মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চিঠির ইস্যুতে যা বলছে র‌্যাব

0
140

খবর৭১ঃ র‌্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করেনি, বরং মানবাধিকার রক্ষা করে চলছে বলে দাবি করেছেন বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে তাদের আমরা গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে তুলে দিতে বদ্ধপরিকর। এই পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি ধর্ষকসহ নারী পাচার ও শিশু পাচারকারীকে আটক করে র‌্যাব আইনের হাতে তুলে দিয়েছে। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশে যখন নারী পাচার করা হয়েছিল তখন র‌্যাবই অভিযুক্তদের ধরতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি পাচার হয়ে যাওয়া নারী ও শিশুদের উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে এলিট ফোর্স র‌্যাবের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাদ দিতে ১২টি মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘকে চিঠি দিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ১২টি মানবাধিকার সংস্থা ২০২১ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল জ্যঁ-পিয়েরে ল্যাক্রয়িক্সকে এই চিঠি দেয়। বৃহস্পতিবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে এই চিঠির কথা প্রকাশ করা হয়।

এদিন সন্ধ্যায় মানবাধিকার সংস্থার চিঠির প্রতিক্রিয়া জানান কমান্ডার মঈন।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, সম্প্রতি ঝালকাঠিতে লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে সেখানে গুরুতর দগ্ধদের র‌্যাবের হেলিকপ্টারে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে র‌্যাবের কাছে জঙ্গি ও জলদস্যু মিলিয়ে মোট ৪২১ জন অপরাধী আত্মসমর্পণ করেছেন। তারা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। র‌্যাব নিজস্ব অর্থায়নে তাদের পুনর্বাসন ভূমিকা রেখেছে। র‌্যাবের এই ভূমিকাকে মানবিক বিচারেও এগিয়ে রাখছেন মানবাধিকারের বিষয়ে সচেষ্টরা।

মঈন বলেন, আমরা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চিঠির বিষয়টি অফিসিয়াল পাইনি। তবে গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আপনাদের জানাতে চাই, আমরা সবসময় মানবিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। অপরাধীদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়ে আমরা মানবিকতার নজির স্থাপন করেছি। আমরা বলব, র‌্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করেনি বরং র‌্যাব মানবাধিকার রক্ষা করে চলছে। র‌্যাবের হাতে আত্মসমর্পণকারী দস্যুদের মধ্যে সুন্দরবনে ৩২৮ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৭৭ জলদস্যু এবং ১৬ জঙ্গি রয়েছে।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, আমাদের নয় হাজারের ফোর্স (সদস্য)। এই ফোর্সের মধ্যে লে. কর্নেল আজাদসহ ২৯ জন সদস্য জীবন দিয়েছেন। মানবাধিকার রক্ষায় এবং আইনশৃঙ্খলা সম্মুন্নত রাখতে আমাদের এক হাজারের বেশি সদস্যের অঙ্গহানি হয়েছে। তাছাড়া আমাদের দুই হাজারের বেশি সদস্য আহত হয়েছেন। নয় হাজার সদস্যের বাহিনীর এমন আত্মত্যাগ বিশ্বের কোনো বাহিনীর আছে কি না আমার সন্দেহ রয়েছে।

মঈন বলেন, ২০২০ সালে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমেছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। সেখানে তারা নিজেরাই স্বীকার করেছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে তিনটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি হয়নি। সেখানে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের চিত্র বিশ্লেষণ করা হয়। ওইসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমেছে বলে সেখানে তারা উল্লেখ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ রুখতে স্পষ্টভাবে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ সরকার। বাহিনীর প্রশংসা করে প্রতিবেদনে র‌্যাবের কার্যক্রমসহ সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের পদক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, র‌্যাব বিদেশের সঙ্গে যুক্ত জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের (ফরেন টেরোরিস্ট ফাইটার- এফটিএফ) গ্রেপ্তার বা তাদের বিষয়ে অনুসন্ধনে আমূল সংস্কার ও পুর্নবাসন কর্মসূচির হাতে নিয়েছে।

এদিকে ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থা দাবি করছে, ২০১২ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের যে নীতি নিয়েছিল, তা জাতিসংঘ মিশনে আসা বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে আসা র‌্যাব সদস্যদের বিষয়ে কোনো যাচাই না করেই তাদের শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

চিঠিতে জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আরও বলেছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার আগে একটি যাচাই পদ্ধতি চালু করা উচিত যেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতনের অভিযোগও তদন্ত করে দেখা হবে।

এদিকে র‌্যাব ভালো কাজ করছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমরা তো চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, এমন কোনো দেশ নেই যেখানে অ্যানকাউন্টারের ঘটনা ঘটে না। পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ যদি অস্ত্র তুলে কথা বলে, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তখন নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে না। তখনই এসব ফায়ারিংয়ের ঘটনা ঘটে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সবকিছুই যদি এলিট ফোর্স র‌্যাবের ঘাড়ে দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আমি মনে করি এটা তাদের প্রতি অবিচার হচ্ছে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here