আলুর উৎপাদন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক

0
73

খবর ৭১: গেল কয়েক বছর ধরে আলুর দাম স্বাভাবিকের চেয়ে কমই থাকছে। ফলে উৎপাদন খরচ মেটানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে কৃষকদের। এ কারণে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর ২৫ শতাংশ উৎপাদন কমেছে। উৎপাদন খরচ তোলার চ্যালেঞ্জের সঙ্গে যোগ হয়েছে বীজ সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের খরচ। বস্তা প্রতি আলুর দামের তুলনায় হিমাগারের বাড়তি খরচ যোগ হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের।

কৃষকদের দাবি আলুর উৎপাদন খরচের সঙ্গে পরিবহন খরচ, বস্তার মূল্য, লেবার খরচ, এর  সঙ্গে ৬০ কেজি ওজনের বস্তা প্রতি ৩০০ টাকা হিমাগার খরচ গুনতে হয়। এর ফলে বস্তা প্রতি যে পরিমাণ খরচ হয় হিমাগারে ছয় মাস রাখার পর বিক্রি করতে গেলে আলুর দামে লাভ পাচ্ছে না তারা। অনেক সময় আলু পচে যাওয়ায় মূল্য কমে যাওয়া এবং যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সব ধরনের ঝুঁকি গিয়ে পড়ে কৃষকের উপর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে বলছে, উত্তরবঙ্গে যত আলু উৎপাদন হয় তার সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলায়। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কে এম রাফিউল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, আগের চেয়ে আলোর উৎপাদন কমেছে। আলুর উৎপাদনে খরচ হয় বিঘা প্রতি ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এর সঙ্গে নানাবিধ খরচ যোগ হয়ে বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে পার্থক্য থাকে খুবই কম। কোন কোন ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ দাড়ায় বেশি। ফলে আল উৎপাদনে কৃষক উৎসাহ হারাচ্ছে।

শিবগঞ্জের খেজুরুদ্দির নামের এক কৃষক জানান, উৎপাদন থেকে শুরু করে কোল্ড স্টোরেজ পর্যন্ত আনতে সব খরচ মিলিয়ে আলুর বস্তা ভর্তি খরচ দাড়ায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এর সঙ্গে যোগ হয় হিমাগারের খরচ। নির্দিষ্ট সময় অন্তে আলুর দাম না বাড়লেও হিমাগারের খরচ বাধ্যতামূলক পরিশোধ করতে হয়। হিমাগার কর্তৃপক্ষের কোনো লস নাই। সব লস গিয়ে পড়ে আমাদের উপর। এ কারণে আমরা বাধ্য হয়ে আলুর উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছি।

শিবগঞ্জের আরেক কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, আলু উৎপাদনে পটাশ সারের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। দোকানে নির্ধারিত দামের সঙ্গে বস্তা প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দরে কিনতে হয়। ইউরিয়া সার এর ক্ষেত্রেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বস্তা ভর্তি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়। দাম বেশি দিতে না চাইলে দোকানদার জানিয়ে দেয় সার নেই। প্রান্তিক পর্যায়ে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কার্যকার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান এই কৃষক।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মুজাইদুল ইসলাম জানান, এ বছর বগুড়ার শুধুমাত্র একটি উপজেলা শিবগঞ্জে ৩০০ থেকে ৪০০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন কমেছে। বীজ সংরক্ষণে হিমাগারের খরচ কমিয়ে হলেও আলোর বীজ সংরক্ষণে উৎসাহিত করার উচিত।

সাধারণ কৃষকদের ভাষ্য, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে গেল ১০ বছরে হিমাগারে বীর সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আলুর বস্তা প্রতি খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। হিমাগার কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের সহযোগিতা পেলে আলুর বীজ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বাড়বে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। আলুর উৎপাদন সংশ্লিষ্ট উপকরণের উপর ভর্তুকি বাড়ানোর দাবি জানান তারা। তবে তুলনামূলক কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর বিদেশে আলুর রপ্তানি বেড়েছে। বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ জোরদার করা হলে উৎপাদন খরচ কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবে বলে প্রত্যাশা তাদের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here