শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে একগুচ্ছ সুপারিশ জাতীয় পরামর্শক কমিটির

0
162

খবর৭১ঃ করোনার প্রকোপ কমে আসায় ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোন পদ্ধতিতে পাঠদানসহ শিক্ষা কার্যক্রম চলবে সেটা নিয়ে দিকনির্দেশনা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে কোভিড-১৯–সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি।

সোমবার কমিটির বৈঠক শেষে মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়ে তাদের সুপারিশের কথা জানায় পরামর্শক কমিটি। বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। এসব মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও বৈঠকে যোগ দেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভায় বলা হয়, সব শিক্ষার্থীর শিক্ষা এবং শিক্ষক, কর্মচারী ও সমাজের মঙ্গল এবং স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সবধরনের ঝুঁকি কমাতে যথাযথ ব্যবস্থাপনা দরকার। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং তাদের যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এলাকায় কোভিড-১৯–এর পরবর্তী সংক্রমণ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

সুপারিশে বলা হয়, সব স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে সে ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে এটি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ব্যতীত এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী হতে হবে।

কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত, মানসম্পন্ন ও সঠিক মাপের মাস্কের ব্যবস্থা ও বিতরণ করতে হবে। একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক অন্যান্য পদক্ষেপ, যেমন হাত পরিষ্কার রাখা (হাত ধোয়া বা হাত জীবাণুমুক্তকরণ স্টেশন স্থাপন) ও সাধারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রস্তুত করা দরকার।

কমিটি বলেছে, স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কমপক্ষে ৮০ শতাংশ শিক্ষক–কর্মচারীর কোভিড-১৯–এর টিকা নেওয়া থাকতে হবে। তারা দ্বিতীয় ডোজের ১৪ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে প্রথম ডোজের ১৪ দিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের অনুমতি প্রদান করা যেতে পারে। উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ১৮ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের দ্রুত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

কমিটি আরও বলেছে, শ্রেণিকক্ষে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নির্দিষ্ট ক্লাস কোনটি সপ্তাহের কোন দিন হবে, তা বিভক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। যেমন প্রথম দিকে পরীক্ষার্থীদের ক্লাস প্রতিদিন খোলা রাখা ছাড়া বাকি সব ক্লাস সপ্তাহের এক বা দুই দিন খোলা রাখা যেতে পারে। এতে একটি নির্দিষ্ট দিনে যে ক্লাসটি খোলা থাকবে, তার শিক্ষার্থীরা অন্য খালি শ্রেণিকক্ষগুলো ব্যবহার করে তাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে বসতে পারবে। প্রাতঃসমাবেশ (অ্যাসেম্বলি) বন্ধ রাখতে হবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রস্তুত করা দরকার।

প্রথম দিকে কম সময়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি, যাতে খাবার গ্রহণের জন্য মাস্ক খোলার প্রয়োজন না হয়।

কমিটি আবাসিক সুবিধাসংবলিত স্কুল, মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে আছে সমাবেশ–স্থানগুলো (ক্যাফেটেরিয়া, ডাইনিং, টিভি/স্পোর্টস রুম, ইত্যাদি) বন্ধ রাখা, রান্নাঘর থেকে রুমগুলোয় সরাসরি খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা ও একাধিক শিক্ষার্থী একই বিছানা ব্যবহার না করা। মাদ্রাসায় একসঙ্গে নামাজ, সমাবেশ ইত্যাদির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অন্য কর্মচারীদের মধ্যে সংক্রমণ পর্যবেক্ষণ এবং দৈনিক রিপোর্ট করার ব্যবস্থার পরামর্শ দেয় কমিটি।

যেসব জেলায় সংক্রমণের হার বেশি, যেমন শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি, সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা।

কোভিড-১৯–সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা গতকালের সভায় সভাপতিত্ব করেন।

গত রবিবার শিক্ষামন্ত্রী জানান, চলতি এবং আগামী বছরের এসএসসি, এইচএসসি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর পরীক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here