খবর৭১ঃ আফগানিস্তানে সেনা পাঠানোর কথা ভাবছে চীন। মার্কিন ও ইউরোপীয় বাহিনীর ফেলে যাওয়া বাগরাম বিমানঘাঁটির নিরাপত্তায় এসব সেনা মোতায়েন করা হবে। শুধু সেনাই নয়, নতুন করে বিমানঘাঁটির উন্নয়নের লক্ষ্যে দক্ষ জনবল পাঠাবে। এই মুহূর্তে এ সম্পর্কিত একটি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে চীনা কর্মকর্তারা। সব কিছু ঠিক থাকলে শিগগিরই বহুল আলোচিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের জন্য সেনার পাশাপাশি দক্ষ কর্মী পাঠানো হবে। ইউএস নিউজ ও ডেইলি মেইল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে লজ্জায় ফেলতে ও আফগানিস্তানে নিজেদের প্রভাব বাড়াতেই বাগরামের দিকে নজর দিয়েছে বেইজিং। আফগানিস্তানে প্রায় ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো বাহিনীর তালেবানবিরোধী লড়াইয়ের মূল ঘাঁটি ছিল বাগরাম। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী ঘাঁটিটিতে প্রবেশ করে। পরে এটি প্রায় ১০ হাজার সৈন্য রাখতে সক্ষম একটি বিশাল ঘাঁটিতে পরিণত হয়। সম্প্রতি এই ঘাঁটি ছেড়ে চলে যায় পশ্চিমা বাহিনী।
নতুন তালেবান সরকারকে স্বীকৃতির পাশাপাশি গোষ্ঠীটির সঙ্গে ইতোমধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিশ্চিত করেছে চীন। এবার ক্রমেই প্রভাব বাড়ানোর কথা ভাবছে। তারই অংশ হিসাবে দরিদ্রপীড়িত আফগান জনগণের জন্য ইতোমধ্যে ২০ কোটি ইউয়ানের (৩ কোটি ১০ লাখ ডলার) জরুরি সহায়তা ঘোষণা দিয়েছে। বুধবার আফগানিস্তানের প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ পাকিস্তান-ইরান-তাজিকিস্তান-উজবেকিস্তান-তুর্কমেনিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এই ঘোষণা দেন।
তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেই চলতি বছরের জুলাইয়ে গোষ্ঠীটির একটি প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বেইজিং। সেই সময়েই আফগানিস্তানকে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল তারা। সন্ত্রাসীরা যেন আফগানিস্তানকে তাদের নিরাপদ আশ্রয় বানাতে না পারে, তা নিশ্চিত করার ব্যাপারেও বেইজিং তালেবানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে।
এদিকে আফগানিস্তানের পলাতক সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তালেবান সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। বুধবার আলজাজিরাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘যারা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের নানাভাবে সাহায্য করেছে, তালেবান সরকার তাদের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’ তালেবান প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ইতিবাচক ও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়তে চায় তার সরকার। সেই লক্ষ্যে আফগানিস্তানে অবস্থানরত সব বিদেশি কূটনৈতিক, দূতাবাস ও মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত এনজিও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তার সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দোহা চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে তালেবান। গোষ্ঠীটির নেতারা বলেছেন, চুক্তিতে নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানিকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কথা থাকলেও তার নাম এখনো তালিকায় রেখেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা ও নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলাকালে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ রয়েছে। ওয়াশিংটন তার মাথার জন্য ৫০ লাখ ডলারও ঘোষণা করেছিল। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান আখুন্দসহ গোষ্ঠীটির আরও কয়েক সদস্যের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ রয়েছে। তালেবানের দাবি, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় দুপক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে তাদের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কথা ছিল।