ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে: তারেক রহমান

0
41

আগামী জাতীয় নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই হতে হবে বলে ফের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পুঁজি। তাই তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, জনগণের বিশ্বাস-ভালোবাসা নষ্ট হয় অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হবে না। জনগণ ও গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চায়, তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে এসে নির্বাচন করুন।
আজ বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। এর আগে বিকাল সাড়ে তিনটায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। বিকাল ৪টায় লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। এই সময় তুমুল করতালির মধ্যে নেতাকর্মীরা তাদের প্রিয় নেতাকে অভিনন্দন জানালে হাত তুলে তাদের শুভেচ্ছা জানান তিনি। এ কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল দশটা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তিন সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। নেতাকর্মীদের স্লোগান ও পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে নয়াপল্টন। লাখো নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পদচারণায় ও স্লোগানে নয়াপল্টন এবং এর আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সবুজ, হলুদ ও লাল রঙের ক্যাপ ও টি-শার্ট পরে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়াপল্টন এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। দুপুর ১২টার মধ্যে সমাবেশস্থল পেরিয়ে তারুণ্যের ঢল নামে বিজয়নগর, পুরানা পল্টন, জিরো পয়েন্ট, ফকিরাপুল, আরামবাগ, মতিঝিল, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মগবাজার, শাহবাগ ও মৎস্যভবনসহ বিভিন্ন এলাকায়। এতে নয়াপল্টনের আশপাশের সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অদূরবর্তী এলাকায় দেখা দেয় তীব্র যানজট। অনেকটা স্থবির সড়কে সাধারণ মানুষকে পায়ে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। স্লোগান আর গান-নাচে প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠে নয়াপল্টনের পরিবেশ। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা। নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ব্যানার, জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ফেস্টুন, টি-শার্ট ও বিভিন্ন রঙের ক্যাপ পরে এবং মাথায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা বেঁধে সমাবেশে আসেন। তারা বিভিন্ন স্লোগানে সমাবেশ প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তুলেন। ওদিকে নয়াপল্টন এবং এর আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। ঢাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা, সিলেট, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের নেতাকর্মীরা ছাড়াও দেশের অন্যান্য জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা এদিন নয়াপল্টনের সমাবেশ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। তরুণদের কাছে টানতে মে মাসজুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির এই তিন সংগঠন। চারটি বড় বিভাগ ও শহরে দুই দিন করে আট দিন সেমিনার ও সমাবেশ করে এসব সংগঠন। এর আগে চট্টগ্রাম, খুলনা আর বগুড়ায় সেমিনার ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মহসমাবেশ ঘিরে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) এবং বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়। এসময় অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. মো. মেহেদী হাসান, ডা. এএসএম রাকিবুল ইসলাম আকাশ ও ডা. তানজীম রুবাইয়াত আফিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনে যাতে হয় সেই প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশের জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি সরকার দ্রুত দেখতে চাই। আবারো আমরা বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। নতুন প্রজন্মের প্রিয় ভাই-বোনেরা, প্রিয় দেশবাসী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আপনারা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান যাতে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, আমি বলতে চাই, আপনারা জনগণের কাছে যান। তাদের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করুন, তাদের প্রত্যাশা বোঝার চেষ্টা করুন, জনগণের মন জয় করুন। কারণ জনগণ সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। এর পরপরই সমাবেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে স্লোগান ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দিল্লি নয় পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ সবার আগে বাংলাদেশ। প্রিয় সমাবেশ বলুন, প্রিয় দেশবাসী বলুন, দিল্লি নয় পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ।
নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা চলছে বলে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে মনে হয় এরই ভেতরে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব শর্তের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। এরই ভিতরে জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কারো কারো মনে হয় কিছু ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। আদালতকে অবমাননা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের সময় আমরা দেখেছি, তারা কিভাবে আদালতকে অবজ্ঞা করেছে, আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করেছে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, পলাতক স্বৈরাচারের পরে যেই সরকারের কাছে দেশের মানুষ আশা করেছিল যে, আইনের প্রতি সম্মান থাকবে। আমরা দেখেছি আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে যারা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছে সেই স্বৈরাচারের যে একই ঘটনা সেটিই পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই সময়ে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার আজকে জিজ্ঞাসা যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, যারা আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করে তাদের কাছ থেকে আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি। আমি প্রায় একটি কথা বলি পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে ব্যক্তি মানসিকতার সংস্কার অনেক বেশি জরুরি। নর্থ কোরিয়ার সংবিধানে লেখা রয়েছে ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব নর্থ কোরিয়া। সুতরাং কি লেখা আছে, তার চেয়েও বেশি যেটি জরুরি তা হলো মেনে চলা। ইশরাকের ক্ষমতা গ্রহণ বা ইশরাকের শপথ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে আজ আমরা আবারো স্বৈরাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি।
তারেক রহমান বলেন, নিরপেক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতাই কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান পুঁজি। তাই তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, তাদের প্রতি আমাদের পরামর্শ থাকবে, জনগণের বিশ্বাস ভালোবাসা নষ্ট হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হবে না। একই সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, গণতন্ত্রকামী জনগণ এবং গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। তিনি বলেন, যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চান তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন, নির্বাচন করুন। যদি ভবিষ্যতে নির্বাচনে জনগণের রায় পান তাহলে আবার সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করুন।
নতুন প্রজন্মের প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোটার সংযুক্ত হয়েছে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, এই নতুন ভোটাররা আজ পর্যন্ত একটি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দিয়ে তাদের নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পায়নি। পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের কাছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা নির্বাচন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। সুতরাং সংস্কার ইস্যুর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেয়া উচিত বলে আমরা বিশ্বাস করি বা আমরা মনে করি।
অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করলেও এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দশ মাসেও সেই নির্বাচন করতে পারছে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময় এই বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন করেছে এবং প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যেই সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে। অতীতেই বাংলাদেশে রেকর্ড রয়েছে তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা সম্ভব। কিন্তু আজ আমরা দেখছি ১০ মাস পার হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না। আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক দায়বদ্ধ একটি সরকার দ্রুত দেখতে চাই।
আর কথামালার রাজনীতি নয় বলে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, গ্লোবালাইজেশনের এই সময়ে মানুষের আকাক্সক্ষা এখন আর স্বপ্ন দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এখন সকলের সামনে সম্ভাবনার সকল দ্বার উন্মুক্ত। এই সম্ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটিয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধি এবং সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে আমাদেরকে। বিএনপির আগামী দিনের রাজনীতি নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির রাজনীতি। এখন বাস্তবায়ন আর দৃষ্টান্ত স্থাপনের রাজনীতি। আগামীতে ক্ষমতায় গেলে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরে কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষুদ্র-কুঠির শিল্পের বিকাশ, গ্রামীণ উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, ব্যাপক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কাজ করার কথা তুলে ধরেন তারেক