খবর৭১: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যাওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্ট তাকেহিকো নাকাও। তবে এটা কঠিন বলেও মনে করেন তিনি। এজন্য অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জলবায়ু খাতে বিনোয়াগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা সফররত এডিবি প্রেসিডেন্ট।
তিন দিনের সফরের শেষ দিন বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই পরামর্শ দেন।
এসময় তিনি বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা, ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ, আগামী জাতীয় নির্বাচন, দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহায়তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে এডিবির পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে এডিবির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক হান কিম, বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন পারকাশসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তাকেহিকো নাকাও বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়া অসম্ভব নয়। তবে বাংলাদেশের জন্য এটি সহজও হবে না। উন্নত দেশ হওয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে ১০ শতাংশের উপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। চীন এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য ভালো উদাহরণ হতে পারে।’
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এটি আমার দ্বিতীয় এবং বিশেষ সফর। এর আগে ২০১৪ সালের জুনে আমি বাংলাদেশে এসেছিলাম। গত চার বছরে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দারুণ উন্নতি করেছে। সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বেশ ভালোভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে।’
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভালো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, অর্থনীতির অন্যান্য সূচকও ইতিবাচক। তবে আরও ভালো করার সুযোগ বাংলাদেশের সামনে রয়েছে। ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে হবে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। বর্তমানে জিডিপির অনুপাতে রাজস্ব আদায়ের হার মাত্র ১০ শতাংশ। এটি বাড়াতে হবে।’
এডিবির প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘টেকসই অর্থনীতির জন্য রাজস্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজস্ব আদায় করা হয় জনগণের কল্যাণের জন্য, দুর্ভোগের জন্য নয়।’ রাজস্ব বাড়ানোর উপায় হিসেবে তিনি ভ্যাট, প্রগ্রেসিভ ইনকাম ট্যাক্স, শুল্ক ও তামাকের ওপর কর বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহ
এক প্রশ্নের জবাবে তাকেহিকো নাকাও বলেন, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিলে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়টি এডিবি বিবেচনা করে দেখবে। প্রতিশ্রুত ঋণ-সহায়তার বাইরে অতিরিক্ত সহায়তা হিসেবে এই অর্থায়নের পাশাপাশি সরকার চাইলে যেকোনো বড় প্রকল্পে এডিবি অর্থ দিতে আগ্রহী বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার এক বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে আমাদের অর্থায়ন করতে বলেছেন। আমরা সেখানে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত আছি। সরকার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলে অবশ্যই আমরা সেটা বিবেচনা করব।
প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের (ফিজিবিলিটি স্টাডি) ক্ষেত্রেও এডিবি সহায়তা করতে পারে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ২০১৬-২০২০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে আট বিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে এডিবির। এই অংক আগের পাঁচ বছরের (২০১১-২০১৫) চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি।
এক প্রশ্নের জবাবে এডিবি প্রধান বলেন, রাখাইন থেকে পালিয়ে মানুষের জন্য বাংলাদেশ নিজ উদ্যোগের ভাসানচরে আবাসনের ব্যবস্থা করছে। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ছয় লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ তাদের অস্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ দিয়েছে এবং মানবিক সহায়তা ভালোভাবে মোকাবেলা করছে। এজন্য বাংলাদেশ প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা দিতে এডিবি প্রস্তুত রয়েছে। বাংলাদেশ এখনও কোনো প্রস্তাব দেয়নি। তাই সহায়তার পরিমাণ কত হবে সেটা এখনো নিশ্চিত নয়।
খবর৭১/এস: