সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সৈয়দপুরে স্বামী, শ্বশুর ও দেবর মিলে যৌতুকের পাঁচ লাখ টাকার জন্য এক গৃহবধূকে শারীরিক অত্যাচার-নির্যাতন ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ প্রভাষক মেরিনা মান্নান মেরি নিজে বাদী হয়ে গত রোববার রাতে সৈয়দপুর থানায় ওই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় স্বামী মো. জোবায়দুল ইসলাম বাবু (৪১), শ্বশুর খায়রুল বাশার (৬৫) এবং দেবর মো. শামীম উদ্দিনকে (৩০) আসামী করা হয়েছে।
এদিকে, শ্বশুর বাড়ির লোকজনের মারপিটে গুরুতর আহত গৃহবধূ মেরিনা মান্নান মেরি গত রোববার সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়ে তিন দিন চিকিৎসাসেবা শেষে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
থানায় দায়েরকৃত মামলায় আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষনপুর ডাঙ্গারহাটের আব্দুল মান্নানের মেয়ে মেরিনা মান্নান মেরির সঙ্গে গত ২০০৮ সালে একই ইউনিয়নের চৌমুহনী বাড়াইশালপাড়ার খায়রুল বাশারের ছেলে মো. জোবায়দুল ইসলাম বাবু’র বিয়ে হয়। তাদের সংসার জীবনে মুহতাদী আবীদ মাহীন (১১) ও মো. আয়ান (৩) নামে দুইটি ছেলে সন্তান রয়েছে। গৃহবধূ মেরিনা মান্নান মেরি বর্তমানে লক্ষণপুর স্কুল এন্ড কলেজে জীববিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক পদে কর্মরত রয়েছেন।
মামলার আরজিতে অভিযোগে বলা হয়, বিয়ের পর থেকে স্বামী জোবাদুল ইসলাম বাবু তাঁর বাবা ও ভাইয়ের প্ররোচনায় যৌতুকের ৫ লাখ টাকার জন্য স্ত্রী মেরিকে নানা রকম চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। কিন্তু গৃহবধূ মেরি তাঁর বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা আনতে অস্বীকৃতি জানান। আর এতে তাঁর স্বামী প্রায় তাকে মারপিট করাসহ বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার নির্যাতন করে আসছিলেন। কিন্তু তারপরও গৃহবধূ মেরি তাঁর অবুঝ দুইটি শিশু সন্তানের মুখে দিকে চেয়ে স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের শত অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে স্বামীর ঘর সংসার করছিলেন। কিন্তু এরই মধ্যে গৃহবধূ মেরির স্বামী বাবু পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়ে পড়েন। বিষয়টি গৃহবধূ মেরি অবগত হয়ে স্বামীকে এ নিয়ে অনেক বাঁধা নিষেধ করেন। আর এরই জের ধরে স্বামী বাবু গত ৫ এপ্রিল বিকেল ৩টায় মেরি কলেজ থেকে বাড়িতে ফেরা মাত্র তাঁর সঙ্গে অহেতুক ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয় এবং বেদম মারপিট করে বাড়িতে থেকে বেরিয়ে যান। এর পর থেকে তিনি আর বাড়িতে আসেননি। পরবর্তী সময়ে গত ১৬ এপ্রিল মোবাইলে গৃহবধূর স্বামী বাবুর হুমুক পেয়ে শ্বশুর ও দেবর মিলে তাঁর ওপর চড়াও হয়ে এলোপাতাড়ি মারডাং করে তাকে আহত করে। সেই সঙ্গে যৌতুকের টাকা না দিয়ে স্বামীর বাড়িতে স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখ-শন্তিতে বসবাস করতে দিবে না হুমকি প্রদর্শন করে। সেই সঙ্গে কলেজের চাকরি থেকে অব্যহতি না নিলে তাকে মিথ্যা বদনাম দিয়ে সংসার ছাড়া করবে বলেও জানায়। এ অবস্থায় গৃহবধূ নিরূপায় হয়ে জরুরী সেবা ৯৯৯ ফোন দেন। পরবর্তীতে সৈয়দপুর থানা পুলিশ গৃহবধূর স্বামীর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে তাঁর মায়ের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত রোববার হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে সৈয়দপুর থানায় গিয়ে স্বামী, শ্বশুরসহ তিনজনকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সৈয়দপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল হাসনাত খান। তিনি বলেন, মামলাটি তদন্তের জন্য থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো তৈুমর ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।