রহমান। দরিদ্র পরিবারের জন্য ফ্যামিলি কার্ড, প্রান্তিক কৃষক, ভূমিহীন কৃষকদের জন্য ফার্মাস কার্ড চালু, বেকারত্ব দূরীকরণে বিভিন্ন সেক্টরভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির খাতগুলো চিহ্নিত করা, স্কুল-কলেজে তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা প্রবর্তন, ক্রীড়াকে শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা, বিদেশি ভাষা শিক্ষা চালু করা, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক্স, ডেন্টাল হাইজিনিস্ট, মেডিকেল টেকনিশিয়ান গড়ে তুলতে কোর্স চালু করা, বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের চাহিদা অনুযায়ী কর্মী গড়ে তোলা, ফ্রিল্যান্সিং আউট সোর্সিং থেকে আয় বাড়ানো, স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে গ্রামীণ হেলথকেয়ার ওয়ার্কার গড়ে তোলা, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া প্রভৃতি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। আমরা সরকারে না থাকলেও একটি দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে তরুণ প্রজন্মের সামনে দেশ এবং জনগণের উন্নয়নে বিএনপি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে তার কয়েকটি অগ্রাধিকার কর্মসূচি আজ সংক্ষেপে আপনাদের সামনে আমি তুলে ধরলাম। আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশ এবং জনগণের উন্নয়নে পর্যায়ক্রমিকভাবে দলের গৃহীত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করবে ইনশাআল্লাহ। তবে যেকোনো দলের তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে দরকার একটি জবাবদিহিমূলক সরকার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভোট-গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ যারা নির্ধারণ করবে তারাই আজকের তরুণ প্রজন্ম। আর এই বিষয়টি জানান দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছাত্রদল-যুবদল প্রতিষ্ঠা করেছেন। একইভাবে তার সুযোগ্য পুত্র বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তরুণ সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আজকের এই দিনে আমরা তরুণ সমাজের কাছে আবেদন জানাবো জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ভূমিকা রাখার জন্য। ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমাদের কী ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে আপনারা তা জানেন। মিথ্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে কারা ভোগ করতে হয়েছে, তারেক রহমানকেও বানোয়াট মামলায় সাজা দেয়া হয়েছিল। আমাদের একজন কর্মীও বাদ যায় নাই যারা জেল খাটে নাই, মামলার শিকার হয় নাই। আর এই নির্যাতনের শেষ হয়েছে ছাত্র-যুবকদের আন্দোলনের মাধ্যমে। আমরা এই সরকারকে সমর্থন ও সাহস দিয়ে প্রত্যাশা করেছি অতি দ্রুত মানুষের নির্বাচনের অধিকার ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু দশ মাস অতিক্রম করছে আমরা দেখছি জনগণের অধিকারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভোটের অধিকার। আর ভোট এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মতো এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। তিনি আরও বলেন, আমরা বারবার তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি কেন অতি দ্রুত নির্বাচন দরকার। কারণ পতিত সরকার দেশে-বিদেশে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করছে। তা না হলে সংস্কার ও মামলার বিষয়টিকে নির্বাচনের সঙ্গে কেন যুক্ত করা হবে। খালেদা জিয়া টোয়েন্টি থার্টি (২০৩০) ভিশন ঘোষণা করেছেন এবং তারেক রহমান ১৯ দফা কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে তুলে ধরছেন। অর্থাৎ আমরা সংস্কার নিয়ে সব সময় চিন্তা করেছি। কিন্তু সকল সংস্কার এক কথায় করা যাবে না, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনের সংস্কার অতি দ্রুত শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। না হলে এই ষড়যন্ত্র জনগণকে নিয়ে মোকাবিলা করা হবে বলেও উল্লেখ করেন এই নেতা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জনমানুষের আকাক্সিক্ষত সরকার, ছিল আস্থার সরকার। এ সরকারের কাছ থেকে আমরা কিছু পাইনি। এ সরকারের মধ্যে বেশির ভাগ এ দেশের নাগরিক নয়। তারা বলেন, সংস্কার করে নির্বাচন দেবে, কিন্তু তারা ৯ মাসেও সংস্কার করতে পারেননি, ৯ বছরেও পারবে না। কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে, কী সিদ্ধান্ত নেবে তা তারা জানে। মির্জা আব্বাস বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, করিডোর, দ্বিতীয় ওয়ার্ল্ড, স্টারলিংক দিয়ে কী করছেন? আপনারা মনে করছেন বুঝি না? আমরা বুঝি। দেশের মানুষকে বোকা ভাববেন না। তিনি বলেন, দেশপ্রেমিক মানুষের ভেতরে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। আমরা কথা বললেই, কাজ শেষ করার কথা বলেন। আমরা জানি, কোনো কাজ শেষ করতে পারবেন না। এ সরকারের মাথা থেকে আগা পর্যন্ত পচন ধরেছে। এসময় কিছু লোক ইচ্ছাকৃতভাবে চাঁদাবাজি করছে, এদেরকে প্রতিহত করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। একমাত্র তরুণেরাই পারবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিতে। বিএনপি সবসময় তারুণ্যকেই গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। তাই এই সমাবেশ থেকে আহ্বান জানাব, আপনারা ঘরে ফিরে দ্রুত নির্বাচনি রোড ম্যাপ ঘোষণার দাবিতে পাড়ায় মহল্লায় আওয়াজ তুলুন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, তারুণ্যের সমাবেশ আজ তারুণ্যের সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে মঈন খান বলেন, আপনি আজ থেকে দুই দশক আগে যে পরিবর্তনের রাজনীতি শুরু করেছিলেন, আজকে সেই রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, জয়গান হয়েছে। আপনাকে স্যালুট জানাই। দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছিলেন স্বৈরাচার সরকার। আর সেখান থেকে দেশকে বাঁচিয়ে এনেছেন এই তরুণরা। কিন্তু আমাদের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। আর এই সংগ্রামে চলছে বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তারেক রহমান পর্যন্ত। আর এই সংগ্রামে বিএনপির একজন কর্মীও বাদ যায়নি। আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ের সংগ্রামে রয়েছি। এই সংগ্রাম কুসুম আচ্ছন্ন নয়। অত্যন্ত কষ্টের। আমরা দাবি জানাবো তারুণ্যের এই সেন্টিমেন্টের প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আর এজন্য দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। তার জন্য আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। এটা জনগণের দাবি। তাই সরকারের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাবো দ্রুত নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সসম্মানে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। আর এই আন্দোলনে তরুণদের নিয়ে আমরা বিজয়ী হবো এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিচার ও সংস্কারের নামে নির্বাচন পেছানোর কোনো কারণ নেই। বিচার ও সংস্কারের নামে নির্বাচন পেছানো যাবে না। তিনি বলেন, আজকে আমরা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, সেখান থেকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি। আর সেই বার্তা হলো গণতন্ত্র, আর এই গণতন্ত্র হলো নির্বাচন। এখানে সংস্কার ও বিচারের কথা বলে নির্বাচন পেছানোর কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, বিএনপির আগে কেউ সংস্কারের কথা বলেনি। বেগম জিয়া অনেক আগেই ভিশন ২০৩০ দিয়েছিলেন। আর গত দুই বছর আগে ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে তারেক রহমান প্রথমে ২৮ দফার সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, পরে যা ৩১ দফায় রূপ নেয়। তাই বলতে চাই এই সংস্কারের বাহানা করে নির্বাচন পেছানো যাবে না। তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ে বেশি ত্যাগ এ দেশে কেউ করেনি। তাই এদেশে যদি সংস্কার ও বিচার করতে হয় তাহলে সেটা বিএনপি করবে ক্ষমতায় এসে। তিনি আরও বলেন, তারুণ্যের এই সমাবেশে তরুণরা উপস্থিত হয়েছে তাদের ভোটের অধিকার চাইতে। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাদের এই আশা পূরণের জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করুন।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তারুণ্যের ভাবনায় সারাদেশে নির্বাচনি আহ্বান জানাতে আজ এখানে এসেছি। তিনি বলেন, একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ফিরে আসবে আর এই কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে তরুণরাই। জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরানোর জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা ভুলতে বসেছি আওয়ামী সরকারের গুম-খুম-নির্যাতনের কথা। এই নেতা বলেন, আমরা এসেছি দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা চাই আদালতের সুষ্ঠু রায় বাস্তবায়ন হোক। তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে সকলকে আহ্বান জানাবো আমরা যেন ঐক্য ধরে রাখি। যাতে দেশে আর কোনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদের উৎপাত না হয়। আমরা সেরকম রাষ্ট্র সংস্কার চাই যে রাষ্ট্রে আর কোনো স্বৈরাচারী-ফ্যাসিবাদের আবির্ভাব না হয়। তিনি বলেন, এই দেশে ২০০ বছরের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যেভাবে শোষণ করেছিল তার চেয়েও বেশি লুটপাট করেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার। ৩০ লাখ কোটি টাকার জনগণের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। চার লাখ কোটি টাকা ব্যাংকের ঋণ রেখে গেছে। আড়াই হাজার কোটি টাকার মেগা দুর্নীতি করেছে হাসিনার সরকার। তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী দুর্নীতির কথা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আওয়ামী লীগ জন্ম থেকে কখনোই গণতন্ত্রকে রক্ষা করেনি। যখন ক্ষমতায় গেছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হরণ করেছে বলেও উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের যৌথ সঞ্চালনায় তারুণ্যের সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ।
এছাড়া সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, এমরান সালেহ প্রিন্স, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ লাখ লাখ নেতাকর্মী তারুণ্য সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here