গরু আছে, ক্রেতা নেই

0
398
পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার নির্দেশ

খবর৭১ঃ ‘বাজারের গতি ভালো ঠেকতাছে না মামা। আল্লাহ জানে কপালে কী আছে। গরু নিয়া বইসা আছি। কাস্টমার নেই। কেউ অহনও পর্যন্ত দাম জিজ্ঞাসা করেনি।’ কথাগুলো বলছিলেন, চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম বৃহৎ পশুর বাজার বিবিরহাটের গরুর ব্যাপারী আশরাফ শেখ।

মাগুরার শ্রীপুর থেকে ৩০টি গরু নিয়ে মঙ্গলবার হাটে এসেছেন তিনি। সবগুলোই হৃষ্টপুষ্ট দেশি গরু। নিজস্ব খামারে পালন করা।

দাম দেড় লাখ থেকে শুরু করে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। তার মতো আরও অনেক ব্যাপারী লাভের আশায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাক বোঝাই করে গরু-ছাগল নিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন কোরবানির হাটে এসেছেন। এসব ব্যাপারীর কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। মুখে একটাই প্রশ্ন- বাজারে ক্রেতা আসবে তো?

এবার কোরবানি উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীতে তিনটি স্থায়ী ও চারটি অস্থায়ীসহ মোট সাতটি হাট বসেছে। তিনটি স্থায়ী হাট হল- সাগরিকা, বিবিরাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের হাট।

স্থায়ী হাটগুলো হল- নূরনগর হাউজিং সোসাইটি মাঠ, কমলমহাজন হাট, বাটারফ্লাই টিকে গ্রুপ মাঠ ও সল্টগোলা মাঠ। সবগুলো হাটেই পশু আসতে শুরু করেছে। বিক্রেতারা বসে আছেন ক্রেতার আশায়। তবে ক্রেতা নেই বললেই চলে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর এমন সময়ে ক্রেতা-বিক্রেতা আর পশুতে ঠাসা ছিল হাটগুলো। এবার হাটে পশুও আসছে দেরিতে। ক্রেতারও দেখা নেই।

করোনা আতঙ্কে এবার ক্রেতারা কিছুটা হাটবিমুখ। কেউ কেউ অনলাইনে কিংবা সরাসরি বিভিন্ন খামারে গিয়ে গরু কিনছেন। তাই বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি কম।

কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হলেও তা পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। মাস্ক ছাড়াই বিক্রেতারা হাটে অবস্থান করছেন। প্রবেশমুখে হাত ধোয়া কিংবা স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও নেই হাটগুলোতে।

শুক্রবার সরেজমিন বিবিরহাটে দেখা যায়, মাঝারি ও বড় মিলিয়ে ২ শতাধিক গরু উঠেছে। সামনের কাতারগুলো গরুতে ভর্তি। কিন্তু পেছনের দিকের কাতারগুলো এখনও খালি।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা ট্রাক বোঝাই করে গরু আনছেন। সেই তুলনায় ক্রেতা নেই। এখানে-ওখানে অলস বসে আছেন ব্যাপারীরা।

গরু ব্যাপারী আশরাফ শেখ বলেন, মাগুরা থেকে দুই ট্রাক গরু আনতে খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। বিক্রি না হলে এসব গরু ফেরত নিয়ে যেতে ট্রাক ভাড়া যাবে আরও ১ লাখ টাকা।

গরুর সঙ্গে আসা ১৫ জন লোকের খাওয়া খরচ হচ্ছে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা করে। এছাড়া প্রতিটি গরুকে খাওয়াতে হচ্ছে ৩০০ টাকার খাবার। গরু বিক্রি না হলে জানে মারা যাব।

একই হাটে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দামের একটিসহ মোট ১৮টি বড় আকারের গরু এনেছেন মাগুরার আরেক ব্যাপারী লোকমান শিকদার।

তিনি বলেন, ‘বাজার গত বছরের চেয়ে খারাপ। গত বছর এই হাটে গরু এনে লাভ করেছিলাম। সেই আশায় এবারও এলাম। কিন্তু ক্রেতা নেই। কী হবে বুঝতে পারছি না।’

কুমিল্লার তিতাস উপজেলা থেকে ২৭টি গরু নিয়ে হাটে আসা সেলিম ব্যাপারী জানান, দু’দিন আগে গরু এনেছেন। এখনও কোনো ক্রেতা আসেনি। কেউ দামও জিজ্ঞেস করেনি।

গত বছর এই বাজারে ২০০টি গরু বিক্রি করে ভালোই লাভ করেছিলেন। এবারও একইসংখ্যক গরু আনার পরিকল্পনা ছিল। তবে বাজারের অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন। আর গরু আনবেন না। যে ২৭টা এনেছেন তা বিক্রি করতে পারলেই স্বস্তি।

তিনি বলেন, ‘এবার গরুর দাম বাড়বে না। গত বছরের দামে বিক্রি করতে পারলেও ব্যবসায়ীরা বেঁচে যাবে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, গত বছরের মতো দাম পাওয়া যাবে না। কারণ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। ব্যবসা-বাণিজ্য নেই।’

হাটের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার সাবান ও স্যানিটাইজার রাখার কথা থাকলেও এই হাটে তা দেখা যায়নি। বিক্রেতাদের কয়েকজনের মুখে মাস্ক থাকলেও বেশির ভাগই মাস্ক পরেননি। প্রবেশমুখে কয়েকজনকে দেখা গেল ছাগল বিক্রি করতে।

ছাগলের জন্য হাটে প্রবেশ করাই কষ্টসাধ্য ছিল। তবে হাটের ভেতরটা অন্যান্য বছরের চেয়ে তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন দেখা গেছে।

বিবিরহাটের ইজারাদার আরিফুল ইসলাম জানান, হাটে গরু আসছে। এখনও ক্রেতা না এলেও তারা আশাবাদী দু-তিন দিন পর থেকে বেচাকেনা জমে উঠবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ নজর দিচ্ছি। ক্রেতা-বিক্রেতা ও কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত মাস্ক, স্যানিটাইজার ও স্প্রে মেশিনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে ৪০টি সিসিটিভি ক্যামেরা।’

নগরীর সাগরিকা পশু হাটের ইজারাদার সাইফুল হুদা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘উত্তরবঙ্গ থেকে গরু আসছে। দু-একটা বেচাকেনাও হচ্ছে। তবে হাট জমতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। যতদূর সম্ভব হাটে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here