পাইকগাছা পৌরসভার প্রধান সড়ক নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ

0
247

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি: পাইকগাছা পৌরসভার প্রধান সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় শুক্রবার সকালে মানববন্ধন কর্মসূচি আহ্বান করেছে পাইকগাছা নাগরিক কমিটি। প্রাপ্ত অভিযোগে জানাগেছে, পৌরসভার সামনে থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস পর্যন্ত পৌরসভার প্রধান সড়কের একাংশের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ঠিকাদার জাহাঙ্গীর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে। ১ বছর আগে নির্মাণ কাজ শুরু করলেও কয়েক মিটার সড়কের কাজ এখনো পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি। বছরের অধিক সময় জুড়ে রাস্তা খুড়ে ফেলে রাখায় চলাচলে সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি হয়। যার ফলে স্থানীয় সংসদ সদস্য, পৌর কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর নানা অনুরোধ ও চাপের মুখে শেষমেষ নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলেও নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সড়কের যে অংশটুকুই নির্মাণ কাজ চলছে এটি একেবারে থানা ও পৌর বাজারের প্রাণ কেন্দ্রে হওয়ায় নির্মাণ কাজ সকলের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। সড়কে কার্পেটিং করার আগে শেষ মুহূর্তে যে ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ নিম্নমানের। সড়কের বিভিন্ন স্থানে নিম্নমানের খোয়া মজুদ করে রাখায় রুলার দেওয়ার আগেই এলাকাবাসী বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মেয়র সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। বিষয়টি জানতে পেরে একদিকে মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর কাজের মান সঠিক আছে কিনা এবং সঠিক মান বজায় না থাকলে প্রয়োজনে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য পৌরসভার প্রকৌশলীদের নির্দেশনা দেন। অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকীর পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শাহরিয়ার হক ও উপজেলা প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগের সত্যতা পান। উপজেলা এবং পৌরসভার প্রকৌশলীর কাছে ইটের খোয়ার মান জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান খান জানান, যে ধরণের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে এর কোন মান নেই। এ গুলো সম্পূর্ণ ব্যবহারের অনুপোযোগী। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শাহরিয়ার হক জানান, নির্মাণাধীন সড়কটি পরিদর্শন করে নিম্নমানের খোয়া বাদ দিয়ে পিকেট ও ক্লাস ওয়ান খোয়া মিক্সড করে কাজ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে। এ ধরণের নির্দেশনা দিয়ে এসিল্যান্ড শাহরিয়ার হক অফিসে ফিরে যাওয়ার সাথে সাথে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিম্নমানের খোয়া দিয়ে কাজ করে। সড়কের পাশের ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বুলি জানান, কর্তৃপক্ষ চলে যাওয়ার সাথে সাথে ঠিকাদার সেই নিম্নমানের খোয়া দিয়ে কাজ করে। পৌরসভার প্রকৌশলী নূর আহম্মদ জানান, লিখিতভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য ঠিকাদারকে নোটিশ দিয়েছি। এরপরও তারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখে বলে বাজার ব্যবসায়ীরা অনেকেই জানান। মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর জানান, নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর জানান, এটি পৌরসভার প্রধান এবং জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। বিশেষ করে যে অংশে কাজ হচ্ছে এটি একেবারেই থানা এবং পৌর বাজারের প্রাণকেন্দ্রে। জন সম্মুখে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দেদার্ছে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখায় এর প্রতিবাদে আমরা শুক্রবার সকালে নাগরিক কমিটির ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি আহ্বান করেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, সিডিউল মোতাবেক সঠিকমানের উপকরণ দিয়েই সড়ক উন্নয়ন কাজ করার কথা। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করছে অনেকেই এ ধরণের অভিযোগ করেছে। ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্যেও ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে এর ব্যতিক্রম হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্মাণ কাজে ১০% খারাপ মানের খোয়া ব্যবহার করা যেতেই পারে বলে প্রকৌশলীদের সামনেই ঠিকাদার জাহাঙ্গীর জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here