এবার ফ্যানে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে পাকিস্তান

0
100

খবর৭১ঃ

দেশজুড়ে অভাব-হাহাকার। ঋণের জন্য আইএমএফের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান। নিজেরাও নিচ্ছে ভিন্নধর্মী নানা পদক্ষেপ।

বিদ্যুৎ খরচ রোধে এবার স্বল্প শক্তির সাশ্রয়ী যন্ত্রের উৎপাদনের দিকে ঝুঁকেছে দেশটির সরকার। নিষিদ্ধ করেছে ঐতিহ্যবাহী ফ্যান উৎপাদন ও তার ব্যবহার।

বুধবার শক্তি সংরক্ষণ পরিকল্পনার আওতায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির ফেডারেল সরকার। আগামী ১ জুন থেকে এটি কার্যকর হবে।

‘দেউলিয়া’ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এর আগেও এমন নানা বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়েছে অভাবে দিশাহারা দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার।

শিগগিরই এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রণ আদেশ (এসআরও) জারি করা হবে। ন্যাশনাল এনার্জি এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন অথরিটি (এনইইসিএ)কে ৮০ ওয়াটের কম শক্তির ফ্যানের উৎপাদন নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল অথরিটিকে (পিএসকিউসিএ) ফ্যান উৎপাদনের জন্য জাতীয় মান সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সিদ্ধান্ত অনুসারে, ৮০ ওয়াটের কম খরচ হয় এমন ‘ওয়ান স্টার’ ক্যাটাগরির ফ্যান তৈরি এবং বিক্রির অনুমতি দেওয়া হবে।

এসির ইনভার্টারসহ ফ্যানগুলো ফাইফ স্টার ক্যাগাটরির, এগুলো প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্যান উৎপাদনের জন্য পাকিস্তানের ফ্যান উৎপাদন শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী সমিতির সঙ্গে পরামর্শ করা হবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্বের মতোই এই শিল্পকেও উন্নত করা যায় সে ব্যাপারে বৈঠক হবে।

জনসাধারণের কাছে ফ্যানগুলো সাশ্রয়ী করতে, ভোক্তাদের কাছে কিস্তিতে বিক্রি করার জন্য একটি প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। হয়তোবা তাদের খরচ বিদ্যুৎ বিলের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে।

এছাড়া, একটি বাড়িতে শুধু একটি ফ্যান বরাদ্দ করা হবে। পাওয়ার ডিভিশন পাকিস্তানে তৈরি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলোর কর্মক্ষমতা মান পর্যবেক্ষণ করবে।

৯০ শতাংশ বা তার কম শক্তি দক্ষতাসহ গৃহস্থালির বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি উৎপাদন নিষিদ্ধ থাকবে। বিদ্যুৎ বিভাগ ৯০ শতাংশ বা তার কম দক্ষতার বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছে।

পাকিস্তান ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রুপির দাম পড়তে পড়তে এখন ডলারপ্রতি ২৬৫ রুপিতে দাঁড়িয়েছে। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে চাপে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। আটা, ডাল, চাল, দুধ সবকিছুরই দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এ অবস্থায় দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়ের চায়ের দামও আকাশছোঁয়া। বাড়ছে রকেট গতিতে। খোলাবাজারে দাম এখন এক হাজার ৬০০ পাকিস্তানি রুপিতে পৌঁছেছে।

বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ঠেকেছে তলানিতে। অবস্থা পুনরুদ্ধারে নিত্যনতুন সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে দেশটির সরকার। স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ৩ ফেব্র“য়ারি দেওয়া হিসাব অনুসারে, চরম আর্থিক সংকটে থাকা দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ১৭ কোটি ডলার কমে গেছে। এখন এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯০ কোটি ডলার।

পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে অর্থ চেয়েছে। গত মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জানিয়েছেন, কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসাবে পাকিস্তানের মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের ভাতা ও ভ্রমণ ব্যয় কাটছাঁট করছে দেশটির সরকার। তার সরকার কৃচ্ছ্রসাধন অভিযানের মাধ্যমে বার্ষিক ২০০ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি সাশ্রয় করতে চায়।

চরম অর্থনৈতিক সংকটে বিদ্যুৎ বাঁচাতে ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা বেলাই শপিংমল, বিয়ে বাড়ি বন্ধ করছে পাকিস্তান সরকার। একই দিনে পাকিস্তানের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা জ্বালানি সংরক্ষণ এবং আমদানি করা তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে জাতীয় শক্তি সংরক্ষণ পরিকল্পনার অনুমোদন করেন।

১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাল্ব উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে দেশটিতে। দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এই পদক্ষেপ আরও দেশটির ২২ বিলিয়ন রুপি বাঁচাতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া সরকার এক বছরের মধ্যে কনিক্যাল গিজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করবে, যা কম গ্যাস ব্যবহার করে ৯২ বিলিয়ন রুপি বাঁচাবে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here