গোয়েন্দা প্রতিবেদনঃ মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে মিয়ানমারের হাত!

0
378

খবর৭১ঃ রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) এ শীর্ষ নেতাকে হত্যার পেছনে খোদ মিয়ানমার সরকার জড়িত। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে যাদের রয়েছে সদূরপ্রসারী চক্রান্তের রোডম্যাপ। এর পেছনে আন্তর্জাতিক কানেকশনে আরও প্রভাবশালী মহলের বিশেষ যোগসূত্রতাও থাকতে পারে।

তবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার পরিবর্তে এদের পুঁজি করে নানা ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পাতা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। জুলুম-নির্যাতন করে বাংলাদেশের মধ্যে ঠেলে দেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে এখন অস্ত্র ও মাদক সরবরাহ করা হচ্ছে। এদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে পরিণত করার অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর এমন সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে সক্রিয় রয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার চৌকস কর্মকর্তারা।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চক্রটি তাদের মিশন সফল করতে ইতোমধ্যে সীমান্তের কাছাকাছি ১২টি মোবাইল টাওয়ার বসিয়েছে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে লক্ষাধিক মিয়ানমারের মোবাইল ফোন সিম এমপিটি সরবরাহ করেছে। এসব সিমে কম পয়সায় কথা বলা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা দিতে নানা রকম অফার ছাড়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ানোসহ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ঘোরবিরোধী গোষ্ঠীর পরিসর বাড়াতে তারা এ ধরনের নানা পরিকল্পনা নিচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম সোমবার বলেন, যদি এভাবে দেশের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের সিম ব্যবহার হয়ে থাকে তাহলে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তিনি মনে করেন, বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। তবে মিয়ানমার সরকার এসব সিম ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠী সৃষ্টি করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের লেলিয়ে দিচ্ছে কিনা সেটি প্রধান বিবেচ্য বিষয়। এমন কিছু হলে অবশ্যই দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানায়, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের এ চক্রান্তের প্রথম অ্যাসাইমেন্ট হিসাবে মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। আর এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে মিয়ানমার সরকারের হয়ে গোপনে সক্রিয় থাকা রোহিঙ্গাদের ভেতরকার কিছু অপশক্তি। যার প্রথম সারিতে রয়েছে স্বদেশে যাওয়ার ঘোর বিরোধী উগ্রবাদী রোহিঙ্গা সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা)। যাতে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের আর ফেরত নিতে না হয় সেজন্য মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের মদদে এ সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া শুধু উগ্রপন্থি আরসাই নয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চরমপন্থি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে মদদ দিতে তৎপরতা চালাচ্ছে আল ইয়াকিন, আরএসও, ইসলামি মাহাত, সিভিল রাইটস ও মানবাধিকার ইস্যুতে আন্দোলন করা কয়েকটি সংগঠনও। আর এসব চরমপন্থি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা করছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার।

এ সংক্রান্ত বিস্তারিত গোয়েন্দা প্রতিবেদন ইতোমধ্যে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি এ অপশক্তির সব চক্রান্ত প্রতিহত করাসহ এ বিষয়ে আরও বিশদ তথ্য বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম এখন সরেজমিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় কাজ করছে। ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি টিম ইতোমধ্যে ক্যাম্প এলাকায় তথ্য সংগ্রহের জন্য ‘আন্ডার কাভার্ড’ কার্যক্রম জোরদার করেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন সোমবার বলেন, ‘রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ প্রত্যাবাসনের পক্ষেই কাজ করছিলেন। এ কারণে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। জড়িতদের কঠোর এবং কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’

রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি এখন দেশের সীমানা ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। পিছিয়ে নেই রোহিঙ্গারাও। রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রিত অনলাইন মিড়িয়াগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বলছে, মিয়ানমার সরকারের দালাল আরসার হাতেই মুহিবুল্লাহ খুন হয়েছেন। রোহিঙ্গাদের একটি সূত্র দাবি করেছে, রোহিঙ্গাদের কাছে আরসা নেতা হিসাবে পরিচিত সমি উদ্দিন ও সোনা মিয়ার নেতৃত্ব মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। মুহিবুল্লাহ হত্যার ঠিক আগ মুহূর্তে সমি উদ্দিন ও সোনা মিয়া ক্যাম্পের ভেতরে ঢুকছে, এমন খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রোহিঙ্গারা। ওই সময় রোহিঙ্গাদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তাদের এ সংক্রান্ত কথোপকথনের একাধিক অডিও হাতে এসেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here