হাবিবুর রহমান নাসির ছাতক প্রতিনিধিঃ
ছাতকে এক সপ্তাহ ধরে আটকে রাখা ১৪ বছর বয়সী মাদ্রাসা ছাত্রীকে তার পরিবারের কাছে হস্থান্তর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাদ্রাসা ছাত্রীকে আটকে রাখার ঘটনায় এলাকায় তুলপাড় শুরু হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে ময়মনসিংহ থেকে এনে ঘরে বন্দি অবস্থায় রেখে শারীরীক ও মানষিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহশ দেখাচ্ছে না। বর্তমানে ওই মেয়েটি উপজেলার উত্তর খুরমা ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের খুশিদ আলীর বাড়িতে আটক অবস্থায় রয়েছে। খুশিদ আলীর ছোট ছেলে রিয়াজ উদ্দিন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে অপহরন করে এখানে এনেছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার সরজমিনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। মেয়েটির সাথে কথা বললে সে জানায়, তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাইতল গ্রামে। তার বাবা মোশারফ হোসেন একজন সরকারী চাকুরীজীবী। দু’ বোনের মধ্যে সে বড়। সে পাইতল কামিল মাদ্রাসায় দশম শ্রেনীতে পড়ে। সুদুর গফরগাঁও থেকে এখানে কিভাবে এসেছে এ প্রশ্নের জবাবে সে কিছুই বলতে পারছে না। শুধু ফেলফেল করে চেয়ে থাকতে দেখা গেছে। এসময় মেয়েটি কিছু বলার চেষ্টা করলেই তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বাড়ির লোকজন অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতে শুরু করে। পরিবারের লোকজনের আচরনে ঘটনাটি অপরাধমুলক মনে হয়েছে। রিয়াজের সাথে মেয়েটি পরিচয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করলে রিয়াজের ভাই আইন উদ্দিন উত্তরে জানান, বিগত রমজানে রিয়াজ উদ্দিন গফরগাঁও এলাকায় কারিয়ানা পড়াতে গিয়ে ওই মেয়ের সাথে পরিচয় ঘটে। কদিন আগে ওই মেয়েকে তার ভাই রিয়াজ উদ্দিন গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্টে থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে। এদিকে স্থানীয় লোকজন জানান, রিয়াজ উদ্দিন ওই মেয়েকে অপহরন করে নিয়ে এসে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন এলাকায় তার স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান করেছে। অবশেষে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে মেয়েটিকে তার নিজ বাড়িতে এনে আটকে রাখে। মেয়ের অনুমতি উপেক্ষা করে তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ সৃষ্টি এবং তাকে মারধোরও করেছে রিয়াজ। গত শনিবার রাতে বিয়ের নামে একটি নাটকও মঞ্চস্থ করেছে রিয়াজ ও তার পরিবার। বিয়ের নাটকে কোন কাজী সাহেব না থাকলে নকল কাজী সাজিয়ে গ্রামের সৌদি প্রবাসী রমজান আলীকে উকিল পিতা বানিয়ে বিয়ের নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। বিষয়টি এলাকার মানুষকে এবং ওয়ার মেম্বার ও চেয়ারম্যানকে অজ্ঞাত রেখে অতি গোপনে ওই মেয়েটি নির্যাতন করা হচ্ছে বলে স্থানীদের অভিযোগ। বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। বিয়ের উকিল রমজান আলী জানান, তার বিয়ে দেয়ার মেয়ের আত্মীয়তা সুত্রে রিয়াজের পরিবারের সাথে তার পরিচয়। এ পরিবারের ১০ ভাইয়ের মধ্যে রিয়াজ সব ছোট। পরিবারের লোকজনের কথায় কোন কিছু না বুঝে তিনি উকিল হয়েছেন। রমজান আলীর স্ত্রী জানান, রিয়াজের বিয়েতে তার স্বামী উকিল বাবা হওয়ায় ইসলামী শরীয়াহ মতে নব-দম্পত্তিকে রান্ন করে খাওয়ানোর বিধান রয়েছে ইসলামে। সে হিসেবে রোববার তিনি নব দম্পত্তিকে রান্না করা খাবার নিয়ে রিয়াজের বাড়িতে গিয়েছিলেন। রিয়াজ উদ্দিনের বড় ভাই আইন উদ্দিন জানান, তার ভাই রিয়াজকে খোঁজে এসে এখানে এসেছে। এ হিসেবে তারা মেয়েটিকে আশ্রয় দিয়েছেন। অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় মেয়ের মা-বাবার সাথে যোগাযোগ করে তাকে তার মা-বাবার হাতে তুলে দেয়া হবে। আইনের আশ্রয় বা স্থানীয় মেয়ারম্যান-মেম্বারকে বিষয়টি অবহিত করেছেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে আইন উদ্দিন জানান, এসবের কোন প্রয়োজন নেই। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ জানান, বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। রিয়াজের পরিবার থেকে তাকে জানানো হয়নি। এ বিষয়টি আইনীভাবে সমাধানের প্রয়োজন। ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ আতিকুর রহমান জানান, ঘটনাটি শুনে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরবর্তিতে তদন্ত পূর্ব আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খবর৭১/ইঃ