিত। লাইকেনয়েড রিঅ্যাকশনের ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে শুধু সাদা স্ট্রাই দেখতে পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে হিস্টোলজিক্যাল ছবি পুরোপুরি রোগ নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট হয় না।

লাইকেন প্ল্যানাস অথবা লাইকেন প্ল্যানাসের মতো দেখতে অর্থাৎ লাইকেনয়েড রিঅ্যাকশনের সম্ভাব্য কারণগুলো : (ক) অ্যামালগাম ডেন্টাল ফিলিং (খ) ওষুধজণিত কারণ বিশেষ করে এনএসএ আইডি গোত্রভুক্ত ব্যথানাশক ওষুধ (গ) স্বর্ণ নির্মিত কোনো ডেন্টাল অ্যাপ্লায়েন্স (ঘ) ম্যালেরিয়া রোধকারী ওষুধ (ঙ) মিথাইল ডোপা জাতীয় ওষুধ (চ) অটোইমমিউন ডিসঅর্ডার (ছ) ক্যান্সারের ক্ষেত্রে (জ) এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত হলে (ঝ) বিটা ব্লকারস জাতীয় ওষুধ (ঞ) ওরাল হাইপোগ্লাইসেমিকস্ (ট) পেনিসিলামাইন জাতীয় ওষুধ (ঠ) কিছু ট্রাইসাইক্লিক জাতীয় বিষণ্নতানাশক ওষুধ (ড) থিয়াজাইড (ঢ) ডাইয়্যুরেটিকস্ (ণ) ক্যাপটোপ্রিল জাতীয় ওষুধ।

রোগীর ওষুধ সেবনের ইতিহাস : লাইকেন প্ল্যানাস হলে রোগীর চিকিৎসা দেয়ার সময় বা রোগ নির্ণয়ের সময় অবশ্যই রোগীর ড্রাগ হিস্ট্রি বা পূর্বের ওষুধ সেবন সম্পর্কে জানতে হবে যেহেতু ওষুধের কারণে লাইকেন প্ল্যানাস অথবা লাইকেনয়েড রিঅ্যাকশান হতে পারে। তাই রোগী কি ওষুধ খাচ্ছে বা খেয়েছিল তা অবশ্যই জানতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর ওষুধ পরিবর্তন করে দিলে অবস্থার উন্নতি দেখা যায়।

লাইকেন প্ল্যানাসের রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা : লাইকেন প্ল্যানাসের সুনির্দিষ্ট রোগ নির্ণয় অবশ্যই বায়োপসির মাধ্যমে করতে হবে। তবে লাইকেন প্ল্যানাসের সঙ্গে হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাসের যোগসূত্র রয়েছে। তাই টিস্যু কেটে বায়োপসি করার আগে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করে দেখে নেয়া উচিত রোগীর হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস আছে কিনা।

যদি রোগী হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস পজেটিভ হয়ে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে ভাইরাসের চিকিৎসা অবশ্যই প্রদান করতে হবে। হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস মানুষের লালাতে পাওয়া যায়। ইরোসিভ লাইকেন প্ল্যানাস পরীক্ষা করার সময় অবশ্যই হ্যান্ড গ্লোভস্ পরিধান করতে হবে। কারণ যিনি পরীক্ষা করবেন তার হাতে যদি কোনো ক্ষত বা কাটা থাকে আর হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস যদি কোনোভাবে রক্তের সংস্পর্শে আসে তবে পরীক্ষাকারীর শরীরে হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস সংক্রমিত হবে।

প্রকৃত অর্থে হ্যান্ড গ্লোভস্ পরা ছাড়া মুখের অভ্যন্তরে কোনো রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা ঠিক নয়। লাইকেন প্ল্যানাস রোগের চিকিৎসায় ভিটামিন ‘ডি’ দেয়া যেতে পারে। মসলাজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। রোগীর এলকোহল সেবন করার অভ্যাস থাকলে তা বর্জন করতে হবে। লাইকেন প্ল্যানাস রোগীদের আক্রান্ত স্থানে স্থানীয়ভাবে প্রয়োগকারী স্টেরয়েড সমৃদ্ধ সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। অতিমাত্রায় সংক্রমণের ক্ষেত্রে এন্টিফাংগাল ওষুধ সেবন করতে হবে। লাইকেন প্ল্যানাস হলে আপনার অবশ্যই সুচিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে লাইকেন প্ল্যানাস থেকে স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা বা ক্যান্সার হতে পারে। আপনি চিকিৎসা যদি না করেন তাহলে লাইকেন প্ল্যানাস দীর্ঘ সময় ধরে আপানার মুখে অবস্থান করতে পারে। অন্যান্য মুখের আলসারের মতো লাইকেন প্ল্যানাস চিকিৎসা ছাড়া একটি সময় পর ভালো হয়ে যায় না। তাই কোনোভাবেই এটিকে অবহেলা করবেন না। ওষুধ সেবনের সময় ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। ভুল ওষুধ সেবনের কারণে লাইকেন প্ল্যানাস অথবা লাইকেনয়েড রিঅ্যাকশান হতে পারে। পাশপাশি হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here