বাঙালির শোকের দিন আজ

0
192

খবর৭১ঃআজ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে ঘাতকদের নির্মম বুলেটে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক ভবনে শহীদ হন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সেই রাতে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের ও কর্নেল জামিল।

ঘাতকদের বুলেটে আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ভাগনে মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শিশু বাবু, আরিফ খান রিন্টুসহ আরও অনেকে। দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা।

বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো বাঙালি তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে না। সে জন্য তিনি গণভবনের পরিবর্তে থাকতেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের নিজ বাসভবনে। এখানে থেকেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে সর্বশক্তি নিয়ে ব্রতী ছিলেন। ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের বুলেটের মুখেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন অকুতোভয়। প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?’

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ সি চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে।

লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্টের সংখ্যায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। পরে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটিকে আইন হিসেবে অনুমোদন দেন।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারবর্গের হত্যাকারী পাঁচ আত্মস্বীকৃত খুনির ফাঁসির দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়।

আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে। তবে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

২০২২ সালের শোক দিবসকে সামনে রেখে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ (১৫ আগস্ট) সরকারি ছুটি। জাতীয় পতাকা থাকবে অর্ধনমিত। সরকারি ও বেসরকারি ভবনে উড়বে কালো পতাকা। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পৃথক পৃথক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ ছাড়া, সারাদেশে দলটির নেতাকর্মীদের উদ্যোগে এতিম ও দুস্থ মানুষদের মাঝে খাদ্য বিতরণ ও গণভোজের আয়োজন করা হয়েছে।

জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদায় এবং ভাবগম্ভীর পরিবেশে স্বাস্থ্য-সুরক্ষা বিধি মেনে পালনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দিবসটিতে দেশের সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here