খবর ৭১: রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক এজেন্সি ইউএসএইড। রাখাইন রাজ্য সফর শেষে মিয়ানমারের প্রতি এ আহ্বান জানান ইউএসএইডের প্রধান মার্ক গ্রিন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, রোববার মার্ক গ্রিন মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান রোহিঙ্গা মুসলিমদের অধিকার নিশ্চিত করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার। পাশাপাশি পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া কয়েক লাখ রোহিঙ্গার দেশে ফেরত আসা নিশ্চিত করাকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান তিনি। মার্ক গ্রিন তিন দিনের মিয়ানমার সফর শেষ করেছেন।
তিনি এ সময়ে রাখাইনের পশ্চিমাঞ্চলে রোহিঙ্গা ও রাখাইন সম্প্রদায়ের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময়ে তিনি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আশ্রয় নেয়া একটি আশ্রয় শিবির থেট কাই পাইন ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা পরিদর্শন করেছিলেন। তাদের বিষয়ে মার্ক গ্রিন বলেন, এসব শরণার্থী আতঙ্কিত। তারা দেশে ফিরতে চান। কিন্তু তার আগে তারা তাদের অধিকার ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চান। তাই আমরা মিয়ানমার সরকারকে জোরালোভাবে উৎসাহিত করছি এমন দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে, যার ফলে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হয় অথবা এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যার অধীনে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফিরতে পারেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের বিষয়ে মিয়ানমার পরিষ্কারভাবে আন্তরিকতা দেখাতে পারে। তাদের ফিরিয়ে নেয়ার আন্তরিকতা দেখাতে পারে। মার্ক গ্রিন বলেন, এত বেশি সংখ্যক মুসলিমের যখন স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার অধিকার নেই, চলাচলের স্বাধীনতা নেই, তাদের জীবন জীবিকার অধিকার নেই তখন সেইসব রোহিঙ্গা মুসলিমের আশাহত হওয়ার অনুভূতিতে তিনিও স্তব্ধ। এই হতাশা অবশ্যই বিরক্তিকর। এ বিষয়টিতে নজর দিয়ে কিছু করা উচিত। মার্ক গ্রিন আরো বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে বিপন্ন মানুষগুলোকে অতিরিক্ত ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ত্রাণ সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। উল্লেখ্য, গত ২৫ শে আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা শুরুর পর প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের ওপর চালানো হয়েছে অকথ্য নির্যাতন। গণধর্ষণ, যৌন সহিংসতা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ সহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী করেনি। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংসতাকে জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ওয়াশিংটন। কিন্তু মিয়ানমার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, ‘বাঙালি সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে সেখানকার নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। শুক্রবার মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির সঙ্গে রাজধানী ন্যাপিডতে ও শনিবার নাগরিক সমাজের সঙ্গে প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে বৈঠক করেন মার্ক গ্রিন। এ ছাড়া তিনি রাখাইনের স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সপ্তাহান্তে বিভিন্ন গ্রাম ও ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তিনি। রোববার তিনি সহিংসতাকবলিত রাখাইন রাজ্যের উত্তরে রাথেডং শহরের উত্তরে মুসলিম ও বৌদ্ধ গ্রামগুলোতে যান। এরপর তিনি থেট কাই পাইন ক্যাম্পের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। ওই ক্যাম্পে অবস্থান করছেন প্রায় ৬০০০ রোহিঙ্গা। রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে থেকে অল্প দূরত্বে অবস্থিত এই ক্যাম্প। মার্ক গ্রিন বলেন, আমাদের কাছে বিলাসিতা করার মতো সময় নেই। আমরা সবাই শুধু দেখতে চাই সামনে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আর সে পদক্ষেপে সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত আছি।
খবর ৭১/ই: