অবশেষে তিস্তা মহাপরিকল্পনার নিয়ে চায়না পাওয়ারের সাথে ফিজিবিলিটি স্টাডির চুক্তি স্বাক্ষরিত করলো সরকার। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ফ্যাসিবাদি আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলার মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে। কিন্তু ৬ মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনার চীনা প্রতিষ্ঠানের সাথে ফিজিবিলিটি স্টাডির সম্প্রতি এ চুক্তি স্বাক্ষরিত করেছে। এ চুক্তির সাথে সাথে তিস্তা মহাপরিকল্পনা ফিজিবিলিটি দুই বছরের মধ্যে প্রাক্কলন ও নকশা করে সরকারকে দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ও চীনা কোম্পানি যৌথভাবে তিস্তা এলাকা সরেজরিমন পরির্দশন পূর্বক নতুন নকশা সংশোধন এবং পরিমার্জন করে দ্রুত কাজ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে গত সোমবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রংপুর জেলার তিস্তা রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন চরে কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। তিনি বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্য দিবেন। গতকাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সমাপনী কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত বক্তব্য দিয়েছেন। এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা সেতুর পাড়ে ‘তিস্তা নিয়ে করণীয়’ শীর্ষক গণশুনানি করেন। এই গণশুনানিতে সরকারের দুই উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভ‚ঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। গণশুনানিতে তিস্তাপাড়ের কয়েকশ’ মানুষ অংশগ্রহণ করেন এবং নিজেদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন। তারা চীনের অর্থায়নে তিস্তা মহাপ্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য দুই উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান। শুধু তাই নয়, তারা বলেছেন, ‘হামরা জানি হাসিনা দিল্লির কারণে তিস্তা মহাপ্রকল্পের ফাইল চাপা দিয়েছিল; ড. ইউনূস সরকার অবশ্যই সে ফাইল উদ্ধার করে তিস্তা মহাপ্রকল্পের কাজ শুরুর আয়োজন করবে।
মঙ্গলবার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, পাওয়ার চায়না প্রস্তাব ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে চুক্তি অনুমোদ দেয়া হয়েছে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে এবং চীনা প্রতিষ্ঠাকে তিস্তা পাড়ের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে কাজ করতে বলেছি। এছাড়া নতুন নতুন পরিকল্পনা যুক্ত করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন নতুন কিছু দিক নিদেশনা দেয়া হয়েছে।
‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তার পানির নায্য হিস্যা আদায় ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবির কর্মসূচিতে উত্তাল হয়ে উঠে তিস্তাপাড়। কর্মসূচির গতকাল শেষ দিন তিস্তা সড়কসেতু ও রেলসেতুর মধ্যে বালুচরে জনস্রোত নামে। ছাত্র-শিক্ষক, মুটে-মজুর, কৃষক-জেলে, পরিবেশকর্মী, চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এক কাতারে সামিল হয়ে তিস্তা নদীকে রক্ষার দাবি তুলেছেন। তিস্তাপাড়ের বিপন্ন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে অন্তর্র্বতী সরকারের ওপর তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের চাপ প্রয়োগ করাই এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। একই সাথে বিশ্ব পরিমলে তিস্তার দুঃখ তুলে ধরা হবে এই কর্মসূচির মাধ্যমে। দুপুরের আগেই তিস্তার বুকে তৈরি করা হয় মঞ্চ, সম্পন্ন হয় যাবতীয় প্রস্তুতি। কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিস্তার বুকে মঞ্চ তৈরির পাশাপাশি খাবারের ব্যবস্থা, তাঁবু টানিয়ে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
ভারতের দিল্লির মোদি ও মমতার বাধায় তিস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে পারছে না সরকার। চীনের ঋণ নিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বিশদ সমীক্ষা শুরু করে বাংলাদেশ ও চীন। ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে তিস্তা মহাপ্রকল্পের কিছু অগ্রগতি হলেও গত ২৪ জুন তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও ভারত আন্তরিক বলে আটকে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। চীনকে নিয়ে তিস্তায় মহাবিপদে ভারত। তিস্তা প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে কৌশলে বাংলাদেশ। তিস্তা নদী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ মহাপ্রকল্প হাতে নিয়েছে। তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করা হয় প্রথমে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি দিয়ে। গত ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল এবং ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল এবং চলতি বছরের গত ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীন সরকারে সাথে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি চুক্তি ছিল তা যথাযথভাবে কাজ করেছে চীন। তবে এ চুক্তি আগামী ২৬ সাল পর্যন্ত বাড়াতে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে প্রস্তাব করা হয়। তিস্তা মহাপ্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে গত ৯ বছর উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলার কোটি কোটি মানুষের সাথে প্রতারনা করেছে বিগত সরকার। এবার ক্ষমতা গ্রহণের ৬ মাসের মাথায় অন্তর্বর্তীকালীণ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর নির্দেশনায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান চীনের সাথে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। তবে দিল্লির মোদি এবং পানিসম্পাদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু ফ্যাসিবাদ কর্মকর্তার কারণে তিস্তা মহাপ্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি’র ফাইলটি দীঘ দিন ধওে ফেলে রাখেন। পওে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নির্দেশনায় ফাইলটি দ্রুত জেগে তোলা হয়। তা এক মাসের মধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
এদিকে তিস্তা প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও অর্থসহ সব কিছু ঠিক থাকলেও গত ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হওয়া জাতীয় নির্বাচনের পরে তিস্তা প্রকল্পের কাজ একা চীন নয়, ভারতকেও যুক্ত করা হবে- এমন ঘোষণা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ঘোষণায় পরে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে রশি টানাটানি থমকে যায়। এ মধ্যে সুযোগ নিয়েছে ভারত। পতিত সরকার পতনের পর ভারতকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্ত করার সম্ভাবনা নেই। অনেকেই মনে করলো বর্তমান সরকারের পানি সম্পদ উপদেষ্টা নতুন উদ্যোগ নেয়ার পওে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন জেগে উঠেছে। তবে অর্থায়নের উৎস যেখান থেকে আসুক না কেন, রংপুর অঞ্চলের মানুষের জন্য এটি একটি অপরিহার্য মহাপরিকল্পনা। জনস্বার্থে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন জরুরি। তবে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এবার ইআরডিকে নতুন নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। তবে তিস্তার পাড়ের মানুষের অভিযোগ, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এ বিপ্লব আরো বেগমান করবে। উত্তরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের প্রকল্প তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়নে কাজ করায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানাবে। কিন্তু সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে ভারত ও চীন।
পাওয়ার চায়না প্রস্তাব ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে কিছু মতামত ও সুপারিশ দিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্র্ডের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দফতরে পাঠানো হয়।পানি উন্নয়ন বোর্র্ডের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনা কোম্পানি মধ্যে বাংলাদেশের টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সম্পর্কিত একটি নন-বাইডিং সমঝোতা স্মারক আগামী ২০২৬ সালে স্বাক্ষরিত হবে। নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারক (চুক্তি) টির মেয়াদ সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। পরবর্তীতে স্মারক ১, ২ ও ৩ মোতাবেক বর্ণিত নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারকটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্পতি সাপেক্ষে তিন দফায় যথাক্রমে ২০২০-২২ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ সরকার। চিঠিতে আরো বলা হয়, গত ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার ইআরডির মাধ্যমে তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তবানা চীনা সরকারের কাছে পাঠানো হয়। চীন সরকার আবেদনটি যাচাই-বাছাই করার পরে বাংলাদেশের চীনা দূতাবাসের মাধ্যমে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিতে কিছু মতামত ও সুপারিশ প্রদান করা হয়। পাওয়ার চায়না সেই মোতাবেক ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি সমৃদ্ধ করে পুনরায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি পাওয়ার চায়না প্রকল্পটি শুরুর আগে উল্লিখিত কাজগুলো ছাড়াও আরো কিছু প্রকৌশলগত কাজ সম্পন্ন করা এবং মাহামারি কোভিডের কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে মর্মে আবেদনে উল্লেখ করে নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ আগামী ২০২৬ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। চায়না কোম্পানি আবেদন মোতাবেক নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারক (চুক্তি) বৃদ্ধির প্রয়োজন ছিলো । চুক্তি হওয়ার পরে চীনা কোম্পানীর কাজ করতে আর কোনো বাঁধা রইল না।