খবর৭১ঃ ছোটদের মনোজগত বেজায় রঙীন। তার নাগাল আমরা বড়রা পাব না। কিন্তু ওই জগতেই নিত্য আনাগোনা মিকি মাউস, মিনি মাউস, টম, জেরি, ডোরেমন কিংবা ছোটা ভীমের। তাই তো কার্টুনের চরিত্ররা ছোটদের এত প্রিয় এবং কাছের। কার্টুন দেখার আসক্তি কমবেশি সব বাচ্চাদেরই থাকে। আসলে আজকের নিউক্লিয়ার পরিবারে বাচ্চাদের খেলার সাথির বড়ই অভাব। তাই ছোটদের একাকীত্বের সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায় কার্টুনের চরিত্ররাই। তাই বাচ্চা যদি মাঝেমধ্যে কার্টুন দেখার জন্য বায়না করে তাতে অসুবিধার কিছু নেই। কিন্তু দেখতে হবে কার্টুন দেখা যেন বাচ্চার নেশা হয়ে না দাঁড়ায়। মাত্রাতিরিক্ত কার্টুন কিন্তু বাচ্চাদের নানা রকম ক্ষতি করে। যে সব বাচ্চারা খুব বেশি কার্টুন দেখে দেখা গেছে কার্টুনেরই কোনও চরিত্র তাদের ভীষণ প্রিয় হয়ে ওঠে। অনেকসময় বাচ্চারা নিজেদেরকেই ওই চরিত্র হিসেবে ভাবতে শুরু করে। কার্টুন চরিত্রের মতো হাবভাব করে, কার্টুনের মতো করে কথা বলে। জোর করে পড়তে বসালেও মন পড়ে থাকে কার্টুনের দিকে। কখনও কখনও কার্টুনে দেখা কোনও বিপজ্জনক স্টান্ট করার চেষ্টা করে। এরকম ক্ষেত্রে কিন্তু সাবধান হওয়া দরকার। না হলে নেশা ক্রমশ বাড়তেই থাকবে। তবে শুধুমাত্র কড়া শাসন কিংবা নিয়ম জারি করলেই চলবে না। বাচ্চা কার্টুন ছাড়াও অন্য নানা বিষয়ে যাতে উৎসাহী হয়ে ওঠে সেদিকে নজর দিকে হবে।
বাচ্চারা কার্টুন দেখবেই। তাই টিভি দেখা পুরোপুরি বন্ধ করার চেষ্টা না করে সন্তানের সঙ্গে একটা চুক্তি করে নিন। দিনের একটা সময় ঠিক করে দিন যখন ও কার্টুন দেখতে পারবে। খেয়াল রাখুন যেন সে নিয়মিত পড়তে বসে এবং পড়ার সময় কোনোভাবেই যেন টিভির কাছে না যায়। ছুটির দিনে একটুআধটু ছাড় দেওয়া যেতেই পারে। তবে আপনাকেও ঘরে কিছু কিছু বিষয়ে মেনে চলতে হবে। যেমন প্রতিদিন নিয়ম করে সিরিয়াল দেখা, খাওয়ার সময় টিভি দেখা ইত্যাদি বন্ধ করে দিতে হবে। বাড়ির বড়দের যদি টিভির নেশা থাকে তাহলে কিন্তু বাচ্চা নিয়ম মানতে চাইবে না।
ছোট বাচ্চারা যা দেখে তাই শেখে। তারা খুব সহজেই অনুকরণ করতে যায়। তাই সন্তানকে বোঝান কার্টুনে যা দেখছে তা সত্যি নয়। এটা শুধুই বিনোদনের জন্য। বাস্তব এবং কার্টুন—এই দু’টো জগতের মধ্যে যে একটা ফারাক রয়েছে সেটা বোঝাতে হবে। কার্টুনের কারসাজি যে পুরোটাই টেকনোলজির কেরামতি সেটা ওকে বুঝিয়ে দিন।
বাচ্চার ঘরে অথবা আপনাদের বেডরুমে টিভি সেট রাখবেন না। এতে অবসর সময়ে শুয়ে বসে কার্টুন দেখতে ইচ্ছে করবে। বই পড়া, আঁকার মতো যে জিনিসগুলো ও করতে পারত, চোখের সামনে টিভি থাকলে সেগুলো আর করতে উৎসাহ পাবে না। আপনার অবসর সময়ে বাচ্চার সঙ্গে ইনডোর এবং আউটডোর গেমস খেলুন। এর সন্তানের মনযোগ অনেকটাই কার্টুন থেকে সরে যাবে। বাচ্চাকে নানা ধরনের ছবির বই, পাজ়ল, রঙিন গল্পের বই কিনে দিন। এইগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকলে, কার্টুন দেখার কথা তাঁর কম মনে পড়বে।
সন্তানকে নতুন কিছু শিখতে উৎসাহ দিন। ছুটির দিনে পরিবারের সকলে ঘুরতে যাওয়া বা একসঙ্গে বাগান পরিচর্যার কাজ করতে পারেন। সন্তানকে হবি গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। নাচ, গান, ক্রিকেট, ক্যারাটে— যে বিষয়ে সন্তানের উৎসাহ আছে সেখানে ভর্তি করে দিন। পড়াশোনো ছাড়াও খেলাধুলোর প্রয়োজন আছে। এতে বাচ্চাদের মনের বিকাশ হয়। সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা, শারীরিক কসরত শরীর এবং মন দুইই ভাল রাখতে সাহায্য করে। এতে ঘরে বসে কার্টুন দেখার প্রবণতাও কমে আসবে এবং বাচ্চা সৃজনশীলও হয়ে উঠবে।
টিভিতে কার্টুন ছাড়াও আরও নানা ধরনের শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হয়। বাচ্চাকে খেলা, ট্যাভেল শো, ওয়াইন্ডলাইফ, ইতিহাস, ভূগোল বা বিজ্ঞান সংক্রান্ত যে অনুষ্ঠানগুলো সেগুলো দেখতে উৎসাহ দিন। আপনারাও ওর সঙ্গে এই অনুষ্ঠানগুলো দেখুন। এগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। এতে দেখবেন ওর কার্টুন দেখার আসক্তি ধীরে ধীরে কমে আসবে।