হিন্দু সেজে ২৩ দিন পাহাড়ের মন্দিরে ছিলেন ফয়সাল-মোস্তাফিজ

0
51

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যার ঘটনায় দুই পলাতক আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজ পরিচয় গোপন করে একটি মন্দিরে আত্মগোপন করে ছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।

বুধবার (২৬ জুন) রাতে তিনি এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে বিকেলে হেলিকপ্টারে করে খাগড়াছড়ি থেকে এই দুই আসামিকে ঢাকায় আনা হয়। এরও আগে, হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে ধরতে ডিবির একাধিক টিম খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামে সাঁড়াশি অভিযান চালায়। সন্দেহভাজন আসামিদের মধ্যে মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল এমপি আজীম খুন হওয়ার আগে গত ২ মে কলকাতায় যান।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাথাল কালীমন্দীর এলাকায় শীতাকুন্ড পাহাড়ের নিচে, পলাশ ও শিমুল রায় নামে হিন্দু সেজে তারা ২৩ দিন ধরে অবস্থান করছিলেন। এমপি আজীমকে হত্যার পর গত ২৯ মে তারা বাংলাদেশে আসে।

ডিবির এই কমকর্তা দাবি করেন, এমপি আজীম হত্যায় এরই মধ্যে গ্রেপ্তার শিমুল ভূঁইয়ার সাথে থেকে ফয়সাল, মোস্তাফিজ, জিহাদ কিলিং মিশনে অংশ নেয়। আর মূল ঘাতক ছিলেন শিমুল ভূঁইয়া। মাত্র ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে এমপি আজীমকে হত্যার জন্য তাদেরকে কলকাতায় নেয়া হয়। গ্রেপ্তার মোস্তাফিজ ও ফয়সাল বিভিন্নভাবে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল। যে ৭ জন কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছিলো, এরা ছিলো শিমুলের পর এই ২য় ও ৩য় ব্যক্তি।

এ হত্যাকাণ্ডের মুল সন্দেহভাজন আক্তারুজ্জামান শাহীনকে গ্রেপ্তার করতে আমেরিকান ইন্টেলিজেন্সকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে হারুন বলেন, ভারতের সাথে আমেরিকার বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় ভারতের জন্য শাহীনকে গ্রেপ্তার করা সহজ হবে। আর এখন পর্যন্ত এমপি আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হলেন পাঁচজন। তারা হলেন- আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও সিলিস্তি রহমান। পরে গ্রেপ্তার করা হয় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গ্যাস বাবু ও সাইদুল করিম মিন্টু।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মে কলকাতায় চিকিৎসা করানোর জন্য যান ঝিনাইদহের সাংসদ আনোয়ারুল আজীম। কলকাতা পুলিশ জানায়, ১৩ মে নিউটাউনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন এই সংসদ সদস্য। এ ঘটনায় আজীমের খোঁজ চেয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরুর পর আসতে থাকে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তবে আজীমের মরদেহ পাওয়া যায়নি।

গ্রেপ্তার হওয়া শিমুল, সেলেস্তা ও তানভীর এরই মধ্যে এমপি আজীমকে অহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তারা বর্তমানে কারাগারে আছেন। এ ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত মার্কিন নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহীন আমেরিকা পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, কলকাতা পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার জিহাদ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আজীমের মরদেহ থেকে হাড় ও মাংস আলাদা করার কাজটি মূলত সে-ই করেছে। গ্রেপ্তার সিয়ামের দেয়া তথ্য অনুযায়ী রোববার কলকাতা থেকে কিছু হাড় উদ্ধার করেছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি। তবে এগুলো এমপি আজীমের কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এর আগে তদন্তের অংশ হিসেবে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে একটি দল সম্প্রতি কলকাতায় যায়। গত ২৮ মে বিকেলে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রায় ৪ কেজি মাংসের টুকরা উদ্ধার করে ডিবি ও কলকাতা সিআইডির যৌথ দল। সে সময় ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে এটি আজীমের দেহাবশেষ। ফরেনসিক টেস্টের মাধ্যমে পরে জানা যাবে এটি তার দেহাংশ কিনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here