প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে উদ্ভাবনীমূলক ও সৃজনশীল পদক্ষেপ দেখা যায়নি। অর্থনীতিতে যে সংকট দেখা দিয়েছে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো দিক-নির্দেশনাও নেই এই বাজেটে। সবমিলিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক বাজেট হিসাবেই দেখছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। একইসঙ্গে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার বিষয়টিকে অনৈতিক ও দুঃখজনক বলছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এসব কথা বলেন।
ফাহামিদ খাতুন বলেন, ‘অপ্রর্দশিত কিংবা কালো টাকা ১৫ শতাংশ কর দিয়েই যে সাদা করা যাবে, এই প্রস্তাবনাটি রাখা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি নৈতিক ও অর্থনৈতিক কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য না। সামজিক ন্যায়ের দিক থেকেও এটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘মোবাইল ফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ বাড়া, সিম কার্ডে কর বাড়ানো, বিভিন্ন বিনোদন স্পটে প্রবেশে কর- এগুলো মানুষের উপর করের বোঝা বাড়াবে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।’
আইএমএফ’র যে লক্ষ্য দিয়েছে বাজেটে তা পূরণের চেষ্টা করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে এই যে লক্ষ্যমাত্রাগুলো ধরা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশ। যেটা গত ২৪ মাস ধরে ৯ শতাংশের উপরে বা ১০ শতাংশ ছুঁইছুঁই করছে। আমরা একবছরে সেটি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনবো, সেটি খুবই চ্যালেঞ্জিং বিষয়। লক্ষ্যমাত্রাগুলোর সঙ্গে বাস্তবতারা ছোঁয়া নেই।’
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্যে বাজেটটি দেওয়া হলো, আমাদের আশা ছিলো, এই বাজেটটি অনেকটা উদ্ভাবনীমূলক বাজেট হবে। এখানে সৃজনশীল কিছু পদক্ষেপ থাকবে এবং কিছু সাহসী পদক্ষেপ থাকবে। এই যে চ্যালেঞ্জিং সময়ে গতানুগতিক বাজেট কোন ধরণের সমস্যার সমাধান দিতে পারে না। প্রস্তাবিত এই বাজেটকে আমাদের মনে হয়েছে এটি অতীতের আরেকটি বাজেটের মতোই।’
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। এরপর স্পিকারের অনুমতি নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের সারসংক্ষেপ পাঠ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ শিরোনামের বাজেট বক্তৃতার বাকি অংশ পঠিত বলে গণ্য হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। দেশের ৫৪তম এই বাজেটে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের ঘাটতি দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এই বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির গড় হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশে সীমিত রাখার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।