রিপন দাস, বগুড়াঃ আইনি জটিলতায় আটকে গেছে বগুড়া অথনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পের কাজ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে কিন্তু বাস্তবে তা এখনও হয়নি। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ১৯৮২ সালের আইন থাকলেও তা এখন অনেক জমির মালিক তা মানছে না। পুরাতন আইনে জমির মূল্য দেড় গুণ কিন্তু ২০১৭ সালের ২১ সেন্টেম্বর প্রণীত আইনে বর্তমান জমির মূল্য প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান জমির মালিকরা সরকারীভাবে জমির মূল্য বৃদ্ধির আশায় আদালতে মামলাও দায়ে করেছে। আর এ জন্যই কবে নাগাদ এ প্রকল্পে কাজ শুরু হবে তা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারছে না।
বগুড়া জেলার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ মোট ৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। প্রায় ৪ বছর আগে প্রধানমন্ত্রির এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বগুড়া শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে শাহাজানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের বগুড়া-নাটোর জাতীয় মহাসড়কের পশ্চিম প্রান্তে ২৫১ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জমি অধিগ্রহণ এলাকাগুলো বীরগ্রাম, পারতেখুর, চকজোড়া ও চকভালি মৌজা।
প্রকল্প এলাকার চাষের জমির বর্তমান মূল্য প্রতি শতাংশ ৩০ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু ২০১৭ সালের ২১ সেন্টেম্বর প্রণীত জমি অধিগ্রহণ আইনে আরো বেশি ক্ষতিপূরণ চেয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রিট করেন মোহন চাঁদ ও প্রকাশ চন্দ্রসহ বেশ কয়েকজন জমির মালিক। তাদের দাবি, প্রায় চার ফসলী এ জমি সরকারের হাতে তুলে দিলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। জমি ছাড়া তাদের আয়ের কোন উৎস নেই।
বগুড়ার শাহাজাহানপুর উপজেলার পারতেখুর গ্রামের মোঃ মজিবুর রহমান জানান, আমার চার-পাঁচ বিঘা জমি যাচ্ছে কিন্তু আমি তাতে দুঃখ পাচ্ছি না। জমি যায় যাক তবু কাজ হোক। কাজ হলে এলাকার উন্নয়ন হবে আর এ জমির জন্য আমরা কোন কেস করতে যায়নি কোন দিন করতে যাবোও না।
উপজেলার পারতেখুর গ্রামের সরদারপাড়া এলাকার মোঃ ফয়সাল আহম্মেদ জানান, আমারো পাঁচ বিঘা জমি যাচ্ছে। আর এখানে বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে এটা জানার পরে আমরা খুব খুশি। অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়ার পরে অনেক উন্নত হবে পাশাপাশি কর্মযজ্ঞ সৃষ্টি হবে। কয়েকজন লোক জমি নিয়ে মামলাও করেছে। কিন্তু এসব লোকের কারণে এত বড় প্রকল্প নষ্ট হয়ে যাবে তা চায় না। সরকার যা মূল্য দিবে আমি সেই মূল্যেই জমি দিয়ে দিবো।
তিনি আরো জানান, যতদূর জানা যায় যারা মামলা করেছে তাদের খাস জমি। টাকা পাবে না এ জন্য তারা প্রকল্প যাতে ভেস্তে যায় সে কারণেই মামলা করেছে।
একই এলাকার মোঃ জিয়াউর রহমান জানান, যারা মামলা করেছে তাদের নিজের জমি কী না তা ভালো করে তদারকি করলে জানা যাবে। আর দু-এক জনের কারণে এত বড় প্রকল্প বাদ পড়বে আমরা তাহতে দিতে পারি না।
তবে এ বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহম্মেদ জানান, ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান আছে। ইতোমধ্যেই ৬ ধারায় নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। যে মামলা হয়েছে তাতে রিটের জবাব চেয়েছে আমরা ইতোমধ্যেই তাদের আর্জি ও এসএফসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আশা করি আমাদের এ জবাব দূত চলে যাবে আর পরবর্তি নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ শুরু করবো।
প্রকল্প দূত বাস্তবায়নে সরকারকে জমি দিতে আগ্রহি মালিকরা। ইতোমধ্যেই ২৯০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তথ্যমতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এখানে প্রায় ২৭ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে আর অর্থনৈতিক লেনদেন হবে বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।