থানায় নিয়ে যুবলীগ নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ!

0
159

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসির বিরুদ্ধে জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান পুলক ও ক্রীড়া সম্পাদক খালিদ সিরাজ রকিকে আটক করে থানায় নিয়ে কাস্টরিতে রেখে চোখে গামছা বেঁধে ও হাতে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে অমানবিকভাবে মারধর করে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ঠাকুরগাঁও জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ আপেল ও সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত সমীর।
গত মঙ্গলবার (২ মে) ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার বরাবর এ অভিযোগ দাখিল করেন তারা। অভিযোগে জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও সাধারণ পাঠাগার চত্বরে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলায় দর্শনার্থী হিসেবে যায় জেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক খালিদ সিরাজ রকি। এসময় কতিপয় ছেলে অকারণে হট্টগোল করলে এতে সে বাঁধা দেয় এবং তাদের ঝগড়া নিরসনের চেষ্টা করে। এদিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে কোনকিছু না শুনে রকিকে মারধর শুরু করে এবং টেনে-হেচড়ে পুলিশ ভ্যানে নেওয়ার চেষ্টা করে। এদিকে এ বিষয়ে জানতে পেরে যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান পুলক। এসময় তিনি সদর থানার ওসি মো: কামাল হোসেনকে তাকে আটকের বিষয়ে ও মারধরের কারণ জানতে চান। কিন্তু ওসি তার কথা কর্ণপাত না করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় উল্টো পুলকের উপর চড়াও হন এবং রকি ও পুলককে মারধর করতে করতে থানায় নিয়ে যান। এরপর থানা হাজতে নিয়ে চোখে গামছা পেঁচিয়ে ও হাতে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে আসাদুজ্জামান পুলককে বেধড়ক পিটিয়ে বাঁ হাত ভেঙ্গে দেন। একপর্যায়ে তারা নিস্তেজ হলে তাদের মধ্যরাতে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন এবং পরদিন তাদের দুজনের নামে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৫১ ধারা মতে মামলা দায়ের করে আদালতে সোপর্দ করেন। এ বিষয়ে হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান পুলক কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, কোন রকম অন্যায় না করার পরও ওসি কামাল হোসেন উদ্দেশ্যমুলকভাবে তার উপর পাশবিক নির্যাতন করেছে। তিনি জানান, ঘটনার দিন তিনি বাসাতেই ছিলেন। এমন সময় তার কাছে খবর আসে বৈশাখী মেলা প্রাঙ্গনে জেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক খালিদ সিরাজ রকিকে পুলিশ বেধরক মারধর করছে, বিষয়টি তিনি জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সা: সম্পাদককে জানালে তারা ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। তাদের নির্দেশ পালনে এবং মেলা প্রাঙ্গন তার বাড়ীর পাশ্ববর্তী হওয়ায় দ্রুত তিনি ঘটনাস্থলে হাজির হন। এসময় তিনি সদর থানার ওসির কাছে রকিকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং আমার সাথে অসদাচারণ করতে থাকেন। এসময় তিনি দলীয় পরিচয় দিলে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং সাথে সাথে আরও ফোর্স আনিয়ে আমাকে ও রকিকে টেনে হিচড়ে থানায় নিয়ে যান। যাওয়ার সাথে সাথেই তিনি আমাকে একটি কক্ষে প্রবেশ করিয়ে ৪-৫জন পুলিশ সদস্য দিয়ে বেধড়ক পিটান। এসময় একটি হান্ডার (পুলিশের লাঠি) ভেঙ্গে গেলে তারা ওসিকে ডেকে এনে বলেন ওর খুব তেজ। এরপর ওসির নির্দেশে আমার চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে হাতে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে ফ্লোরে শুইয়ে দেওয়া হয় আর আমার উপর চালায় পাশবিক নির্যাতন। পুলক কান্নাজড়িত কন্ঠে আরও জানান, আমাকে পেটানো হচ্ছে আর বলা হচ্ছে “বল তোর বাপ পুলিশ”। আমি এসময় বলি আমার বাবা একজন এবং তিনি মারা গেছেন-এটা বলার সাথে সাথে আরও মারধরের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, আর বলে ‘দেখি আজ তোর কোন যুবলীগ-আ’লীগের বাপ তোকে বাঁচায়! পরে আমি তাদের নির্যাতনে অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পরে আমার জ্ঞান ফিরলে মধ্যরাতে সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট দেয়। এসময় চিকিৎসক আমার কাছে মারধরের ঘটনা জানতে চাইলেও ওসি এতে বাঁধা দেন। আমার হাত ভেঙ্গে যাওয়ায় এক্সরে করার নির্দেশনা থাকলেও ওসি আমাকে ওই অবস্থাতেই থানা কাষ্টরিতে রেখে দেয়। পরদিন সকাল ৯টার মধ্যেই আবার আমাদের কোর্টে চালান করে। আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এই অত্যাচারী ওসি’র দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানাই।

মারধরের বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি মো: কামাল হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি জানান, ঘটনার দিন মেলা কমিটি মৌখিক অভিযোগ করেন মেলায় কতিপয় ছেলে নেশাগ্রস্ত হয়ে মাতলামি করছে-এমন খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদের আটক করে থানায় নেয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে ১৫১ ধারায় মামলা দাখিল করে তাদের কোর্টে চালান দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, তাদের ছাড়তে জেলা যুবলীগের নেতৃবৃন্দরা তদবির করলেও তাদের না ছাড়ায় এখন তারা আমার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলেছেন।

এদিকে এ বিষয়ে বৈশাখী মেলা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান সাবু’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সেদিনের বিষয়ে মেলা কমিটির পক্ষ থেকে কেউ থানায় কোনো অভিযোগ বা লিখিত অভিযোগ করেননি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here