ষষ্ঠ-সপ্তমের দুই বিতর্কিত বই ‘না থাকলেও সমস্যা নেই’

0
139

খবর৭১ঃ

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে। বইয়ের কিছু বিষয়বস্তু নিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় সংশোধনের জন্য এই দুই বই প্রত্যাহার করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বই দুটি ছাড়াই এখন চলছে শ্রেণি কার্যক্রম। তবে এগুলো না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই বলে মনে করেন শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার সরজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দাবি, যতদ্রুত সম্ভব ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির প্রণীত ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠদানের বই সংশোধন হয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাক।

শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের শিক্ষকরা বলছেন এই দুই বই না থাকলেও কোনো ধরনের সমস্যা হবে না পড়াশোনায়। কিন্তু বইগুলো ঠিক হয়ে আসতে আসতে পরীক্ষা চলে আসবে এবং রেজাল্ট খারাপ হবে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, এই দুই বইয়ের বাইরে আরও কিছু বইয়ে সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর বাইরেও ধর্মভিত্তিক দলগুলোর চাপও ছিল। এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তকের ভুল এবং সংশ্লিষ্টদের কেউ দায়ী থাকলে তা খুঁজে বের করতে দুটি কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে একটি কমিটি সাত সদস্যের আরেকটি পাঁচ সদস্যের।

এই সাত সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. ওয়াহেদুজ্জামান চান, অন্য কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তার। এ কমিটির কাজ হবে পাঠ্যপুস্তকের ভুল ও বিতর্কিত বিষয় খুঁজে বের করা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি)’র কোন কোন কর্মকর্তা জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হবে।

পাঠ্যপুস্তকে ভুলে ভরা, ইন্টারনেট থেকে হুবহু কপি করে পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা, ভুল তথ্য, ইতিহাস বিকৃতি, ইসলামবিরোধী ছবিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা সমালোচনার সূত্রপাত হয়। মানুষ বানর থেকে তৈরি, যৌনতা ও নগ্ন ছবি বইয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও গুজব ছড়ানো হয়। সর্বশেষ সমালোচনার মুখে এনসিটিবি দুটি বই প্রত্যাহার ও তিনটি বই সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী আফসানা আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নতুন বই পাওয়ার কিছুদিন পরই আমাদের স্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দুই বইয়ে কিছু ভুল আছে। ফলে এই দুই বই না পড়তে বলেছেন। এজন্য আমরা আর এই বইগুলো পড়ছি না।’

আফসানা আক্তার বলেন, ‘বই সংশোধন দ্রুত না হলে আমাদের পড়াশোনায় ক্ষতি হবে। পরীক্ষার সময় রেজাল্টও ভালো হবে না। আমাদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব নতুন বই আমাদের হাতে এসে পৌঁছুক।’

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী আকলিমা বেগম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ক্লাসে শিক্ষকরা আমাদেরকে বলেছেন এই দুই বই সংশোধন হয়ে না আসলেও আমাদের পড়ার ক্ষেত্রে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। তবে আমরা চাই দ্রুত বইগুলো সংশোধন হয়ে আমাদের কাছে চলে আসুক।’

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ.ন.ম শামসুল আলম খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির প্রণীত ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠদান থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এবং দুই বইয়ের ভুল সংশোধন হয়ে হাতে আসার পর শিক্ষার্থীরা প্রণীত ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ করতে পারবে। এখন এ দুই বই ছাড়াই ক্লাস হচ্ছে।’

আ.ন.ম শামসুল আলম খান বলেন, ‘আমরা জানি এই দুই বইয়ের পাশাপাশি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আরও কিছু বই।’

এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বই দুটিতে আপত্তিকর ছবি আছে। সারাদেশে আলোচনা-সমালোচনা আপত্তি উঠেছিল। এজন্য এই দুই বই প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুটি বই বাতিল করা হয়েছে।’

এনসিটিবি সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে আমি মনে করি এই দুই বই স্থগিত করলেও পড়ার ক্ষেত্রে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না শিক্ষার্থীদের। এবং দুই বই স্থগিত করলেও আমাদের কারিকুলামের যে লক্ষ্য তা অর্জনে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here