চার কারণে কমছে রপ্তানি আয়

0
66

খবর৭১ঃ
একক পণ্য ও একক বাজার বা অঞ্চল নির্ভরতা দেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৬ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে। এরমধ্যে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি আয়ের ৭৮ শতাংশই আসছে। হঠাৎ কোনো কারণে একক পণ্যের চাহিদা কমে গিয়ে রপ্তানিতে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। আবার কোনো অঞ্চলে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক বা কূটনৈতিক কারণে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলে রপ্তানি আয়ে পতন ঠেকানো যাবে না। ফলে দ্রুত নতুন বাজার সন্ধান করে রপ্তানি আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়াও চ্যালেঞ্জিং হবে। এসব কারণে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে একক পণ্যের ও একক বাজারের ওপর নির্ভর করা এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে রপ্তানি আয়ে ঝুঁকি কমাতে একক পণ্যের ওপর নির্ভরতার পরিবর্তে নতুন নতুন পণ্য সংযোজনে গুরুত্বারোপ করা হয়। একই সঙ্গে একক বাজার বা অঞ্চলে রপ্তানি সীমাবদ্ধ না রেখে নতুন বাজার সন্ধানে গুরুত্ব দেওয়া হয় ওই গবেষণা প্রতিবেদনে।

এদিকে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও বৈশ্বিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় রপ্তানির নতুন নতুন বাজার সন্ধান ও পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিয়েছেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো থেকেও পণ্যের বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার সুফল মিলছে না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে উদ্যোক্তারা নতুন বাজার খোঁজা শুরু করেছেন। নতুন বাজারে পণ্য রপ্তানি বাড়ছে খুব ধীর গতিতে। মোট রপ্তানি আয়ের মাত্র ৪ শতাংশ হচ্ছে নতুন বাজারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রপ্তানি আয় কমছে। এগুলো হচ্ছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে গেছে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানির বাজারগুলোতে প্রবল অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এদিকে দেশের ভেতরে ডলার, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ না থাকা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কোনো কারণে বাংলাদেশের প্রধান দুটি রপ্তানির বাজারে পোশাকের চাহিদা কমে গেলে বিকল্প কোনো পণ্যের রপ্তানি বাড়িয়ে ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে না। একইভাবে বাংলাদেশের কোনো বড় রপ্তানির বাজারে সমস্যা দেখা দিলে তার বিকল্প হিসাবে অন্য কোনো বাজার দ্রুত ধরাও সম্ভব হবে না। এসব কারণে রপ্তানিতে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। রপ্তানি টেকসই করতে একক পণ্যের ও একক দেশ বা অঞ্চলের নির্ভরতা কমাতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, অনেক দিন ধরেই বলা হচ্ছে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে। কিন্তু বিষয়টি এগোয়নি। কারণ দেশে প্রযুক্তিনির্ভর বড় শিল্প গড়ে উঠেনি। এ খাতে সরকারের নীতি সহায়তাও কম। যৌথ উদ্যোগে এসব কারখানা করার জন্য বিদেশি বিনিয়োগও আসছে না।
তিনি আরও বলেন, পোশাক খাতের ওপর নির্ভরতা কমাতে প্রযুক্তিনির্ভর পণ্যের কারখানা করতে হবে। এ জন্য বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। বিনিয়োগ আনতে হলে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তা হলে এটি সম্ভব হবে। ছোট ও ক্ষুদ্র শিল্পের পণ্য রপ্তানি করে আয় বেশি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ এ খাতের উদ্যোক্তারা রপ্তানির বাজার ধরতে পারছে না। তাদেরকে রপ্তানি করতে তেমন কোনো সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের রপ্তানি আয় এককভাবে তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। মোট রপ্তানি আয়ের ৮৬ শতাংশই আসে এ খাত থেকে। তৈরি পোশাকের ৭৮ শতাংশই রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে ২৬ শতাংশ এবং ইউরোপে ৫২ শতাংশ। বাকি ২২ শতাংশ যাচ্ছে অন্যান্য দেশে। এর মধ্যে চীন, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের পোশাকের বড় বাজার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে এখন চলছে বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা। ২০২০ সালে করোনার সংক্রমণের পর থেকে এ মন্দা শুরু হয়। গত বছরের ফেব্র“য়ারির শেষ দিকে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে বিশ্বব্যাপী পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে দাম বেড়ে যায়। এতে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়। অর্থনৈতিক মন্দা প্রকট হতে থাকে। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। এসব দেশে মূল্যস্ফীতির হার ৪০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। ইউরোপে এ হার ৯ শতাংশ অতিক্রম করে। আমেরিকাতে ৮ শতাংশ অতিক্রম করে।

মূল্যস্ফীতির ধকল ঠেকাতে ওইসব দেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশ সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ছোট করে ফেলে। এতে কর্মসংস্থান কমে যায়। পণ্যমূল্য ও মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় মানুষের আয় হয় নিুমুখী। কমে যায় ক্রয় ক্ষমতা। ফলে তারা আমদানি কমিয়ে দেয়। এতে ওইসব দেশে বাংলাদেশের রপ্তানিও কমে যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে গত অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ৪১ শতাংশ, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে হয়েছে ১৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ওই সময়ে প্রবৃদ্ধি তো হয়নি। উল্টো আরও কমেছে ২ দশমিক ২১ শতাংশ। অন্যান্য দেশে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ৩৩ শতাংশ থেকে বেড়ে সাড়ে ৫০ শতাংশ হয়েছে। তবে এসব দেশে রপ্তানি কম বলে মোট রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বরং মোট রপ্তানি আয় কমেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here