৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় শক্তিশালী ভূমি প্রশাসন গড়ার উপর জোড় দেওয়া হয়েছে

0
270

খবর ৭১ঃ ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় শক্তিশালী ভূমি প্রশাসন গড়ার উপর জোড় দেওয়া হয়েছে। গভীর পরীক্ষণের মাধ্যমে অধিকতর স্পষ্ট ও সমন্বিত পদ্ধতি গ্রহণ করে যেসব প্রতিষ্ঠানকে ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভূমি প্রশাসন।

গতকাল মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার চূড়ান্ত মুদ্রিত সংস্করণটির মোড়ক উন্মোচন করেন। পরিকল্পনা কমিশন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে থাকে। দারিদ্র বিমোচন, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে এ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।

৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ভূমি প্রশাসন ব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট ভূমি বাজার ব্যবস্থা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শক্তিশালী করা এবং এজন্য ব্যাপকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক, নিয়ন্ত্রণমূলক ও রাজস্ব নীতি সংস্কার সাধন করার কথাও বলা হয়েছে। এই সংস্কারগুলোতে ভূমি রেকর্ডসমূহ কম্পিউটারে সংরক্ষণ, ভূমি হস্তান্তর ও নিবন্ধন সহজীকরণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ভূমি হস্তান্তর ও ভূমি নিবন্ধন ফি নির্ধারণের ভিত্তি হবে জমি/স্থাবর সম্পত্তির বাজারমূল্য৷ এতে করে সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-বহির্ভূত রাজস্ব উল্লেখযোগ্য বেড়ে যাবে বলে আশা করা হয়েছে পরিকল্পনাটিতে।

এ ধরনের সংস্কারের ফলে লুটেরা ভূমিদস্যুদের থাবা থেকে দরিদ্র কৃষকদের রক্ষা করা যাবে এবং ভূমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া থেকে অপ্রত্যাশিত মুনাফা আদায়ের পথে একটি প্রবল অন্তরায় তৈরি করবে বলে বলা হয়েছে পরিকল্পনায়। অপ্রত্যাশিত পুঁজি আদায় কমাতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হবে ভূমি হস্তান্তরের ওপর উপযুক্ত মূলধন প্রাপ্তির ওপর করারোপ। এর ফলে একদিকে যেমন ভূমির ফটকাবাজারি নিরুৎসাহিত হবে এবং ভূমির মূল্য স্থিতিশীল হবে, তেমনি সামাজিক সেবায় ব্যয়ের জন্য তা সরকারের ভাণ্ডারে যোগান দেবে গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব আয়।

ভূমি প্রশাসন উন্নয়নের কৌশল হিসেবে ভূমি ব্যবস্থাপনার ডিজিটাইজেশনের উপর জোড় দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভূমির বিভিন্ন রেকর্ড এমনভাবে ডিজিটাইজেশন করা হবে যাতে এসব মাঠ পর্যায়ের ভূমি সম্পর্কিত তিনটি নোডাল দপ্তর তথা জেলা প্রশাসক (কালেক্টর অফিস), উপজেলা ভূমি অফিস (এসি ল্যান্ড অফিস) ও ভূমি নিবন্ধন দপ্তরের (বিশেষত সাব-রেজিস্ট্রার অফিস) সহজে আয়ত্তাধীন থাকে। এমন হলে প্রয়োজন অনুযায়ী ডাটার সহজলভ্যতা ও দ্রুত ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি নিশ্চিত হবে।

ডিজিটালি রক্ষনাবেক্ষনকৃত জমির প্লট-ভিত্তিক ক্যাডাস্ট্রাল (ভূমি সম্পদ সম্পর্কিত) জরিপ থেকে প্রাপ্ত স্পষ্ট ও নির্ভুল খতিয়ানসমূহ, ভূমি হস্তান্তরের নিবন্ধিত দলিলাদি ও জমির নামজারির বিবরণীসমূহ, জমির পূর্ববর্তী লেনদেন, বর্তমান মালিকানা অথবা উত্তরাধিকারের কার্যকর এবং স্বচ্ছ প্রমাণীকরণের ভিত্তি হবে। এছাড়াও, অধিকতর উত্তম জনসেবা প্রদানের জন্য একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস বিতরণ ব্যবস্থা চালু করার প্রয়োজন আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে পরিকল্পনায়।

বিগত পাঁচ অর্থবছরের ভূমি সেক্টরে উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে ই-মিউটেশন (ই-নামজারি) ও ই-রেজিস্ট্রেশনের (ই-নিবন্ধন) কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ই-নামজারি (মিউটেশন) কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা বাদে দেশব্যাপী জুলাই ২০১৯ সাল থেকে শুরু হওয়া ই-মিউটেশন কার্যক্রম ভূমি খাতের পুনর্গঠনের একটি বড় পদক্ষেপ; এটি ভূমি প্রশাসনে অধিকতর জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।

পরিকল্পনায় আরও উল্লেখ আছে, “সরকারি খাস জমি ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা প্রয়োজন। ভূমি রেকর্ড ও জরিপের অটোমেশন হলে এ সম্পর্কিত লেনদেনের ব্যয় ও অসঙ্গতিগুলো আরও কমে আসবে। উল্লেখ্য, ভূমি মন্ত্রণালয় এ সম্পর্কিত ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প’ ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প’ নামে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে”।

পরিকল্পনায় আশা প্রকাশ করা হয়, আশ্রয়ণের মতো গৃহায়ন প্রকল্পের আওতায় দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের বসতির জন্য খাস জমি বরাদ্দের ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রণালয় অগ্রাধিকার দান করবে। চা বাগানের শ্রমিকদের আবাসনের জন্য বাগান মালিকদের নিজস্ব এস্টেটের কিছু জায়গা বরাদ্দ করতে উৎসাহিত করা হবে। সুইপার কলোনি নির্মাণের মতো বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ ,ভূমি ব্যবহার, ভূমি জোনিং, আবাসন, উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন ভূমি পুনরুদ্ধার ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে করণীয় ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের ব্যাপারেও গুরুত্ব সহকারে বলা হয়েছে পরিকল্পনায়। এছাড়া, একটি সমীক্ষার বরাত দিয়ে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়, গ্রামীণ এলাকায় বিপুল সংখ্যক বিবাদ জমির সাথে সম্পর্কিত হলেও এর মধ্যে অনেকগুলি গ্রাম আদালতে সমাধান করা যায় না কারণ গ্রাম আদালতের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের ক্ষমতা ৭৫ হাজার টাকা যার চেয়ে জমির মূল্য সাধারণত অনেক বেশি হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, শত বছরের মহাপরিকল্পনা ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত ১২ সদস্যের ‘ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিল’-এর অন্যতম সদস্য মাননীয় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here