খবর৭১ঃ দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের দিন ধনী-গরিব সবাই যেন সমানভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে এ জন্য মহান আল্লাহতায়ালা জাকাতের মতো একটি আর্থিক ইবাদত সদাকাতুল ফিতরের বিধান প্রদান করেছেন। সদাকাতুল ফিতর আরবি শব্দ।
সদকা অর্থ দান আর ফিতর অর্থ রোজা ভেঙে পানাহারের বৈধতা। দীর্ঘ এক মাস পর রোজা ভাঙা উপলক্ষ্যে গরিব-মিসকিনকে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যে দান করা হয়, তাই সদাকাতুল ফিতর। আমাদের দেশে ‘ফিতরা’ নামেও পরিচিত। ফিতর আদায়ের উদ্দেশ্য দুটি। তা হলো : রোজার কাফফারা অর্থাৎ রোজায় আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অনেক ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়, সদাকাতুল ফিতরের দ্বারা তা ক্ষতিপূরণ হয় এবং ঈদের দিন গরিব ও অসহায় লোকদের সহযোগিতা করা।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সদাকাতুল ফিতর আব্যশক করেছেন। অনর্থক, অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের জন্য এবং গরিব ও অসহায় লোকদের সহযোগিতা করার জন্য’। (সুনামে আবু দাউদ : ১৬০৯)। অন্যত্র এসেছে, হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের রোজা সদাকাতুল ফিতর আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত আসমান-জমিনের মাঝে ঝুলন্ত থাকে।’ (আত-তারগিব ওয়াত তাবহির : ২/৯৬)। তাহলে চিন্তা করুন একজন রোজাদার ব্যক্তির জন্য সদাকাতুল ফিতর আদায় করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
সদাকাতুল ফিতর একটি আর্থিক ইবাদত। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য যেসব শর্ত আব্যশক সদাকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রেও অনুরূপ শর্ত প্রযোজ্য। ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সঙ্গে সঙ্গে সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়ে যায়। তাই কেউ যদি সেদিন সুবহে সাদিকের আগে জন্ম হয় বা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তাহলে তার ওপর সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব। ঈদুল ফিতরের নামাজে যাওয়ার আগে সদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। ঈদের নামাজের পর তা আদায় করলে সদাকাতুল ফিতর আদায় হবে না, বরং সাধারণ দান হিসাবে গণ্য হবে।
হাদিসে পাঁচটি দ্রব দ্বারা সদাকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে বলা হয়েছে। তা হলো যথাক্রমে : যব, কিশমিশ, খেজুর, পনির ও গম। এগুলোর মধ্যে গম হচ্ছে আধা ‘সা’ আর বাকিগুলো এক ‘সা’। ‘সা’ হচ্ছে একটি প্রাচীন ওজন পদ্ধতি। প্রতি বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে সদাকাতুল ফিতরের সর্বনিু ও সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়। এটা অবশ্যই সাধারণ মানুষের জন্য খুব উপকারী। এ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে সদাকাতুল ফিতর আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ২৩১০ টাকা এবং সর্বনিু ৭৫ টাকা নির্ধারিত করা হয়েছে।
সদাকাতুল ফিতর হচ্ছে গবির ও অসহায় লোকদের অধিকার। যদি নিকটাত্মীয়ের মধ্যে কেউ গরিব ও অসহায় থাকে, তাহলে তাকে সদাকাতুল ফিতর দেওয়া সবচেয়ে উত্তম কাজ। এমনকি যদি ভাইবোনের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকে, তাহলে তাদেরকেও সদাকাতুল ফিতর দেওয়া যাবে। এতে সদাকাতুল ফিতর আদায় হবে পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনের দেখাশোনা করার হকও আদায় হবে। একজনের সদাকাতুল ফিতর একজনকে দেওয়া উত্তম। সদাকাতুল ফিতর ধনী ব্যক্তিদের দয়া বা করুণা নয়, বরং আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব। তাই সদাকাতুল ফিতর আদায়কারী ব্যক্তি নিজে গরিব অসহায় লোকদের বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে।
বর্তমানে সদাকাতুল ফিতর আদায়ের ক্ষেত্রে সর্বত্র গমের মূল্য বিদ্যমান আছে। যব, কিশমিশ, খেজুর ও পনিরের সামর্থ্য থাকার পরও অধিকাংশ গমের মূল্যে সদাকাতুল ফিতর আদায় করে থাকে। মনে রাখবেন, আপনি সদাকাতুল ফিতর আদায় করছেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য। প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম দান হলো, যা দাতার নিকট সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্য সবচেয়ে বেশি’। (বুখারি)। তাই আমাদের সবার উচিত নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোত্তম সদাকাতুল ফিতর আদায় করা। এতে গরিব ও অসহায় লোকদের মাঝে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা যায় এবং রোজার ভুল-ত্রুটির ক্ষতিপূরণ হয়। তাই আমাদের সবার উচিত নিজের সামর্থ্যরে মধ্যে সদাকাতুল ফিতর আদায় করা।