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তিস্তা নদীকে ঘিরে উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে চীন। গত ২০২০ সালের আগস্টে আট হাজার ২১০ কোটি টাকার পিডিপিপি (প্রিলিমিনারি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে জমা দেয়া হয়েছিল। পিডিপিপির ব্যাপারে চীন সরকার গত বছরের ৫ মার্চ একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাঠায়। প্রতিবেদনে বড় আকারের ভ‚মি উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং নৌ-চলাচল ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে অধিকতর বিশ্লেষণ না থাকা এবং বড় আকারের বিনিয়োগ বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এবার যেকোনো দিন পরিকল্পনা বিভাবে বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হবে। প্রায় ২৪০ বছরের পুরোনো নদী তিস্তা। এর সঙ্গে রয়েছে উত্তরের ২৫টি নদীর প্রবাহ। শুষ্ক মৌসুমে নদীটি একেবারেই শুকিয়ে যায়। নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলার রাজাহাট, উলিপুর, চিলমারী, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে নদীটি। তবে শুষ্ক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা। এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটিই তিস্তা নদীবেষ্টিত। নদীশাসন না হওয়ায় গত পাঁচ বছরে গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে তিস্তাপাড় হয়ে উঠবে পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির মতো সুন্দর নগরী। চীনের হোয়াংহো নদীকে একসময় বলা হতো চীনের দুঃখ। প্রতি বছর ওই নদীর পানি ভাসিয়ে দিত শত শত মাইল জনপদ। ভেঙে নিয়ে যেত বহু গ্রাম-পথ-ঘাট জনপদ। সেই সর্বনাশা নদীশাসন করায় (পরিকল্পিত ড্রেজিং) চীনের মানুষের দুঃখ ঘুচেছে। হোয়াংহো এখন হয়ে গেছে চীনের কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। হোয়াংহোর মতোই এখন বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চলের ‘পাগলা নদী’ খ্যাত তিস্তা ড্রেজিং করে কোটি মানুষের দুঃখ ঘোচানো সম্ভব বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, তিস্তা নদীর পানি আটকিয়ে বৃহত্তর রংপুর ও বগুড়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার জমিতে সেচ দিয়ে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে ব্যারাজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। স্বাধীনতার পরে ১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ডালিয়ায় ব্যারাজ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সম্পূর্ণ দেশি প্রযুক্তিতে দেশের প্রকৌশলীরা ব্যারাজসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করেন। ব্যারাজ, বিভিন্ন অবকাঠামো, সিল্টট্রাফ ও বিভিন্ন ক্যানেল নির্মাণে ব্যয় হয় ৯৩৫ কোটি টাকা। বিগত ১৯৯০ সালের ৫ আগস্ট ব্যারাজ নির্মাণকাজ শেষ হলে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। শুষ্ক মৌসুমে নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর ও বগুড়া জেলার ৩৩টি উপজেলায় তিন লাখ ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিয়ে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন করে দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এতে ৪৫২ কোটি টাকার অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন আশা করা হয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না বা পাওয়ার চায়নার মধ্যে ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। মহাপরিকল্পনায় পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির আদলে তিস্তার দুই পাড়ে পরিকল্পিত স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলার প্রাথমিক প্রস্তাব করা হয়। সরকার চীনের সেই প্রস্তাবনার আলোকেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলেছিল। চলতি বছরের শুরুতে ভারত সফর করেন পতিত আওয়ামী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় দিল্লিতে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশকে সংযুক্ত করেছে ৫৪টি নদী। বন্যা ব্যবস্থাপনা, আগাম সতর্কতা, পানীয় জলের প্রকল্পের ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা করছি। ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়নের বিষয়ে কারিগরি পর্যায়ের আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। বাংলাদেশে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি কারিগরি দল শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে। এরপর সেই কারিগরি দলের আর আসা হয়নি।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এই মুহূর্তে তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে ভাবছে সরকার। চীনের প্রস্তাব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সরকাওে সাথে চুক্তি হয়েছে। চীনের প্রস্তাবিত ‘তিস্তা প্রকল্প’ বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার মানুষের ভাগ্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। নদীর গভীরতা প্রায় ১০ মিটার বাড়বে। বন্যার পানি প্লাবিত হয়ে ভাসাবে না গ্রামগঞ্জের জনপদ। সারা বছর নৌ-চলাচলের মতো পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা যাবে। এতে আছে ১০৮ কিলোমিটার নদী খনন, নদীর দুপারে ১৭৩ কিলোমিটার তীর রক্ষা, চর খনন, নদীর দুই ধারে স্যাটেলাইট শহর নির্মাণ, বালু সরিয়ে কৃষিজমি উদ্ধার ও এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা এবং প্রতি বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন। নৌ-বন্দর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুই পারে থানা, কোস্টগার্ড ও সেনাবাহিনীর জন্য ক্যাম্পের ব্যবস্থার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে প্রকল্পটিতে।
তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিষয়টি নিয়ে রংপুর বিভাগের পানি উন্নয়ন বোর্ডেও প্রধান প্রকৌশরী মো. এাহাবুব হোসেন বলেন, তিস্তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এখন বেশি কথা বলা যাবে না। সূত্র:ইনকিলাব