খবর ৭১: তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের সহযোগিতা এবং বহুমাত্রিক সম্পর্ক দিন দিন দৃঢ়তর হচ্ছে। সুতরাং কোনো একটা ভিসানীতি বা কিছু নিয়ে কারো পুলকিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এই নীতি তাদের বিরুদ্ধেই প্রযোজ্য হবে, যারা নির্বাচনে বাধা দেবে।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাথে জননেত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ সেটিই প্রমাণ করে।’
রোববার দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেসক্লাবে উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অকুতোভয় বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমসাময়িক প্রসঙ্গে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বিএনপি নানা ধরণের কথা বলে। ভিসানীতি ঘোষণার পর এক কথা বলে, আবার পত্রিকায় গত পরশু দিন খবর আসার পর আরেক ধরণের কথা বলে। এগুলো বলে কোনো লাভ নেই।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু পরাশক্তি আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো। কিন্তু সেইসব রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আমাদের পূর্বসূরী মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলো। আজকেও অনেকেই চোখ রাঙ্গায়, অনেক দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র হয়। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার ধমনীতে, শিরায় বঙ্গবন্ধুর রক্তস্রোত প্রবাহমান, যে রক্ত পরাভব মানে না, আপোষ জানে না। সমস্ত ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে দেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে।’
হাছান বলেন, ‘১৯৭১ সালে যারা দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তাদেরই নতুন সংস্করণ হচ্ছে বিএনপি। এবং তাদের সহযোগী হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী, যারা দেশের স্বাধীনতার শুধু বিরোধিতাই করেনি, স্বাধীনতা সংগ্রামে এদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে অস্ত্রধারণ করেছিল। তাই এই বিএনপি-জামাত চক্র আজকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে, আগামী নির্বাচনকে ভন্ডুল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
‘কিন্তু, সমস্ত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আগামী নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে’ প্রত্যয় ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান বলেন, ‘সেই নির্বাচনে যদি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসে আমরা স্বাগত জানাই। তবে কেউ না আসলেও কোনো অসুবিধা নাই। এই নির্বাচন আমাদের, এই দেশ আমাদের, এখানে নির্বাচন কিভাবে হবে সেটি আমরা ঠিক করবো। আমাদেরকে কারো গণতন্ত্র শেখাতে হবে না। গণতান্ত্রিক রীতিনীতির চর্চা আমরা জানি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অবশ্যই অব্যাহত থাকবে।’
বিপ্লবী প্রীতিলতা, সুর্যসেন আজও দেশবিরোধীদেরকে প্রতিরোধের অনুপ্রেরণা : তথ্যমন্ত্রী
এর আগে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, দেশবিরোধীদের প্রতিরোধে প্রীতিলতা, সুর্যসেনের মতো বিপ্লবীরা আজও আমাদের অনুপ্রেরণা।
১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণকারী ও ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা থেকে স্বদেশভূমির স্বাধীনতার জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গনকারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান বলেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রথম বাঙালি শহীদ নারী যিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে আত্মাহুতি দিয়েছেন। অত্যন্ত মেধাবী প্রীতিলতা মেট্রিকুলেশন ও ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রামে অপর্ণাচরণ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন, সেই স্কুল এখনও আছে।
তিনি বলেন, সূর্যসেনের বিপ্লবী দলের সদস্য অসীম সাহসী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার যখন পুরুষের বেশে ইউরোপীয়ন ক্লাব সফলভাবে আক্রমণ করে ফিরে আসছিলেন, তখন তিনি গুলিবিদ্ধ হন। নির্যাতনের মাধ্যমে তার কাছ থেকে ব্রিটিশ শত্রুপক্ষ বিদ্রোহের পরিকল্পনা যেন না জানতে পারে, সে জন্য তিনি পটাসিয়াম সায়ানাইড পান করে আত্মাহুতি দেন।
ইতিহাসের দিকে দৃকপাত করে হাছান মাহমুদ উল্লেখ করেন, প্রীতিলতার পরনের পোষাকে ৩২ পৃষ্ঠার একটি জবানবন্দি ছিলো। তিনি সেখানে লিখেছিলেন যে, ‘…..অত্যাচার ও স্বার্থসাধনে নিয়োজিত সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ সাধন করিয়া আমি ভারতবর্ষে গণতান্ত্রিক শাসন প্রবর্তন করিতে ইচ্ছুক। আমি সেই ভারতীয় রিপাবলিকান আর্মির চট্টগ্রাম শাখার একজন সদস্য।….আমার দেশের ভগ্নীরা আজ নিজেকে দুর্বল মনে করেন না। সশস্ত্র ভারতীয় নারী হিসেবে সহস্র বিপদ ও বাধাকে তুচ্ছ করিয়া এই বিদ্রোহ আন্দোলনে যোগদান করিলাম। তাহার জন্য নিজেকে তৈয়ার করিলাম এবং এই আশা লইয়াই আমি আজ আত্মদানে নিজেকে উৎসর্গ করিলাম।’
মন্ত্রী বলেন, প্রীতিলতা যেভাবে আত্মহুতি দিয়েছিলেন, তা উপমহাদেশের সমস্ত মুক্তিকামী মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলো, অনুপ্রাণিত করেছিলো। সূর্যসেন বিয়ে করেছিলেন কিন্তু সংসার করতে পারে নাই। বিয়ের রাতেই দেশমাতৃকার জন্য নববধূর কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। এই ছিলেন মাস্টারদা। চট্টগ্রামে বিপ্লবী আন্দোলনের এই গৌরবগাঁথা আজও আমাদের যেভাবে অনুপ্রাণিত করছে, সেটি অভাবনীয়।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যেভাবে দেশমাতৃকার জন্য জীবন দিয়েছে, উপমহাদেশের মুক্তিসংগ্রাম এবং আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের এই আত্মদান বাঙালিদের প্রেরণা যুগিয়েছে, ভবিষ্যতেও যোগাবে। আজকে তাই সূর্যসেনের প্রতি, প্রীতিলতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও প্রণতি জানাই।’
নিজের স্মৃতিচারণ করে চট্টগ্রামের সন্তান হাছান মাহমুদ বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমি মুক্তিযুদ্ধের বিভীষিকা দেখেছি। মায়ের আচঁলের নিচে বসে শ্লোগান শুনেছি “বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো। তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা”। সেই শ্লোগানেই আমার কচি রক্তে আগুন ধরেছে। ইচ্ছে হতো মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেই। নানার বাড়িতে গল্প শোনাতো যে প্যালেস্টাইনে কিভাবে শিশুরা বুকে মাইন পেতে ট্যাঙ্ক উড়িয়ে দিতো। সেই গল্প শুনে সে রকমই আত্মাহুতি দেওয়ার ইচ্ছা জাগতো। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে আমি যেতে পারি নাই। কিন্তু বয়স আমার প্রতিবন্ধক ছিলো।’
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কার্যকরী সভাপতি স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের সংগীতশিল্পী মোহাম্মদ রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এডভোকেট বলরাম পোদ্দার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, একুশে পদকপ্রাপ্ত স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল ও ডা: অরূপ রতন চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মানিক লাল ঘোষ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা প্রমুখ সভায় বক্তব্য রাখেন।