খবর৭১ঃ
ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন চলাকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ৯টি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১১টি ও বিস্ফোরক আইনে দুটিসহ মোট ১৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। এরমধ্যে গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় পল্টন থানায় দুইটি, মতিঝিল থানায় দুইটি, শাহবাগ থানায় দুইটি, বংশাল থানায় একটি, কলাবাগান থানায় একটি, ভাটারা থানায় একটি, উত্তরা পূর্ব থানায় একটি ও এয়ারপোর্ট থানায় একটি। এছাড়া বিস্ফোরক আইনে উত্তরা পূর্ব থানায় একটি ও তুরাগ থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩০ জন গ্রেফতার হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ২৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে কাজ করছে। নেপথ্যের ঘটনা উদ্ঘাটনে পুলিশ র্যাবসহ গোয়েন্দারা এখন মাঠে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে পল্টন থানাধীন বিএনপি পার্টি অফিসের উত্তর পাশে কর অঞ্চল ১৫-এর পার্ক করা সরকারি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপর বেলা ১টার দিকে মতিঝিল থানাধীন মধুমিতা সিনেমা হলের সামনে অগ্রণী ব্যাংকের স্টাফ বাসে, ১টা ২৫ মিনিটে রমনা হোটেলের সামনে চলতি ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনে, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে দেড়টার দিকে দেওয়ান পরিবহনে, ২টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ সচিবালয়ের উত্তর পাশে রজনীগন্ধা পরিবহন এবং বংশাল থানাধীন নয়াবাজার এলাকায় ২টা ২৫ মিনিটে দিশারী পরিবহনে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া ২টা ৪৫ মিনিটে পল্টন থানাধীন পার্কলিং-এ জৈনপুরী পরিবহন, বিকাল ৩টায় মতিঝিল থানাধীন পূবালী পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন দোতলা বিআরটিসি বাসে, ভাটারা থানাধীন কোকাকোলা মোড়ে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনে এবং রাতে উত্তরার আজমপুরে আগুন দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে সন্দেহভাজন ৪০ জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে যাচাই-বাছাই করে ৩০ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বাকি আসামিদের জড়িত থাকার বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে বলে মহানগরের এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা জানান। এরমধ্যে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। ঘটনায় জড়িতরা মুখে মাস্ক পরা ছিল। একটি গোয়েন্দা সংস্থার মতে, শিবির পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধারণা করছে, হঠাত্ করে ৯টি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা পরিকল্পিত। এটা বিএনপি-জামায়াতের ‘জ্বালাও-পোড়াওয়েরই’ ধারাবাহিকতা। পাশাপাশি এটি জঙ্গিদের তত্পরতা কিংবা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নাশকতা কি না—এ সব কিছু সামনে রেখে পুলিশ র্যাবসহ সব গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। ঘটনাস্থলগুলোর আশপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। পলাতকদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুর আলমও বলেন, সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছি।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম গতকাল বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি জামায়াত-শিবিরের নাশকতা কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, কোনো কিছু উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছে, এটি বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের ধারাবাহিকতা। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাজধানীতে হঠাত্ বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় একটি কল রেকর্ড পেয়েছি আমরা। সেটি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। যারা কথা বলেছেন তাদের পরিচয় জানতে কাজ করা হচ্ছে। তবে এই কল রেকর্ড মামলা প্রমাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাভিডেন্স হিসেবে কাজ করবে। কল রেকর্ড আর আগুনের ঘটনার সঙ্গে কথোপকথনের মিল রয়েছে।
রিমান্ডে যারা
শাহবাগ থানা দায়ের করা পৃথক দুই মামলায় ছয় আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন—হযরত আলী, মঈনউদ্দিন, আবু সাঈদ শান্ত, আবুল কালাম আজাদ, আবু সুফিয়ান ও সোহেল। পল্টন থানার এক মামলায় দুই আসামি-আলিজা আল আহমেদ মিটু ও মেহেদী হাসান ইয়াছিনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। আরেক মামলায় সাত আসামি- এ কে ফজলুর বারী, আলতাফ হোসেন, নাঈম প্রধান, আলিফ মাহমুদ, হুমায়ুন রশীদ টুটুল, খন্দকার মাশুকুর রহমান ও রাশেদুজ্জামানের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। মতিঝিল থানার এক মামলায় আবদুর রহমান তাহেরের দুই দিন এবং আরেক মামলায় জাকির হোসেনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বংশাল থানার এক মামলায় দুই আসামি সফিউদ্দিন আহমেদ সেন্টু ও মৃদু রহমান জনি ওরফে মোরশেদুর রহমান জনির দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কলাবাগান থানার এক মামলায় দুই আসামি-মাহিফুর রহমান টিপু ও মাঈনউদ্দিন চৌধুরীর দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সূত্রাপুর থানায় দায়ের করা মামলায় চার আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। খিলক্ষেত থানায় দায়ের করা মামলায় দুই আসামি মশিউর রহমান মসি ও ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলামের দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। তুরাগ থানায় দায়ের করা একটি মামলায় সোহেল মিয়া নামে এক আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।