কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে

0
323
কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে

খবর৭১ঃ আমরা বলেছিলাম, শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে। বেশ কয়েকদিন ধরে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। মঙ্গলবার মৃত্যু হারও বেড়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে বলা যেতে পারে।

তবে তার অপেক্ষায় না থেকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, ঘন ঘন হাত ধুতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

এমন মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। মঙ্গলবার টেলিফোনে তিনি বলেন, প্রথম সংক্রমণের সার্বিক হার স্তিমিত হয়ে ফের ঊর্ধ্বমুখী হলে তাকে দ্বিতীয় ঢেউ বলা হয়। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে স্প্যানিশ ফ্লুর মোট তিনটি ঢেউ বা ওয়েভ দেখা গিয়েছিল।

এর মধ্যে দ্বিতীয় ঢেউটা ছিল প্রথমটির তুলনায় মারাত্মক। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে সংক্রমণের হার বাড়ছে এবং দ্বিতীয় ঢেউয়ের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে, এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশেও। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে পুরোপুরি বা শহরভিত্তিক কঠোর লকডাউন এবং কারফিউ শুরু করেছে।

আমাদের দেশে জনসাধারণের ঘরের বাইরে যাওয়া বেড়েছে, জনসমাগম বেড়েছে, অফিস-আদালত, দোকানপাটসহ অনেক কিছুই স্বাভাবিক চলছে। সে কারণে সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে। যারা আগে ঘর থেকে বের হননি, তারাও এখন বের হচ্ছেন।

ফলে নতুন করে সংক্রমণ বাড়লে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত তরুণ জনগোষ্ঠী, শিশু-কিশোররা উপসর্গহীন ক্যারিয়ারে পরিণত হচ্ছে, তারা আবার অন্যদের মধ্যে নিজের অজান্তেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, যেহেতু জনসমাগম বেড়ে চলেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বালাই নেই। জনসাধারণের মধ্যে একটা উদাসীনতা বা শৈথিল্য ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনকি ন্যূনতম মাস্ক পরারও তোয়াক্কা করছে না এবং শারীরিক দূরত্ব মেনে চলছেন না, তাই অদূর ভবিষ্যতে সংক্রমণ আরও বাড়ার ঝুঁকি থাকছে।

অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলেন, কোভিড-১৯ কিন্তু শুরু হয়েছিল গত শীতেই, যা চীনে শীতজুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল। এমনকি শীতপ্রধান দেশগুলোতে সংক্রমণের হার জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে বলে লক্ষ্য করা গেছে। গবেষকরা বলেন, যে কোনো ভাইরাস শীতল ও শুষ্ক আবহাওয়া পছন্দ করে। আর শীতে বাতাসের আর্দ্রতাও কমে, আবহাওয়ার পরিবর্তন এসে শুষ্ক হয়ে যায়।

তা ছাড়া শীতে মানুষের দরজা-জানালা বদ্ধ ঘরে থাকার প্রবণতা বাড়ে, ফলে অ্যারোসল ছড়ায় বেশি। আর তাই বদ্ধ ঘরে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি।

এমনিতেই শীতকালে মানুষের নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি যেমন- ফ্লু, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ (হাঁপানি বা ব্রঙ্কাইটিস) বাড়ে এবং প্রতি বছর এ ধরনের রোগীতে শীতকালে আমাদের হাসপাতাল পূর্ণ হয়ে যায়। তা ছাড়া শীতকালে দুনিয়াজুড়ে বয়স্ক ও শিশুদের ফুসফুস সংক্রমণজনিত মৃত্যুহারও সবচেয়ে বেশি হয়। উপরন্তু এ বছর অনেক নবজাতক শিশু লকডাউন ও মহামারীর কারণে যথাসময়ে সব টিকা পায়নি। ফলে এবার শীতে অনেক বেশিসংখ্যক শিশু নিউমোনিয়া, হুপিং কফ, হাম, মাম্পস ইত্যাদিতে আক্রান্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এমনকি কোভিডসহ অন্যান্য ফুসফুসের সংক্রমণ বাড়বে। এছাড়া শীতকালে সংক্রমণের হার আরও বেড়ে যাওয়ার কারণ হল এ সময়ে আমাদের ঘোরাঘুরি, নানা উৎসব, অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে-শাদি, পিকনিক, ওয়াজ-মাহফিল, মেলা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক কাজকর্মসহ গণজমায়েত বেড়ে যায়। কাজেই এসব অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়বে।

এই ইউজিসি অধ্যাপক বলেন, যেহেতু যথাযথ টিকা এখনও পাওয়া যায়নি, তাই প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতেই হবে। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে বের হতে হয়, তাই বলে বেড়ানো, উৎসব, সামাজিকতা, জনসমাগম করার মতো সার্বিক অবস্থা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। তাই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেন চলা এবং সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মুখে মাস্ক পরতে হবে।

অপ্রয়োজনে বাইরে যাবেন না। কাজ শেষে দ্রুত বাড়ি ফিরতে হবে। বাইরে গেলে যথাসম্ভব শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস অব্যাহত রাখতে হবে।

যেহেতু শীতে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে, তাই প্রশাসনকেও আগেভাগেই সতর্ক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ‘মাস্ক ছাড়া সেবা নয়’, এটা শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবে পরিণত করতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here